দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ বাংলায় ভোটের মরসুম শেষ হয়ে ও এখনো শেষ হয় নি, আর ভোট পর্ব আসা মানেই কত প্রতিশ্রুতি, কত কথা দেওয়া, কথা রাখার প্রতিশ্রুতি। ভোট আসলেই কর্ম সংস্থান শিল্প নিয়ে নানা বুলি, কর্ম সংস্থানের স্বপ্নে বিভোর মানুষ ভোট পর্বে নিজেদের যুক্ত ও করেন। কিন্তু ভোট পরবর্তী ঘটনা সবারই কম বেশী জানা।
বাংলায় ভোট এলেই শিল্প নিয়ে নানা কথা হয় সামাজিক, আর্থিক পরিকাঠামো নিয়ে নানা কথা হয় কিন্তু পরিবেশ রক্ষা নিয়ে তেমন একটা বলতে কাউকে শোনা যায় না। ভোট পর্ব আসলে বাংলার ভোটের সংস্কৃতি মেনে বোমা বাজির হদিস পাওয়া, বেআইনি কারখানার সন্ধান পাওয়া এখন তো সাধারন ব্যাপার হয়ে গিয়েছে। ধর্মীয়-সামাজিক উৎসবে শব্দবাজি নিয়ে দু-চার বুলি শোনা গেলেও ভোটের মুখে বোমাবাজি নিয়ে তেমন কেঊ মুখ খোলেন না। উল্লেখ্য, গত কয়েক মাসে রাজ্যে বাজি কারখানায় বিষ্ফোরনের ঘটনা আকছাড় উঠে এসেছে খবরের শিরোনামে। বাজি কারখানার বিস্ফোরণের পরে বিরোধী নেতারা জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (এনআইএ) তদন্ত চেয়ে প্রায়শই গলা ফাটান। শাসক দলের নেতারাও গলা ফাটান, তবে উল্টো সুরে। রাজ্যের বাজি কারখানায় বোমা বাঁধা হয় না, এই তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় তাঁদের খামতি থাকে না। শাসক দলের এক সাংসদ (তিনি একদা ফিজ়িক্সের মাস্টারমশাই ছিলেন) তো অতিরিক্ত গরমের জন্য বারুদ ফেটেছে, এই তত্ত্বও শুনিয়েছেন।
নেতা মশাই-র যুক্তি মেনে নিলেও প্রশ্ন রাজ্যে গ্রামেগঞ্জে এ ভাবে ব্যাঙের ছাতার মতো বাজি কারখানা, তায় আবার অবৈধ বাজি কারখানা গড়ে উঠছে কী ভাবে?কী ভাবে প্রশাসনের নজর এড়িয়ে গড়ে উঠছে এই মৃত্যুপুরী। বাজি মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশই বলছে, একমাত্র ‘সবুজ বাজি’ দেশে উৎপাদন এবং ব্যবহার করা যাবে। বাজি পোড়ালে ধোঁয়া বেরোবেই এবং সেই ধোঁয়া থেকে দূষণ একেবারেই হবে না, এ কথা কেউ বলতে পারে না। তবুও মহামান্য আদালতের নির্দেশ মেনে নিয়ে সবুজ বাজি ব্যবহার করা যেতে পারে। উল্লেখ্য,সেই বাজি তৈরির অনুমতি দিতে পারে জাতীয় পরিবেশ প্রযুক্তি গবেষণা সংস্থা (ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল এঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট বা নিরি)। এ রাজ্যের হাতেগোনা সংস্থা সেখানে অনুমতির জন্য আবেদন করেছে। সেই সংস্থাগুলি বড় মাপের এবং যে-হেতু জাতীয় স্তরে আবেদন করেছে, তাই ধরে নেওয়া যায় তাদের লাইসেন্স, অনুমতি সব কিছুই আছে।
কিন্তু গত কয়েক বছরে রাজ্যে যে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ হয়েছে, সেগুলির একটিরও লাইসেন্স ছিল না। পরিবেশকর্মীরা বার বারই বলেছেন যে, এ রাজ্যের বেআইনি বাজি কারখানাগুলিই মোট উৎপাদনের সিংহভাগ তৈরি করে। কালীপুজো, দীপাবলিতে পথেঘাটে সেই বাজি বিক্রি হয়।কিন্তু প্রসাসনের নজর এড়িয়ে এমন কাজ হচ্ছে কীভাবে?
উল্লেখ্য, গত দু’বছরে যেখানে গ্রামীণ এলাকায় প্রচুর লোক বিস্ফোরণে মারা গিয়েছেন। গত মে মাসেই এগরায় একটি বাজি কারখানায় বিধ্বংসী ঘটনার পর স্থানীয় জনগণের একাংশ প্রতিবাদ করেছিল।আশ্চর্য্যের বিষয় এই শিল্পের সঙ্গে গ্রাম বাংলার প্রচুর মানুষ জড়িত, সেখানে অযথা বিরোধিতা করে ভোট খোয়ানোর ঝুঁকি নিতে চায় না কেঊ-ই।অন্যদিকে নিন্দকেরা বলে যে ওই কারখানার ভিতরে গণতন্ত্রের উৎসবে ফাটানোর জন্য যে বাজি তৈরি হয়, তা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কমবেশি সব দলের কাছেই পৌঁছায়।
বাংলায় বাজিকারখানায় বিস্ফোরণ হলে প্রশাসন, পর্ষদ নড়েচড়ে বসে, খানিক ধমক-ধামক ও চলে পরে আবার সব কিছু আগের মতোই হয়ে ওঠে। এগরার ঘটনার পর অবশ্য সংশ্লিষ্ট থানার আইসিকে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল।কিন্তু বাংলার বাজিকারখানা প্রসঙ্গে রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কিন্তু তেমন কিছুই বলে না, সম্ভবত এর অনুসন্ধানের জন্য প্রাইভেট ইনভেস্টিকেটার দরকার হয়ত! সে আমজনতার বোঝার বিষয় নয়।
বহুবার শাসক বিরোধী উভয় পক্ষ কেঊ-ই বলতে শোনা যায় আচমকা আইনি পথে সব বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধ করে দিলে ওই কারখানাগুলিতে যুক্ত গরিব মানুষের রুটিরুজির কী হবে?এটি সত্যিই একটি বিচার্য্য বিষয়। কিন্তু আপনি বিচার করে বলুন তো একজন অপরাধী যদি কখনো বলে সে অপরাধ না করলে তার সংস্থান হবে না তাকে কী দেশের আইন ছাড় দেবে কী? তাহলে অবৈধ বাজিকারখানা এবং তার কর্মচারীদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে কীসের ভিত্তিতে। এর দ্বারা মানব সম্পদেরই ক্ষতি হচ্ছে ,সেদিক থেকে বিচার করে এই মৃত্যুকারখানার গোঁড়া থেকে নিধন হওয়া উচিত বলে মনে হয়।