
দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: বছর শেষে বাংলায় জাঁকিয়ে বসেছে শীত। হালকা কুয়াশা, ঠান্ডা হাওয়া আর গরম চায়ের কাপে চুমুক—সব মিলিয়ে শীতের আমেজ এখন চূড়ান্ত। আর এই সময়েই যদি আরও একটু শীত উপভোগ করার ইচ্ছে জাগে, তবে নতুন বছরের শুরুতে কাশ্মীর ভ্রমণ হতে পারে আদর্শ পরিকল্পনা। বরফে মোড়া পাহাড়, শান্ত উপত্যকা আর নিস্তব্ধ প্রকৃতি—কাশ্মীর মানেই বহু পর্যটকের কাছে স্বপ্নের গন্তব্য। জঙ্গি আতঙ্ক কাটিয়ে ধীরে ধীরে আবার পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে পহেলগাঁওয়ে। পাশাপাশি চেনা ডাল লেক, গুলমার্গ বা সোনমার্গ ঘোরা তো থাকছেই। তবে ভিড় এড়িয়ে যদি প্রকৃতির কোলে কিছুটা নিরিবিলি সময় কাটাতে চান, তাহলে কাশ্মীরের কয়েকটি অফবিট জায়গা হতে পারে আপনার ভ্রমণ তালিকার নতুন সংযোজন।
∆ লোলাব ভ্যালি: শ্রীনগর থেকে ১১৪ কিলোমিটার দূরে কুপওয়ারার পাহাড়ের কোলে ছবির মতো সাজানো ভ্যালি। আপেলের বাগান থেকে বিস্তীর্ণ ঘন সবুজ পাইন আর দেবদারুর জঙ্গল আপনার মন ভালো করে দেবে। এছাড়াও পাহাড়ের বুক চিড়ে নেমে আসা একাধিক জলপ্রপাত এখানকার বাড়তি পাওনা। দেখে নিতে পারেন অতি প্রাচীন কালারুশ গুহা। নয়নাভিরাম এই উপত্যকা, ভালোবাসার ভ্যালি হিসেবেও পরিচিত। বন্ধুদের সঙ্গে ট্রেকিং কিংবা পিকনিকের জন্যও আদর্শ এই উপত্যকা।
কোথায় থাকবেন: স্থানীয় গ্রামে ছোট কটেজ এবং হোমস্টে পেয়ে যাবেন। সেখানেই চেখে দেখতে পারবেন কাশ্মীরি খাবার-দাবার। ইচ্ছা হলে কুপওয়ারায় বাজেট ফ্রেন্ডলি হোটেলেও থাকতে পারেন।
∆ ইয়ুসমার্গ: চতুর্দিকে পাইনের সারি৷ চোখ গেলেই দেখা যাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে পাহাড়৷ মাঝে মাঝে দেখা যাবে ঘাড় নিচু করে ঘাস খাচ্ছে ঘোড়া। ইট-কাঠ-কংক্রিটের জগৎ থেকে দিনকয়েক অক্সিজেনের খোঁজে পাড়ি জমাতেই পারেন ইয়ুসমার্গে। সবুজের সন্ধানে শ্রীনগর থেকে মাত্র ৪৫ কিলোমিটার এই জায়গাটি আপনাকে শান্তি দেবেই। ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়ে পাইনের জঙ্গলে বেশ কিছুটা সময় কাটাতেই পারেন৷ ক্লান্তি মেটাতে জঙ্গলের শেষে পাহাড়ের কোলে নীলনাগ লেকে সেরে নিতে পারেন স্নান৷
কোথায় থাকবেন: ইয়ুসমার্গে থাকার জন্য সরকারি গেস্টহাউস রয়েছে৷ সেখানেই রয়েছে খাবারের বন্দোবস্তও৷ দু’জনের প্রতি রাতে থাকার জন্য খরচ পড়বে মাত্র ৭৫০টাকা৷ খাওয়া খরচ যদিও আলাদা৷
∆ ব্রেং: গাছ, পাহাড় এবং নদীর মাঝেই না হয় কাটুক আপনার ছুটির দিনগুলি৷ তাই এবার আপনার গন্তব্য হোক দক্ষিণ পূর্ব শ্রীনগর থেকে ৮৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ব্রেং৷ নীল আকাশের মাঝে ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা মেঘ, পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে নদী৷ সব মিলিয়ে এই জায়গার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই৷ ব্রেং থেকে ঠিক আধঘণ্টা গেলেই পৌঁছে যাবেন ডাকসুমে৷ সেখানে দেখা মিলবে জলপ্রপাত এবং পাইনের সারি৷ নদীর কুলকুল শব্দ এবং পাখির কলকাকলি আপনার প্রাত্যহিক ক্লান্তি দূর করবেই৷
কোথায় থাকবেন: প্রতিদিন থাকার জন্য মাত্র ২০০০টাকা খরচেই এখানে মিলতে পারে সরকারি গেস্ট হাউস।
∆ আলপাথের জলপ্রপাত: আপনি কি অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন? তবে এই ছুটিতে আপনাকে আলপাথের জলপ্রপাতে যেতেই হবে৷ ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৭ হাজার ৫০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত আলপাথের জলপ্রপাত৷ বছরে প্রায় ন’মাসই এখানের তাপমাত্রা থাকে হিমাঙ্কের নিচে। পাহাড়ে চড়ার ইচ্ছা থাকলে ট্রেকও করতে পারেন আপনি।
কোথায় থাকবেন: এখানে থাকা-খাওয়ার খরচ তুলনামূলক একটু বেশি৷ প্রতি দিন থাকা এবং খাওয়ার জন্য মাথাপিছু খরচ পড়বে প্রায় ৬০০০টাকা।
∆ গুরেজ: ভাবুন তো গোটা রাস্তা সাদা বরফে ঢাকা আর চতুর্দিকে পাহাড়ের কোল ঘেঁষা পাইন গাছ৷ তার মাঝখান দিয়ে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলেছে গাড়ি৷ এমন দৃশ্য চাক্ষুষ করতে চাইলে ভিড় জমান গুরেজে৷ শ্রীনগর থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরের এই জায়গায় দূষণের বালাই নেই। পরিবর্তে বিশুদ্ধ অক্সিজেনই উপহার হিসাবে মিলবে৷ নদী-পাহাড়ে ঘেরা এই জায়গায় পর্যটকেরা সাধারণত কমই ভিড় জমান৷ তাই এক্কেবারে নিরিবিলিতে আপনার ছুটির দিনগুলি কাটানোর জন্য গুরেজের কোনও বিকল্প হয় না।
কোথায় থাকবেন: গুরেজে থাকার জন্য নানা খরচে সরকারি এবং বেসরকারি গেস্ট হাউস রয়েছে৷ আপনার বাজেট অনুযায়ী যেকোনও ঘরে থাকতেই পারেন৷
নতুন বছরের শুরুতে যদি ভ্রমণ মানেই হয় একটু শান্তি, একটু প্রকৃতি আর ভিন্ন অভিজ্ঞতা, তাহলে কাশ্মীরের এই অফবিট ঠিকানাগুলি নিঃসন্দেহে আপনার তালিকায় রাখতেই পারেন। শীতের শেষে, স্মৃতির ঝুলিতে জমে থাকবে ভূস্বর্গের অনন্য কিছু মুহূর্ত।
