আগরতলা, ২ সেপ্টেম্বর : ধনপুর এবং বক্সনগর, দুটি কেন্দ্রে উপনির্বাচন ঘোষণার পর বিভিন্ন বিরোধী দল জোটবদ্ধ হয়েছে বলে প্রচার ও প্রসার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। মানুষ সেটা ভালো চোখে দেখছে না, দাবি করেছেন বিজেপির ত্রিপুরা প্রদেশ সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য।
শনিবার দলের প্রদেশ দফতরে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাজীব ভট্টাচার্য জানান, দীর্ঘ ২৫ বছর এবং তার আগ ১০ বছর কমিউনিস্টরা ত্রিপুরায় শাসন করেছে। তার পর এখনও নির্বাচনে কমিউনিস্টদের লড়াই করতে হলে বৈশাখীর প্রয়োজন হয়। ভারতীয় জনতা পার্টির কোনও বৈশাখীর প্রয়োজন হয় না। কংগ্রেসকে নিয়ে বৈঠক করেছে সিপিএম কয়েক দফায়। আসন্ন উপনির্বাচনে কংগ্রেসের কোনও নেতাকে ধনপুর এবং বক্সনগরে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সোনামুড়া মহকুমায় কংগ্রেসের কোনও অস্তিত্বই নেই। যা-ও কিছু ছিল, কিছুদিন আগে কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী বিল্লাল মিয়াঁ বিজেপিতে যোগ দিয়ে কংগ্রেসের সর্বশেষ পেরেক পুঁতে দিয়েছেন। বিল্লাল মিয়াঁর সাথে প্রচুর কংগ্রেস কর্মী ও সমর্থক বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।
রাজীব ভট্টাচার্য আরও জানান, সিপিএমের সাথে আঁতাত কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা মেনে নিতে পারেননি। ৩৫ বছরের কমিউনিস্ট শাসনে বহু কংগ্রেস কর্মী ও নেতা প্রাণ হারিয়েছেন। সেটা বক্সনগর ও ধনপুরের মানুষ ভুলে যাননি। তাই গোটা সোনামুড়া মহকুমায় কংগ্রেস অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। ত্রিপুরায় একমাত্র বিকল্প হচ্ছে বিজেপি। তাই দিকে দিকে ভোটাররা ভারতীয় জনতা পার্টিতে শামিল হচ্ছেন।
রাজীববাবু আরও বলেন, মহারাজ প্রদ্যোৎ কিশোরের যে দল তিপ্রা মথা, তাঁরাও বলেছেন, তাঁদের দল কোনও জোটে নেই। বক্সনগর ও ধনপুরে দলীয় কর্মী-সমর্থকরা তাঁদের পছন্দের প্রার্থীকেই ভোট দিতে পারেন। তাতে দলের কোনও নির্দেশ নেই যে কোনও একটি নির্দিষ্ট দলের প্রার্থীকেই ভোট দিতে হবে। তিপ্রা মথা দলও জানে, ত্রিপুরায় বিজেপি সরকারই জনজাতিভুক্ত মানুষের প্রকৃত উন্নয়ন করতে পারে। ভারতীয় জনতা পার্টিই একমাত্র পারে ত্রিপুরার উন্নয়ন করতে।
বিজেপির প্রদেশ সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য এদিন রাজ্যে বাস্তিবায়িত হচ্ছে এমন প্রকল্পগুলির উল্লেখ করে বলেন, জন আরোগ্য যোজনায় ৫৯ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে এবারের বাজেটে। তাছাড়া, মুসলিম যুবক-যুবতীদের চাকরির ক্ষেত্রে সুযোগ সম্প্রসারণ, ওয়াকফ সম্পত্তি দখলমুক্ত সহ সংখ্যালঘু অংশের জনগণের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। শুধু সংখ্যালঘুই নয়, জনজাতি, তফশিলি জাতি, সকল অংশের মানুষের জন্যই বর্তমান রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার কাজ করে চলেছে। রাজ্যে সাড়ে তিন লক্ষ পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছয়টি জাতীয় সড়কের কাজ চলছে। ১০টি নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী গণবণ্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে ভরতুকি মূল্যে জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যের জনগণের সার্বিক উন্নয়নে বিজেপি সরকার এবারে ২৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তুত করেছে।এ সমস্ত বিষয়কে সামনে রেখে বিজেপি প্রার্থীদের ওই দুই কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন বিজেপি প্রদেশ সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য।
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপির প্রদেশ সভাপতির সাথে উপস্থিত ছিলেন দলের মুখপাত্র নবেন্দু ভাটাচার্য।উল্লেখ্য, ২০ নম্বর বক্সনগর কেন্দ্রে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন সিপাহিজলা জেলার সিনিয়র ডেপুটি কালেক্টর। এছাড়া বিডিও বক্সনগর, সোনামুড়া মহকুমার ডেপুটি কালেক্টর এবং সোনামুড়া রেভিনিউ সার্কলের ডেপুটি কালেক্টর ও ম্যাজিস্ট্রেট অ্যাসিস্টেন্ট রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে থাকবেন। ২০-বক্সনগর কেন্দ্রে মোট ভোটার রয়েছেন ৪৩ হাজার ৮৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২২ হাজার ১৬৬ জন এবং মহিলা ভোটার ২০ হাজার ৯২১ জন রয়েছেন। এছাড়া সার্ভিস ভোটার ৭৫ জন, ৮০-উর্ধ্ব ভোটার ৫১০ জন এবং দিব্যাঙ্গ ভোটার রয়েছেন ১৯৮ জন।
২৩ নম্বর ধনপুর বিধানসভা কেন্দ্রে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে থাকবেন সিপাহিজলা জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক ও সমাহর্তা। এছাড়া ওই কেন্দ্রে কাঁঠালিয়া ব্লকের বিডিও, সোনামুড়া মহকুমার ডেপুটি কালেক্টর নম্বর ৩ এবং কাঁঠালিয়া ব্লকের অতিরিক্ত বিডিও অ্যাসিস্টেন্ট রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন। ২৩-ধনপুর বিধানসভা কেন্দ্রে মোট ভোটার ৫০ হাজার ১৪৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন ২৫ হাজার ৯৪৪ জন এবং মহিলা ভোটার ২৪ হাজার ২০৩ জন রয়েছেন। তাছাড়া ওই কেন্দ্রে সার্ভিস ভোটার রয়েছেন ৮৫ জন, ৮০-উর্ধ্ব ভোটার রয়েছেন ৭০৭ জন এবং দিব্যাঙ্গ ভোটার ২৬৫ জন রয়েছেন।
এদিকে, ২০-বক্সনগর বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র রয়েছে ৫১টি এবং ২৩-ধনপুর বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র রয়েছে ৫৯টি।