দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক : ‘সিস্ট’ শব্দটা শুনলেই অনেকের মনে আতঙ্ক তৈরি হয়। বিশেষ করে মহিলারা ভাবেন, ডিম্বাশয়ে সিস্ট মানেই বুঝি ক্যানসারের পূর্বাভাস! আবার অনেকেই আশঙ্কা করেন, এতে সন্তান ধারণের সমস্যাও হতে পারে। তবে মনে রাখা জরুরি, ৯০ শতাংশ ওভারি সিস্টই বিনাইন, অর্থাৎ ক্যানসারবিহীন ও ক্ষতিকর নয়।
হ্যাঁ, কখনও কখনও সিস্টের কারণে পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে, কিছু লক্ষণও দেখা দিতে পারে, যা বিভ্রান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু অযথা আতঙ্ক না ছড়িয়ে বরং জানা উচিত, সিস্ট আসলে কী, কাদের হওয়ার সম্ভাবনা বেশি এবং কীভাবে তা নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিকার করা সম্ভব।
কেন হয় সিস্ট?
সিস্ট হল জলভরা থলি। ‘ওভারিয়ান সিস্ট’ ডিম্বাশয়ের ভিতরে হয়। থলির মতো গ্রোথ যার মধ্যে ঘোলা জল, নোংরা বা সংক্রমিত জল, রক্ত বা যে কোনও ধরনের ফ্লুইড থাকতে পারে| সাধারণ জল থাকলে সেগুলিকে ‘সিম্পল সিস্ট’ বলা হয়, আর রক্ত ভরা থাকলে সেগুলিই হয়ে ওঠে ‘হেমারেজিক সিস্ট’। চিকিৎসকের মতে, সিস্ট মানে টিউমারের মতো গ্রোথ, তবে তা ক্যানসারে বদলে যাবে, এমন নয়। টিউমার ম্যালিগন্যান্ট (ক্যানসার) ও বিনাইন (ক্যানসারহীন) দু’রকমেরই হয়। সিস্টের দেওয়াল মোটা হলে, তার মধ্যে কোষের অনিয়মিত বিভাজন হতে হতে তা পুরু হয়ে গেলে এবং ভিতরে রক্ত বা পুঁজ জমা হতে থাকলে, তখন তা ক্যানসারের চেহারা নিতে পারে। না হলে, তেমন ভয়ের কারণ নেই। আলট্রাসোনোগ্রাফি, এমআরআই বা সিটি স্ক্যান করলেই সিস্ট ধরা পড়বে।
কাদের হতে পারে?
মহিলাদের বিভিন্ন বয়সে সিস্ট হতে পারে। স্ত্রীরোগ চিকিৎসকদের মতে, ঋতুস্রাব চলাকালীন হরমোনের ওঠানামার কারণে সিস্ট হতে পারে। আবার রজোনিবৃত্তি পর্ব এসে গেলে তখন হরমোনের ওঠানামা বৃদ্ধি পায়। আসলে ইস্ট্রোজেন হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে গেলেই সিস্ট হয়। আবার ওজন অতিরিক্ত হলেও সিস্ট হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
এন্ডোমেট্রিয়োসিসের কারণে সিস্ট হয় অনেকের। জরায়ুর ভিতরের একটি স্তর হল এন্ডোমেট্রিয়াম। প্রতি মাসে জরায়ুর এই এন্ডোমেট্রিয়াম অংশের স্তর খসেই ঋতুস্রাব হয়। সেই রক্ত জরায়ু থেকে বেরিয়ে শরীরের বাইরে চলে আসে। কিন্তু এন্ডোমেট্রিয়াম জরায়ুর বাইরে, তলপেটের যে কোনও জায়গায় বা শরীরের অন্য কোথাও চলে এলে, তাকে বলে এন্ডোমেট্রিয়োসিস। তখন জরায়ুর ভিতরের স্তরের বৃদ্ধি বাইরে হতে থাকে। ওই স্তর খসে যে রক্তপাত হয়, তা বেরোতে না পেরে সেই স্থানেই জমাট বাঁধতে শুরু করে। আশপাশের কোষগুলিতে চাপ তৈরি হয়। এর থেকে সিস্ট হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। ডিম্বাশয়, তলপেটের পিছনে, মূত্রথলি, বর্জ্য নির্গমনের পথে সিস্ট হতে পারে।
প্রতিকারের উপায় কী?
সিস্ট ভয়ের কি না তা জানতে কিছু টিউমার মার্কার টেস্ট করা হয়। ডিম্বাশয়ের সিস্ট বিনাইন না ম্যালিগন্যান্ট জানতে সিএ১২৫ রক্ত পরীক্ষা করা হয়। আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে সিস্টের জল বার করে নেওয়া হয়। ক্যানসার হলে সার্জারি করে সিস্ট বাদ দিতে হয়। বড় সিস্ট অস্ত্রোপচারে বাদ না দিলে অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে। সাধারণ সিস্টের মধ্যে রক্ত চলাচলের শিরা ছিঁড়ে রক্ত জমলে হেমারেজিক সিস্ট হতে পারে। পাঁচ সেন্টিমিটারের কম সিস্টের জন্য কিছু করতে হয় না। তার চেয়ে বড় সিস্ট যন্ত্রের সাহায্যে বাদ দেওয়া হয়। শুধু তরল বার করে নিলে কিন্তু সেই সিস্ট আবার তরলে ভরে উঠতে পারে।