দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: সময় নিজের নিয়মে এগিয়ে চলে, শরীরেও পড়ে তার ছাপ—এটাই স্বাভাবিক বার্ধক্য। কিন্তু সেই প্রক্রিয়াকে কি একেবারে থামানো সম্ভব? শিল্পা শেট্টি, সোহা আলি খান কিংবা মাধুরী দীক্ষিতের দিকে তাকালে প্রশ্নটা ওঠেই। বয়স তাঁদের অনেক আগেই ৪০ পেরিয়েছে, মাধুরী তো পৌঁছে গিয়েছেন ৫০-এর ঘরে। তবু তাঁদের ত্বকের ঔজ্জ্বল্য, তারুণ্য, সৌন্দর্য এখনও নজরকাড়া। অনেকেই বলবেন—‘তাঁরা তো সেলিব্রিটি!’
তবে অভিনেত্রী থেকে রূপচর্চা শিল্পী, ত্বকের চিকিৎসকেরা বলছেন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চা এবং ত্বকের যত্ন করলে বাড়তি কয়েকদিন তারুণ্য ধরে রাখা যায় । ত্বকের যত্ন নেওয়ার সঠিক কৌশল জানলে এবং উপযুক্ত সামগ্রী ব্যবহার করতে পারলে, বার্ধক্যের ছাপ এড়ানো যেতে পারে।
ত্বকের উপর বয়সের প্রভাব
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের অন্যতম উপাদান কোলাজেন নামক প্রোটিনের মাত্রা কমতে থাকে। শরীরে হরমোনের তারতম্যও ঘটে। তারই প্রভাব পড়ে ত্বকে। সাধারণত ৩০ পেরোনোর পর থেকেই ত্বক রুক্ষ হতে শুরু করে। ৪০-এর পর থেকে হরমোনের ওঠাপড়া শুরু হয়। ৫০-এর পর থেকে ত্বক শিথিল হয়ে পড়ে। কুঁচকে যেতে থাকে চামড়া। ‘ন্যাশানাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন’-এ প্রকাশিত ‘স্ট্যাটপার্ল’-এর ময়েশ্চারাইজ়ার সংক্রান্ত গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ত্বকে সঠিক আর্দ্রতা বা হাইড্রেশন জরুরি হয়ে ওঠে। ময়েশ্চারাইজ়ার ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে বর্মের কাজ করে।
বয়স অনুযায়ী কী ভাবে রূপচর্চা করা দরকার?
৩০ পার হলে
বয়স ৩০ পার হলেও ক্রমশ রুক্ষ হতে থাকে ত্বক। বিশেষত সঠিক যত্নের অভাব হলে এই সমস্যা আরও বাড়ে। মেঙ্গালুরুর ত্বকের চিকিৎসক মঞ্জুনাথ সেওনি এমের পরামর্শ, হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, গ্লিসারিন সমৃদ্ধ প্রসাধনী ব্যবহারের। এই উপাদানগুলি ত্বকে আর্দ্রতা জোগাতে এবং তা ধরে রাখতে সাহায্য করে। ময়েশ্চারাইজ়ারের পাশাপাশি সানস্ক্রিনের ব্যবহারও গুরুত্বপূর্ণ। ওষুধের দোকানে যে সানস্ক্রিন মেলে, সেটাই ব্যবহারের পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। তারই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ রাতে ত্বকের পরিচর্যা। নাইট ক্রিম এবং তেলের ব্যবহার ত্বকের রুক্ষ ভাব দূর করার জন্য জরুরি।
৪০ পার হলে
৪০ এর দোরগোড়ার পৌঁছে ত্বকে বলিরেখা উঁকি দেয়। ত্বকও শিথিল হতে শুর করে। ত্বকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কোলাজেন মাত্রাও কমতে থাকে। রজোনিবৃত্তির পূর্বের এই সময়ে হরমোনের মাত্রার হেরফেরও খুব স্বাভাবিক বিষয়। ফলে এই সময় দরকার হয় বাড়তি যত্নের। সেরামাইড্স, পেপটাইডস যুক্ত প্রসাধনী এই সময় ত্বকের পক্ষে খুব ভাল। এতে ত্বক আর্দ্র এবং টানটান হয়। তবে এই বয়সে ত্বকের পরিচর্যায় আরও একটি উপাদান বিশেষ কার্যকর হতে পারে। সেটি হল রেটিনল। ভিটামিন এ থেকে প্রাপ্ত উপাদানটি বলিরেখা দূর করে ত্বককে টানটান রাখতে অত্যন্ত কার্যকর। এই বয়সে যেহেতু ত্বকের ঔজ্জ্বল্য, আর্দ্রতা —দুইই কমতে থাকে, সে কারণে ভিটামিন সি যুক্ত সিরাম বা ময়েশ্চারাইজ়ারের ব্যবহার জরুরি। তবে খেয়াল রাখা দরকার, ভিটামিন সি রয়েছে এমন প্রসাধনী মাখার পর রোদে বেরানো ঠিক নয়। এই উপাদানটি রাতের রূপচর্চার জন্যই ভাল।
৫০ পার হলে
৫০ পার হলে বলিরেখার পাশাপাশি ত্বক কুঁচকেও যায়। হারিয়ে যায় ত্বকের দীপ্তি। ত্বকের চিকিৎসকেরা বলছেন, ঠিক সেই কারণে এই বয়সে এসে ত্বকের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। ত্বকের জন্য প্রয়োজন হয় আর্দ্রতার। সেরামাইড্স, গ্লিসারিন, হায়ালুরোনিক অ্যাসিড—এই সমস্ত উপাদানই ত্বককে বিশেষ ভাবে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে। ‘নাইট ক্রিম’-এ থাকা দরকার ভিটামিন সি, রেটিলের মতো উপাদান। বলিরেখা কমিয়ে ত্বক টানটান রাখতে এই উপাদানগুলি অত্যন্ত কার্যকর। ত্বকের কালচে ভাব দূর করতে পারে ভিটামিন সি। ত্বকের পরিচর্যায় হোহোবা অয়েল রোজ়হিপ অয়েল, আমন্ড অয়েল ভীষণ কার্যকর হতে পারে। তেল মাসাজ করলে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি পাবে। একইসঙ্গে ভিটামিন ই, সি এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ প্রসাধনীর ব্যবহারও জরুরি। ধুলো, দূষণের হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করবে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট।