ঢাকা, ১২ আগস্ট : বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস তাঁর অধীনস্থ ২৫টি মন্ত্রালয়ের জ্যেষ্ঠ সহ বিভিন্ন স্তরের সচিবদের সঙ্গে আজ সোমবার বৈঠকে বসেছেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় তথা বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আজ সকাল ১১টা থেকে বৈঠক শুরু হয়েছে।
গতকাল রবিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি ২৫টি মন্ত্রালয় এবং সচিবালয়ে পাঠিয় বলা হয়েছে, বৈঠকে শুধু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রালয় ও বিভাগের সচিব ও জ্যেষ্ঠ সচিবরা উপস্থিত থাকবেন। মন্ত্রালয়ের অধীন দফতর / সংস্থার সচিবদের সভায় যোগ দিতে হবে না। কারণ জনপ্রশাসন, ভূমি সহ কয়েকটি মন্ত্রালয়ে চার-পাঁচজন করে সচিব কাজ করছেন। তাই যে সকল সচিব বিভিন্ন দফতর / সংস্থায় আছেন, তাঁদের এই বৈঠকে যোগদান করতে হতে হবে না।
সূত্রের খবর, বৈঠকে ২৫টি মন্ত্রালয় ও বিভাগের কর্মপরিধি এবং ভিশন ও মিশন উপস্থাপন করা হবে। সচিবরা নিজ নিজ মন্ত্রালয়ের চলমান কর্মকাণ্ড সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করবেন। এর পর প্রতিটি মন্ত্রালয় ও বিভাগের বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হতে পারে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কম সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রের কিছু সংস্কার করতে চায়। এ জন্য প্রতিটি মন্ত্রালয়ের অনিয়ম, দুর্নীতি বিষয়েও আলোচনা হতে পারে বৈঠকে।সভায় প্রতিটি মন্ত্রালয় সম্পর্কে একটি সুনিদিষ্ট কর্মপরিকল্পনা আসতে পারে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আধিকরিকরা কীভাবে কাজ করবেন, বোঝা যাবে সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের পর।
নিজ নিজ মন্ত্রালয়ের কার্যক্রম সম্পর্কে তাঁরা প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন। সদ্যক্ষমতাচ্যুত আওয়ামি লিগ সরকারের আমলে যে সব কাজ ‘বিশেষ অগ্রাধিকার বা দলীয় বিবেচনায়’ করা হয়েছে, সেগুলোও প্রধান উপদেষ্টাকে জানানো হবে বৈঠকে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রালয়ের কর্মকর্তারা গত ১৫ বছরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়নের সার্বিক চিত্রের প্রতিবেদন নিয়ে কাজ করছেন। শিক্ষা মন্ত্রালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করছে। এ জন্য দিনব্যাপী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে সার্বিক খোঁজখবর নিয়েছে।এ বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার, জেলাশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) কাছ থেকে সার্বিক পরিস্থিতির প্রতিবেদন সংগ্রহ করা হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ও সংহতি জানানো জনতার যৌথ আন্দোলনের মুখে আওয়ামি লিগ সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়। এর পর তিন দিন দেশে সরকার ছিল না। গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। পরের দিন এই সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে দফতর বণ্টন করা হয়। গতকাল ছিল সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস। এর মধ্যে অনেক উপদেষ্টা তাঁদের অধীন মন্ত্রালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেছেন নিজ মন্ত্রালয়ে।
অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের অধীন ২৫টি মন্ত্রালয় ও বিভাগ যথাক্রমে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রালয়, সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রালয়, খাদ্য মন্ত্রালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রালয়, ভূমি মন্ত্রালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রালয়, কৃষি মন্ত্রালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রালয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রালয়, নৌপরিবহণ মন্ত্রালয়, জলসম্পদ মন্ত্রালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রালয়, বাণিজ্য মন্ত্রালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রালয়, অসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রালয় এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রালয়।
অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের হাতে প্রথমে রাখা হয়েছিল ২৭টি মন্ত্রালয় ও বিভাগের দায়িত্ব। গতকাল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রালয় দুই উপদেষ্টার হাতে ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। কারণ সরকারের আরও দুই উপদেষ্টা গতকাল শপথ নিয়েছেন। শপথের পর তাঁদের দফতর বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে।দুই উপদেষ্টার মধ্যে বিধানরঞ্জন রায় পেয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রক, আর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রকের দায়িত্ব পেয়েছেন সুপ্রদীপ চাকমা। প্রধান উপদেষ্টা সহ এই সরকারের সদস্যসংখ্যা ১৭। এর মধ্যে তিনজন ঢাকার বাইরে থাকায় বৃহস্পতিবার তাঁরা শপথ নিতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে বিধানরঞ্জন রায় ও সুপ্রদীপ চাকমা গতকাল বঙ্গভবনে শপথ নিয়েছেন। অন্য এক উপদেষ্টার মধ্যে ফারুক-ই-আজম এখনও শপথ গ্রহণ করেননি।