বোলপুর : নববর্ষের উপহার নিয়ে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাবে দিদির দূতরা। 'লক্ষীর ভান্ডার' রাখার ব্যাগ নিয়ে নিবিড় জন সম্পর্কে নামছে বীরভূম জেলা তৃণমূল।সঙ্গে থাকছে প্রশ্ন পত্র ও পোস্টার। ভোটার দের মন বুঝতে মিশড কল দেওয়াতে চায় শাসক দল।লক্ষীর ভান্ডার তুরূপের তাস হতে চলেছে! অনুব্রতহীন বীরভূমে লোকসভার বৈতরণি পার হতে মরিয়া তৃণমূল। সাংগঠনিক নীতি নির্ধারণের জন্য বর্ধিত সভা করে নেতাদের জনসংযোগ বার্তা কোর কমিটির। কারন অনুব্রতর গড়ে বোলপুর ও বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে নজর রয়েছে বিজেপিরও৷ তাই ইতিমধ্যেই বিজেপি ও পাল্টা বাড়ি জন সংযোগে নেমেছে।
বোলপুর গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে উপস্থিত ছিল জেলার কোর কমিটির পাঁচ সদস্য রাজ্যের ক্ষুদ্র-মাঝারি ও কুটির শিল্পমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, বিধানসভার উপাধ্যক্ষ আশিষ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী, অভিজিৎ সিংহ ও সুদীপ্ত ঘোষ। এছাড়াও ছিলেন, বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ, কেতুগ্রামে বিধায়ক শাহনাওয়াজ হোসেন, আউসগ্রামের বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দার, বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী অসিত মাল প্রমুখ৷ জানা গিয়েছে, দীর্ঘ সভায় কার্যত নির্বাচনী বৈতরণি পার হতে রণনীতি তৈরি হয়। বিজেপিকে ঠেকাতে পাড়ায় পাড়ায় ছোট ছোট সভা করে জনসংযোগ ও সংগঠন বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা মত নববর্ষের সকাল থেকেই ৫-১০ জনের টিম করে প্রতি বুথে বাড়ি বাড়ি জন সম্পর্ক শুরু করেছে শাসক দল। বাংলার জন্য ৮ টি প্রশ্ন উত্থাপন করে লিফলেট তৈরি করা হয়েছে। তাতে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা থেকে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার কথা পয়েন্ট করে করে লেখা হয়েছে। ছোট টিমে দলের বুথ সভাপতি, পঞ্চায়েত সদস্য, দলীয় মহিলা নেত্রী, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য মত মানুষ নিয়ে টিম হবে
প্রতিদিন নুন্যতম ১০ টি করে বাড়িতে যাবে টিম। বাড়ি গিয়ে প্রশ্ন পত্র নিয়ে যেমন বোঝানো হবে। তেমনই দেওয়া হবে দিদির পাঠানো "উপহার"। একটি করে টাকা রাখার ব্যাগ। যে ব্যাগে লক্ষীর ভান্ডারের টাকা রাখবেন বাড়ির মহিলা। ব্যাগের গায়ে থাকছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছবি। লেখা থাকছে - "আপনার জন্য নববর্ষের উপহার। দিদি বাড়ালো লক্ষীর ভান্ডার।" এই ভাবে ভোটারের হাতে দিয়ে একটি আবেদন জানাবে তৃণমূলের টিম। তারা ভোটারের ফোন থেকে একটি নির্দিষ্ট নাম্বারে মিশড কল দেবেন। এতে যেমন উপভোকতার নাম রেজিস্ট্রার হবে পাশাপাশি কত বাড়িতে তৃণমূলের নেতা কর্মীরা গেল তার তথ্যও পেয়ে যাবে দল।
গোরু পাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় তিহারে বন্দি অনুব্রত মণ্ডল। তাঁকে ছাড়াই এই প্রথম বোলপুর ও বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে লড়াই করবে তৃণমূল-কংগ্রেস৷ তাই স্বাভাবিকভাবেই গর ধরে রাখতে মরিয়া রাজ্যের শাসক দল৷ যদিও, অনুব্রতহীন বীরভূমে বেশ কিছুটা মাথাচারা দিয়ে উঠেছে বিজেপি। যা পঞ্চায়েত নির্বাচনে দেখা গিয়েছিল৷ তাই দুটি লোকসভা আসন ধরে রাখতে নেতাদের বিশেষ রণকৌশল তৈরি করতে নির্বাচনী বর্ধিত সভার আয়োজন করে তৃণমূল। সভা থেকে লক্ষীর ভান্ডার রাখার ব্যাগ উপহার দেওয়ার পাশাপাশি ভোটার দের "মন" বুঝতে চাইছে তৃণমূল। তাই একটি পোস্টার তৈরী করেছে শাসক দল। যেখানে সংশ্লিষ্ট ভোটের নাম লিখে ওই ভোটারের দরজার বাইরে লাগিয়ে দেবে তৃণমূল কর্মীরা। তবে গৃহ কর্তা যদি সন্মতি জানায় তবেই তা লাগাতে বলা হয়েছে। যে পোস্টারে লেখা - "বাংলার লড়াই এ আমি........ বাংলার সাথে।" এই পোস্টারে ভোটারের নাম লিখে তার বাড়ির দরজায় লাগানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই নিয়ে বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ বলেন, "দল যেমন নির্দেশ দিয়েছে তেমন নববর্ষের দিন থেকেই লক্ষীর ভান্ডার রাখার ব্যাগ উপহার হিসেবে নিয়ে বাড়ি বাড়ি প্রচারে যাব। " যদিও, বীরভূমের দুটি লোকসভা আসনেই পালটা জোর প্রচার শুরু করেছে বিজেপি৷ কখনও বাড়ি বাড়ি, কখনও রোড শো, পথসভা করে প্রচার করছে তারা৷ দলের জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন," কোন উপহার দিয়ে পোস্টাল লাগিয়ে কোন কাজ হবে না। মানুষ ঠিক করে নিয়েছে বিজেপি পাশে থাকার। সময়েই এর উপর পাবেন।"
তবে এদিনের দীর্ঘ রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে বিধানসভার উপাধ্যক্ষ আশিষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "এটা নির্বাচন কমিটির বর্ধিত সভা৷ এখানে প্রধান, শাখা কমিটি, ব্লক কমিটি সহ বিভিন্ন সংগঠনের দায়িত্বে থাকা নেতাদের ডাকা হয়েছিল৷ উদ্দেশ্য কিভাবে ভোট হবে তা তাদের বলা৷ এটা আমরা করেই থাকি। এখানে বিজেপি কোন ফ্যাক্টর নয়।"