যেকোনও কারণেই হার্টের রোগ
দেখা দিলে নতুন করে হার্টকে তার নিজস্ব স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনতে পেসমেকারের ব্যবহার
হয়। আই সি ডি ডিভাইসও একই কারণে ব্যবহৃত করা হয়। এই দুই প্রাণদায়ী যন্ত্রের প্রয়োজনের
যথার্থতা নিয়ে আলোচনায় বিশিষ্ট কনসালটেন্ট কার্ডিওলজিস্ট ডাঃ সঞ্জীব পাত্র।
পেসমেকার যন্ত্রটি কি?
পেসমেকার বা ডিভাইস একটি ছোট
যন্ত্র যা মানবদেহের কলারবোনের নিচে প্রতিস্থাপন করা হয়। স্বাভাবিকের তুলনায় হার্টবিট
কমে গেলে এই যন্ত্রটির প্রয়োজন পড়ে। এই ডিভাইসটিতে ইলেকট্রিকাল পালস ব্যবহৃত হয় যেটা
হার্টবিটকে পুনরায় স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
এই যন্ত্রটির কখন প্রয়োজন পড়ে?
মানুষের শরীরের স্বাভাবিক
হার্টবিট মিনিটে ৬০-১০০ বার। কিন্তু কোনও কারণে যদি এই হার্টবিট অনেকটাই নেমে যায় যেমন
২৫-৪০ বার হলে তাহলে পেসমেকারের প্রয়োজন হয়।
কি কারণে হার্টবিট কমে যায়?
কারণগুলো যেমন : বার্ধক্যজনিত।
হার্ট অ্যাটাক। হাই ব্লাডপ্রেসার। ব্রেন স্ট্রোক। হার্টের ইলেকট্রিকাল সমস্যা। করোনারি
আর্টারি ডিজিজ। কিডনির সমস্যা। পটাশিয়াম বেড়ে যাওয়া। দীর্ঘদিন ধরে যদি বিশেষ ধরণের
ওষুধ খাওয়া হয়। অনেক সময়ে কোন অজানা কারণেও হার্টবিট কমে যেতে পারে।
এর উপসর্গ কী?
এই রোগের উপসর্গ হল---
- হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
- ব্ল্যাক আউট হয়ে যাওয়া
- মাথা ঘোরা
- শ্বাসকষ্ট ও অল্পেতেই হাঁপিয়ে
যাওয়া
- হঠাৎ ঘাম হওয়া ও অস্বস্তি
বোধ করা।
কি করে শনাক্তকরণ করা হয়?
কিছু পরীক্ষার সাহায্যে শনাক্তকরণ
করা হয়। যেমন , ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাম, হল্টার মনিটর, বিশেষ কিছু রক্ত পরীক্ষা।
আই সি ডি কী?
আই সি ডি এক ধরণের একটি ছোট
ডিভাইস বা যন্ত্র। এই যন্ত্র পেসমেকারের পরিপূরক ও বিপরীতধর্মীও বটে। মানুষের শরীরের
হার্টবিট স্বাভাবিকের তুলনায় বেশিমাত্রায় বেড়ে গেলে এই আই সি ডি ব্যবহার করা হয়। এর
মধ্যে ইলেকট্রিকাল প্যালস থাকে যেটা হার্টবিটকে পুনরায় স্বাভাবিক ‘ছন্দে’ ফিরিয়ে
আনতে সাহায্য করে। এরই সাথে যদি জ্জঙ্খঙ্গ হার্টবিট কমে গেলেও পেসমেকারের মত একই কাজ
করে তাকেও স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনে।
এটার কোন সময়ে প্রয়োজন?
দেখা গেছে, মানুষের
শরীরে স্বাভাবিক হার্টবিট প্রতি মিনিটে ৬০-১০০ বার যদি কোন কারণে Venticular Tachy
Cardia এবং Venticular Fibrillation এর জন্য হার্টবিট অনেক বেড়ে যায় তখনই এর
প্রয়োজন পড়ে।
কি কারণে হার্টবিট বেড়ে যায়?
VT
ও VF মূলত
দুটি কারণে হয়ে থাকে।
হার্টের অ্যাবনর্মাল স্ট্রাকচারাল ডিজিজের
মধ্যে উল্লেখ করার বিষয় হল Hyprodrophic Cardiomyopathy এবং হার্ট অ্যাটক বা হার্টের অপারেশন হওয়ার
পর ফ্রাইবোসিস হয়ে গেলে।
স্ট্রাকচারাল নর্মাল হার্ট
ডিজিজের ক্ষেত্রে ইকোতে নর্মাল রিপোর্ট থাকলেও ইলেকট্রিকাল সমস্যা থাকে, যার ফলে হার্টবিটও
বেড়ে যায়।
এর উপসর্গ কী?
এর উপসর্গ হল,
- বুক ধড়ফড় করা
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
- ব্ল্যাকআউট
- অস্বস্তি হওয়া
- ব্লাড প্রেসার কমে যাওয়া
- পরিবারের ইতিহাসের মধ্যে
যদি সাডেন কার্ডিয়াক ডেথের কারণ থাকে।
এর কাজ কী?
জ্জঙ্খঙ্গ মূলত দু-ভাবে কাজ
করে। রোগীর হার্টবিট বেড়ে গেলে ডিভাইসটা নিজের রেটের চেয়েও বাড়িয়ে দিয়ে রোগীর হার্টবিট
কমানোর চেষ্টা করে।
যদি রোগীর হার্টবিট একান্তই
না কমে তখন ঙ্গঙ্খ শক দিয়ে তা স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
কি করে শনাক্তকরণ করা হয়?
মূলতঃ শনাক্তকরণের উপায় হল,
- ইসিজি
- ইকোকার্ডিওগ্রাম
- হল্টার মনিটর
- ই. পি. স্টাডি এবং আর. এফ.
অ্যাবলেশন
- স্লিপ রেকর্ডার, ইভেন্ট
রেকর্ডার।
তুলনামূলক বৈশিষ্ট্য
পেসমেকার মূলত বেশি বয়সেই
ব্যবহৃত হয়, তবে জ্জঙ্খঙ্গ কমবয়স এবং মধ্যবয়স্কদের মধ্যেও ব্যবহৃত হয়।
পেসমেকারের মূল কাজ হল হার্টবিট
কমে গেলে তাকে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনতে এবং তারই সাথে হার্টবিট কমে গেলেও পেসমেকারের
সাহায্যে তাকে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনতে পারে।
কি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত?
উপরিউক্ত দু’টি ডিভাইসেরই নির্দিষ্ট কোনও গুরুতর সতর্কতা নেই।
- অপারেশনে লোকাল অ্যানাস্থেসিয়ার
দ্বারাই করা হয়
- বছরে একবার চেক আপ করাতে
হবে
- কোনও প্রকার অস্বাভাবিকতার
লক্ষণ দেখা গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন
- ব্যাটারি শেষ হলে পুনরায়
পরিবর্তন করা যায়
- হেলদী জীবনযাত্রায় চলাই
ভালো
ICD slow অনুভব করলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া
MRI করতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।