Health

1 year ago

Maternal mortality : মাতৃমৃত্যুর অনুপাত দ্রুত কমছে ভারতে, তুলনায় পিছিয়ে পশ্চিমবঙ্গ

Maternal mortality
Maternal mortality

 

কলকাতা, ৮ ডিসেম্বরঃ  ভারতে প্রসবের সময় বা তার পর মায়ের মৃত্যুর অনুপাত (ম্যাটারনাল মর্টালিটি রেশিও, সংক্ষেপে এমএমআর) দ্রুত কমছে। কিন্তু সমীক্ষার দাবি, পশ্চিমবঙ্গ এক্ষেত্রে সেভাবে সাফল্য পাচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গ সরকার অনেকদিন ধরে দাবি করছে, এদিক থেকে এই রাজ্যের অবস্থান অত্যন্ত ভাল। কিন্তু এমএমআর-এর সদ্যপ্রকাশিত সর্বভারতীয় তালিকায় দেখা যাচ্ছে ২০১৪-’১৬ সময়কালে পশ্চিমবঙ্গ ছিল সপ্তম স্থানে। ২০১৮-’২০-তে সেটা নেমে এসেছে দশম স্থানে।

প্রসবের পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতি এক লক্ষ প্রসূতির কতজন মারা যাচ্ছে, সেই অনুপাতকে বলে মাতৃমৃত্যু বা এমএমআর। দু’দশক আগে ভারতে মায়েদের প্রসবকালীন যে মৃত্যুহার ছিল, তা প্রায় এক চতুর্থাংশ কমে গিয়েছে। প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভুটানের সংশ্লিষ্ট পরিস্থিতির চেয়ে ভারতের অবস্থা অনেক ভাল। কিন্তু ভারতের চেয়েও ভাল শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়ার মত বেশ কিছু দেশ। ২০০৭-’০৯ থেকে ২০১৮-’২০র সমীক্ষারিপোর্টে এই ছবি উঠে এসেছে।

গত শতকের শেষে ভারতে এই গড় এমএমআর ছিল ৪০০। ২০০৭-’০৯তে তা কমে হয় ২১২। ২০১০-’১২তে ১৬ শতাংশ কমে হয় ১৭৮। ২০১৪-’১৬তে ২৭ শতাংশ কমে হয় ১৩০। ২০১৪-’১৬ তুলনায় ২৫ শতাংশ কমে ২০১৮-’২০-র এমএমআর দাঁড়িয়েছে ৯৭। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, পঞ্জাব প্রভৃতি রাজ্যে দেশের সার্বিক মাতৃত্বকালীন মৃত্যুর হ্রাসের তুলনায় কম উন্নতি হয়েছে। সবচেয়ে মজার কথা, এদেশের কিছু রাজ্যের এমএমআর উন্নত রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট হিসাবের সঙ্গে তুলনীয়। আবার ভারতে কিছু রাজ্যের এমএমআর-এ অনুন্নত কোনও রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট হিসাবের ছায়া পাওয়া যায়। ২০১৮-’২০তে ভারতের এমএমআর ছিল ৯৭, মানে সেটি নিকারাগুয়ার এমএমআর-এর মত। এখন উত্তর প্রদেশের এমএমআর ১৬৭। ইউনিসেফ-এর তথ্য বলছে এই হিসেব প্রায় যুদ্ধদীর্ণ ইয়েমেনের এমএমআর-এর মত।

অসম এবং ওডিশার এমএমআর গ্যাবন এবং নামিবিয়ার সংশ্লিষ্ট হিসেবের মত। অন্যদিকে, কেরলের এমএমআর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত। কেরলে ২০১৪-১৬ থেকে এমএমআর কমেছে প্রায় ৪৬। মহারাষ্ট্র এবং তেলেঙ্গানার এমএমআর যথাক্রমে মেক্সিকো এবং ভিয়েতনামের এমএমআর-এর মত।২০১৭-তে ভারতে গড় এমএমআর ছিল ২২১। বিশ্বে প্রতি পাঁচটি শিশুর একজনের জন্ম হচ্ছে ভারতে। জনসংখ্যা হ্রাসে ভবিষ্যতে ভারত কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সংশয় থাকলেও অনুমান হচ্ছে বর্তমান ধারা বজায় থাকলে এমএমআর কমে ৭০ হবে।

সংশ্লিষ্ট তালিকায় দেখা যাচ্ছে, ২০১৪-’১৬ থেকে ২০১৮-’২০— দেশের প্রায় সব রাজ্যের এমএমআর কমেছে। ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গ— ১০১ থেকে বেড়ে হয়েছে ১০৩। কেরল, মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানায় যথাক্রমে ৪৬, ৬১, ৮১ থেকে এই দুই সময়কালে কমে হয়েছে যথাক্রমে ১৯, ৩৩ ও ৪৩। এর পরে অন্ধ্র, তামিলনাডু, ঝাড়খন্ড— ছিল যথাক্রমে ৭৪, ৬৬, ১৬৫। হয়েছে যথাক্রমে ৪৫, ৫৪, ৫৬। গুজরাত, কর্ণাটক, উত্তরাখণ্ডে ছিল ৯১, ১০৮, ২০১। হয়েছে ৫৭, ৬৯, ১০৩।

পশ্চিমবঙ্গে শিশু এবং মায়ের মৃত্যুর হার দ্রুত কমছে বলে নানা সময়ে, এমনকি বিধানসভা অধিবেশনেও দাবি করেছেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। এই সমীক্ষা দাখিল করে তাঁর কাছে জানতে চাই, কেন এই অবস্থা? বিশদ ব্যখ্যায় না গিয়ে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, “আমাদের এমএমআর আরও কমে গিয়েছে। এক লক্ষ প্রসূতিতে ১০৯ ছিল। এখন ১০৩ হয়েছে।“ কিন্তু স্যাম্পেল রেজিষ্ট্রেশন সিস্টেম (এসআরএস) সমীক্ষা তো বলছে, একমাত্র এই রাজ্যেই এমএমআর বেড়ে গিয়েছে! এর জবাব দেননি চন্দ্রিমা।

বিশিষ্ট চিকিৎসক সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়কে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “এ রাজ্যের অবস্থান নেমে এসেছে না বলে বিশেষ কিছু উন্নতি করে নি বলা ভাল। ১১৭ আর ১২২ তফাত এমন কিছু নেই। উন্নতি না হওয়ার কারন বলাও মুশকিল। কেননা এখানে ম্যাটারনাল ডেথ অডিট খুব উন্নত নয়। আমার নিজের ধারনা মৃত্যু হার বেশি সহায়ক কেয়ার সেন্টারে। কিন্ত তাঁরা অন্য জায়গা থেকে আসা রোগী বা খারাপ অবস্থায় পৌঁছনোর যুক্তি বলবেন। অডিট না হলে কারন অনুসন্ধান সম্ভব নয়।”

ডায়মন্ডহারবার নার্সিং কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তথা ধাত্রী সংগঠনের অন্যতম কর্ত্রী মানসী জানা ২৩ বছর ধরে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। এই প্রতিবেদককে তিনি বৃহস্পতিবার বলেন, সুস্থ শিশু ও মা যে কোনও সমাজের একটা সম্পদ। গত কয়েক বছরে এই ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের উন্নতি হয়েছে। তা সত্বেও কিছু সমস্যা রয়েছে গ্রামগঞ্জে। যেমন এক, প্রয়োজনের তুলনায় দক্ষ ধাত্রীর অভাব। দ্বিতীয়ত, গাড়ির অভাব বা বেহাল রাস্তার জন্য কিছু ক্ষেত্রে কোনও আসন্নপ্রসবাকে চটজলদি স্থানান্তরিত । তিন, প্রাথমিক ও পরবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে সমন্বয়সাধন প্রভৃতি। মাতৃমৃত্যুর হার আরও কমাতে ভারত সরকার ‘নার্স প্র্যাকটিশনার্স ইন মিডওয়াইফারি’ নামে কার্যক্রম শুরু করেছে। দেশের প্রায় এক লক্ষ নার্সকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ‘মিডওয়াইফ ডে কেয়ার’-এর ব্যবস্থা হচ্ছে। ২০২০-’২৫ এই সময়কালে কেবল এ রাজ্যে এ কারণে প্রায় ৬ হাজার নার্সকে মোতায়েন করা হচ্ছে। তবে, অতিমারির জন্য সমস্যা হয়েছে। আশা করি শীঘ্র এই কাজে আরও গতি আসবে।

সমীক্ষা বলছে ভারতে সার্বিক উন্নত হয়েছে প্রসবকালীন সতর্কতা এবং নিরাপত্তার বিষয়টি। ২০০৫-’০৬ অর্থবর্ষে যেখানে মোট প্রসবের ৪০ শতাংশ হাসপাতালে হত, ২০১৯-’২১-এ তা বেড়ে হয়েছে ৮৯।

জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষায় (এনএফএইচএফ) বাল্য বিবাহের প্রবণতা আগের চেয়ে কমেছে। ২০০৫-’০৬এ ২০-২৪ বছরের মেয়েদের প্রায় অর্ধেকের বিয়ে হয়েছে ১৮ বছরের আগেই। ২০১৫-১৬তে এই শতাংশ কমে দাঁড়ায় ১৮ শতাংশে, ২০১৯-২১এ ১৫ শতাংশে। উল্লিখিত এই তিন সময়সীমায় বিবাহিতাদের শিক্ষিতার শতাংশ ছিল যথাক্রমে ৫৫, ৮১ ও ৮৩। অন্যভাবে বলতে গেলে পড়াশোনা শিখে একটু বেশি বয়সে বিয়ের প্রবণতা মেয়েদের বাড়ছে।


You might also like!