দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ- মহালয়াতে মা দুর্গার বোধন,আর দশমীতে বিসর্জন -এই রীতি মেনেই মা দুর্গার আরাধনায় মেতে ওঠে রাজ্যবাসী। পুজোর আর মাত্র ১২ দিন বাকি, তার আগেই মাকে আরাধনা করার জন্য বনেদি বাড়ি থেকে বারোয়ারীতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। কিন্তু এমন এক বনেদি বাড়ি রয়েছে, যেখানে এই রীতি মেনে মায়ের আরাধনা করা হয় না, তা হল জয়নগরের দত্ত বাড়ির দুর্গা পুজো।
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বেশ কয়েকটি প্রাচীন বনেদি বাড়ি দুর্গাপূজার মধ্যে অন্যতম হল জয়নগরের দত্ত বাড়ির দুর্গাপুজো। অনেকেই আবার বিগত ৩৪৯ বছরের চলা এই দত্তবাড়ির দুর্গাপুজোকে সাদা দত্ত বাড়ির দুর্গাপুজো বলে অনেকেই ডেকে থাকে। ১৬৭৫ সালে জমিদার রামচন্দ্র দত্ত কলিকাতা থেকে সুন্দরবনে এসে নিজের জমিদারি আধিপত্য স্থাপন করে। এরপর মা দুর্গার স্বপ্নাদেশে শুরু হয় দুর্গাপুজো। তৎকালীন রামচন্দ্র দত্ত তার জমিদারি আধিপত্য এতটাই বিস্তার ছিল যে ৯৪ টি মৌজা এবং ৬ টি থানার জুড়ে তার জমিদারি আধিপত্য ছিল। দশ দিন ধরে এই দত্তবাড়িতে মহাকর্মযজ্ঞের অনুষ্ঠান লেগে থাকত অতীতে। মহালয়ার পরের দিন প্রথমা থেকেই শুরু হত দেবীর বোধন। এরপর টানা ১০ দিন দেবীর পুজো শুরুর সময় গান ফায়ার করে করে পুজোয় বসতেন পুরোহিতরা। পরিবার সূত্র খবর, এই দত্তবাড়িতে বারুইপুরের ম্যাজিস্ট্রেট থাকা কালীন দত্তবাড়িতে আনাগোনা ছিল সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের। তিনি দত্ত বাড়িতে প্রায় সময় এসে ছুটি কাটাতেন এবং দত্ত বাড়ির দুর্গা পুজোয় তিনি সামিল হতেন। জয়নগরের এই দত্তবাড়িতে বসে তিনি লিখেছিলেন বিষবৃক্ষ উপন্যাস। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বেশ কয়েকটি উপন্যাসে এই দত্ত বাড়ির উল্লেখ রয়েছে।
কালের নিয়মে জমিদারি প্রথা আর নেই। কিন্তু রয়ে গিয়েছে পুরনো প্রথা। এখনও এই দত্তবাড়িতে টানা ১০ দিন ধরে দেবীর আরাধনা করা হয়। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতানুসারে এখানে পূজিত হয় দেবী দুর্গার।এখনো প্রথা মেনেই রথযাত্রার দিন কাঠামো পুজো হয়। বংশপরম্পরায় মৃৎশিল্পী, পুরোহিত ও বাদ্যকাররা এই বাড়িতে পূজোয় সামিল হন। বলিদান প্রথা এখনও রয়েছে এই দত্তবাড়িতে পুজোর শুরু হওয়ার আগে এখন আর বন্দুকের আওয়াজ হয় না বরং আতশবাজি জ্বালিয়ে পুজো শুরু করা হয়।