দুরন্ত বার্তা
ডিজিটাল ডেস্কঃ- ঘরে ঘরে পূজিতা হন মাতৃ রূপী মা কালী। বারোয়ারি থেকে বাড়ি, মা কালীর
আরাধনায় সামিল হন আপামর মর্ত্যবাসি। তবে আজ থেকে বহু কাল আগে এই ছবিটা দেখা যেত না।
তখন মা কালী ছিলেন তন্ত্র সাধকদের উপাসক। আর সেই মা কালীকে বাড়ি বাড়ি পুজো করানোর জন্য
আকুল হয়ে উঠেছিলেন এক সাধক।
শাস্ত্রজ্ঞ
পণ্ডিতদের ভূমি নবদ্বীপ, জ্ঞানচর্চার অন্যতম পীঠস্থান। সুপ্রাচীনকাল থেকে সেই নবদ্বীপ
তন্ত্রের সাধন ক্ষেত্র হিসেবেও পরিচিত ছিল। পণ্ডিতদের একাংশের মতে, আজ বাংলার ঘরে যে
কালীমূর্তির পুজো প্রচলিত, তার হয় সূত্রপাত নবদ্বীপের তন্ত্রবিশারদ কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের
হাত ধরেই। কৃষ্ণানন্দ আগামবাগীশের জন্ম নদিয়ার নবদ্বীপে । তাঁর আসল পদবি ভট্টাচার্য।
তন্ত্র সাধনার আগম পদ্ধতিতে সিদ্ধিলাভ করে তিনি আগমবাগীশ উপাধি পান। জনশ্রুতি, অলৌকিক
ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ।
রাতের পর রাত
পঞ্চমুণ্ডির আসনে ধ্যান করেও প্রাণের অস্থিরতা কাটে না। মা যে ভয়াল নন, বরং মাতৃ স্বরূপিণী
মহামায়া, তা যে সাধারণ মানুষকে চেনাতেই হবে। তাই সাধকের একমাত্র আকুতি ছিল, দেবী স্বয়ং
তাঁকে নিজের রূপে সন্ধান দিন।স্বপ্নাদেশে কৃষ্ণানন্দ বিধান পেয়েছিলেন, রাত্রি শেষে
প্রাতঃমুহূর্তে কৃষ্ণানন্দ প্রথম যে নারীকে দেখবেন, সেই মতোই হবে দেবী কালীর যথার্থ
সাকার মূর্তি। পরের দিন ভোরে গঙ্গাস্নানে বেরিয়ে কৃষ্ণানন্দ দেখলেন, এক গায়ের বধূ
ঘুঁটে দিচ্ছেন। তাঁর বাঁ হাতে গোবরের মস্ত তাল। ডান হাত উঁচুতে তুলে ঘুঁটে দিচ্ছেন
সেই নারী। কৃষ্ণবর্ণা-অবিনস্ত বসনা, মুক্তকেশী সেই বধূ কৃষ্ণানন্দকে দেখে জিভ কাটতেই
দেবীর কৃপার আভাস পেয়েছিলেন আগমবাগীশ। মানসপটে সেই বধূর ছবি এঁকে সেই রূপই ফুটিয়ে তুলেন
মৃন্ময়ী মূর্তিতে। সেই থেকেই ঘরে ঘরে শুরু মা কালীর পুজো।
তবে সেই মা
কালী মূর্তিতে প্রাণ আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন এক জমিদার! কালীপুজো দিনের
জমিদার বাড়িতে আলোর রসনায়। সাথে খুশির হাওয়া। আর সেই সঙ্গে মন দিয়ে পুজো করছিলেন সাধক
কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ।
আচমকাই দেবীর
প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়নি বলে দাবি করলেন বাড়ির গৃহকর্তা।ত্রুটিহীন দেবী আরাধনার প্রমাণ
দিতে তৎতক্ষণাত সেই পুরোহিত দাবি করলেন, প্রাণপ্রতিষ্ঠার প্রমাণ তিনি দেবেন। তবে প্রমাণ
দেওয়ার পর ওই ধনী বাড়ির কেউ জীবিত থাকবেন না। কথিত আছে, পুরোহিতের প্রস্তাবে গৃহকর্তা
সম্মত হলে পুরোহিত একটি কুশি দেবী প্রতিমার উরুতে ছুঁড়ে মেরেছিলেন। তাতেই প্রতিমার
উরু ফেটে রক্তপাত শুরু হয়। পরমূহুর্তে মুখে রক্ত উঠে বাড়ির সকল সদস্যের মৃত্যু ঘটে।