দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ কলকাতার বুকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন মেলার কথা আমরা সকলেই জানি। তারই মধ্যে এক অন্যতম মেলা বেহালা বরিশার চণ্ডী মেলা। যে মেলা ঘিরে রয়েছে নানান ঐতিহ্য ও গল্পকথা। যা জানতে হলে পারি দিতে হবে কলকাতার ইতিহাসে। যখন এই কলকাতা শহর ছিল না বরং এটি ছিল জঙ্গল আর বাঁশবাগানে ঘেরা বঙ্গভূমি।
তখন আজকের বরিশাও এই শহর তিলোত্তমার আওতায় পড়ত না। সময়টা ছিল ১৭৯৩ খ্রীষ্টাব্দ, সাবর্ণ রায়চৌধুরী বংশের বংশধর মহেন্দ্র রায়চৌধুরীর হাত ধরে সূচনা ঘটল বরিশার চণ্ডীপূজার। পুজো উপলক্ষে বসল বিরাট মেলা। শারদীয়া দুর্গাপুজোর দু'মাস পরে শুক্ল পক্ষের অষ্টমী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত তিন দিনের এই পূজা। আর পুজোকে কেন্দ্র করে দিন দশেকের মেলা। আগে এই পুজো কেবলমাত্র সাবর্ণ পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকাকালীন তখন অবশ্য পুজোকে কেন্দ্র করে এত জাঁকজমক ছিল না। তখন পুজো তিনদিনের হতো এবং দেবী মায়ের কাছে পাঠা বলি ও মোষ বলিরও প্রথা চালু ছিল।
এই পুজো ঘিরে রয়েছে আরেকটি কাহিনী, সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের বাড়ির লাগোয়া একটি পুকুর রয়েছে। নাম চণ্ডীপুকুর। কথিত আছে যে স্বপ্নাদেশে এই পুকুর থেকে পাওয়া যায় একটি ঘড়া। সেই ঘড়াকেই বেনারসী শাড়ি এবং নানারকম অলঙ্কারে সাজিয়ে দেবী রূপে পুজো করা হতো। কিন্তু এখন দেবী মায়ের মূর্তি তৈরি করেই তাঁর আরাধনা করা হয়। সেই ঘড়া আজও সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের বাড়িতে রয়েছে।
দেবী চণ্ডীর পুজো নিয়ে এই বরিশা অঞ্চলের মানুষের উৎসাহ এবং উন্মাদনা চোখে পড়ার মতো। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসেন পুজো দিতে এবং মেলায় বেড়াতে। প্রতি বছর মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন বিখ্যাত শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এবং মেলা কমিটি একাধিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নারী দিবস, প্রতিবন্ধী দিবস, শিশু দিবস এবং যুব দিবস পালন করা হয়।
মেলায় চলে নানান জিনিসের বিকিকিনি। কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুল থেকে হাল আমলের ব্যাটারি চালিত খেলনা, ঘরকন্নার সমস্ত জিনিস, সাজগোজের জিনিস, গৃহসজ্জার সামগ্ৰী.... পাওয়া যাবে সমস্ত কিছুই। আর খাওয়া দাওয়া তো আছেই।
আছে পুতুলনাচ, সার্কাস, মজাদার ভেন্ট্রিলোকুইজম, নাগরদোলা, চড়কি... শিশুদের পাশাপাশি বড়দেরও মজা খুশির বহু উপকরণ। দশদিন পর ভাঙে এই চণ্ডী মেলা।