Festival and celebrations

2 days ago

Kolkata’s Glorious Durga Puja:আসন্ন শারদোৎসব ঘিরে কলকাতা পুলিশের তৎপরতা, সক্রিয় পুজো কমিটিগুলি

Kolkata Police's vigil
Kolkata Police's vigil

 

দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃবাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব শারদোৎসবের আর হাতে গোনা ক’টা দিন বাকি। ইতিমধ্যেই কলকাতার আকাশে বাজতে শুরু করেছে পুজোর ঢাক। আর এই উৎসব নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন করতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে কলকাতা পুলিশ। শহরজুড়ে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, নেমে পড়েছে গোয়েন্দা বিভাগ ও ট্রাফিক কন্ট্রোল টিম। পুলিশের এই তৎপরতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কোমর বেঁধে নেমেছে পুজো কমিটিগুলিও। শুরু হয়ে গেছে তোড়জোড়, থিম প্রস্তুতি থেকে ভিড় সামলানোর ব্লু-প্রিন্ট।

পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে ইতিমধ্যেই একাধিক বৈঠক সম্পন্ন হয়েছে বিভিন্ন পুজো উদ্যোক্তাদের সঙ্গে। আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে নিরাপত্তা, জনসমাগম, সিসিটিভি নজরদারি, দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলার মতো একাধিক দিক। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, এই বছর আরও বেশি সংখ্যক ফোর্স মোতায়েন থাকবে বড় প্যান্ডেল ও ব্যস্ত মোড়গুলোতে।

এ বছর উত্তর কলকাতার টালা প্রত্যায়ের পুজোর শতবর্ষ। স্বনামধন্য শিল্পী ভবতোষ সুতার তাদের শারদোৎসব সাজিয়ে তোলার দায়িত্বে। এই পুজো নিয়ে প্রতি বছর কলকাতা পুলিশকে দীর্ঘ সময় ব্যয় করতে হয়। এ বার যেহেতু তাদের পুজোর শতবর্ষ তাই কলকাতা পুলিশকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে টালা প্রত্যয়ের পুজো নিয়ে। পুলিশ কমিশনারের নির্দেশ প্রসঙ্গে টালা প্রত্যয়ের অন্যতম কর্তা শান্তনু ঘোষ বলেন, ‘‘কলকাতা পুলিশ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। এ বার যে হেতু পুজো এগিয়ে এসেছে, তাতে সবকিছুই দ্রুত করতে হবে। তাই পুলিশ প্রশাসন যদি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের সহযোগিতা চায় তা হলে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। কারণ পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া এত বড় পুজোর আসরকে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়।’’ প্রসঙ্গত, এ বছর ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়া। সেই দিন থেকেই কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে পুজোর উদ্বোধন শুরু হয়ে যাবে। এ ছাড়াও চতুর্থী তিথি দু’দিন ধরে থাকায় উৎসবের মেয়াদ হতে পারে প্রায় একপক্ষকাল। সে কথা মাথা রেখে পুলিশের মতো পুজো কমিটিগুলিও নিজ নিজ পরিসরে কাজ শুরু করেছে।

লালবাজার সূত্রে খবর, পুজোর দিনগুলিতে ভিড় কী ভাবে সামলানো হবে, আগে থেকেই সেই পরিকল্পনা ছকে রাখতে থানাগুলিকে নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার। মধ্য কলকাতার সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজোর জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখে সেখানে ভিড় নিয়ন্ত্রণে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, তা জানিয়ে পুলিশ চিঠি দিয়েছে ওই পুজোর উদ্যোক্তা তথা বিজেপি নেতা সজল ঘোষকে। গত বছর সন্তোষ মিত্র পুজো কমিটির তরফে অভিযোগ করা হয়েছিল, ওই পুজোয় ভিড়ের কারণে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল পুলিশের তরফে। আর এ বছর ‘অপারেশন সিঁদুর’-কে নিজেদের পুজোর থিম ঘোষণা করার পরেই তাদের পুলিশ চিঠি পাঠিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর সজল। সজলের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘কলকাতা পুলিশ যদি সব পুজো কমিটির জন্য একই নিয়ম বলবৎ করে তা হলে সকলের মঙ্গল। যে ভাবে আমার পুজোকে কেন্দ্র করে সন্তোষ মিত্র পুজো কমিটিকে প্রেমপত্র পাঠানো হয়েছে, তাতে আমাদের সন্দেহ জাগছে। সেই প্রেমপত্রের কারণ কি আমি সৎ ছেলে বলে?’’

কলকাতার পুজো কমিটিগুলি ইতিমধ্যেই থিম ঠিক করে ফেলেছে ।বেশ কিছু পুজো কমিটি আয়োজন করতে চলেছে থিমভিত্তিক শোভাযাত্রা, উচ্চ প্রযুক্তির আলো ও শব্দের খেলা। কোন পুজোয় কেমন ভিড় হবে, থিম দেখে তা কিছুটা বোঝা যায়। তাই আগে থেকেই থানাগুলিকে এ বিষয়ে খোঁজখবর নিতে বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ কলকাতার খিদিরপুর ২৫ পল্লির প্রচার সচিব কালী সাহা বলেন, ‘‘যে কোনও একটি বড় ধরনের আয়োজন করতে গেলে আগে থাকতেই প্রস্তুতি নেওয়াটা স্বাভাবিক নিয়ম। এ বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা ধর্মস্থলগুলিতে যে ভাবে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, তাতে আমাদের শিক্ষা নিতেই হবে। পুজোর সময় যাতে সে রকম পরিস্থিতি না হয়, সে বিষয়ে আমরা এবং কলকাতা পুলিশ পরস্পরের সঙ্গে সহযোগিতা করেই চলব। সত্যি বলতে কী খিদিরপুর ২৫ পল্লিতে যত মানুষের ভিড় হয়, তাতে পুলিশ প্রশাসনের সাহায্য ছাড়া তা আমাদের একার পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়।’’

কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, “এই উৎসব শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং সামাজিক মিলনের অন্যতম বড় উদাহরণ। তাই শহরবাসীর আনন্দ ও নিরাপত্তা—দু’টিই আমাদের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। ক্লাবগুলির সহযোগিতা পেলে আরও সহজ হবে কাজ।”

সব মিলিয়ে, শহর জুড়ে তৈরি হচ্ছে উৎসবের উন্মাদনা। কোথাও শুরু হয়ে গেছে ঢাকের তাল, কোথাও আবার জোর কদমে চলছে কাঠামো গড়া। আর এরই ফাঁকে কলকাতা পুলিশ ও পুজো কমিটিগুলি মিলিত উদ্যোগে চেষ্টা করছে—এই শারদোৎসব হোক সুন্দর, নিরাপদ ও স্মরণীয়।

You might also like!