হাওড়া, ২৬ সেপ্টেম্বর : ভারতের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের অধীনস্থ অন্যতম প্রধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বোটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া-র নতুন অধিকর্তা হিসেবে নিযুক্ত হলেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী এবং ছত্রাক বিশেষজ্ঞ ডঃ কনাদ দাস। বৃহস্পতিবার তিনি এই দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, বোটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া দেশে উদ্ভিদবিদ্যা এবং ছত্রাক গবেষণা ও সংরক্ষণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। স্বাধীনতার পর থেকে ডঃ দাস ১৩–তম অধিকর্তা হিসেবে এই পদে আসীন হলেন। এই প্রথম কোনও ছত্রাক বিশেষজ্ঞ (উদ্ভিদের নিম্ন বর্গীয় গোষ্ঠী) বোটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া-র অধিকর্তা হলেন, যা ভারতীয় ছত্রাকবিদ্যার ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা মনে করছেন, যে সময়ে বিশ্বের লক্ষ লক্ষ ছত্রাক প্রজাতি এখনও অনাবিষ্কৃত, সেই সময়ে ডঃ কনাদ দাসের বোটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া অধিকর্তা হিসেবে নিয়োগ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রসঙ্গত, ডঃ কনাদ দাস চতুর্থ বাঙালি হিসেবে এই পদে আসীন হলেন। এর আগে এই পদে ছিলেন ডঃ জে.সি. সেনগুপ্ত (১৯৫৫-১৯৬১), ডঃ এস.কে. মুখার্জি (১৯৬৮-১৯৭১) এবং ডঃ পি.কে. হাজরা (১৯৯৩-১৯৯৮)। ১৯৯৯ সালে BSI-এর দেরাদুনে অবস্থিত উত্তর আঞ্চলিক কেন্দ্রে জুনিয়র রিসার্চ ফেলো হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। দীর্ঘ ২৬ বছরের কর্মজীবনে তিনি দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ছত্রাক বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ঐতিহ্যবাহী রূপ-শ্রেণীবিন্যাস এবং আধুনিক আণবিক ফাইলোজেনি কৌশল ব্যবহার করে বুনো মাশরুমের অন্বেষণ, চরিত্রায়ন, শনাক্তকরণ এবং নথিকরণে তাঁর দক্ষতা প্রশ্নাতীত।
ডঃ কনাদ দাসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈজ্ঞানিক অবদান হলো ভারত থেকে দুটি নতুন গণ এবং ১৬৫টি নতুন প্রজাতির বুনো মাশরুম আবিষ্কার। তাঁর গবেষণাপত্রগুলি দেশ-বিদেশের ১৭০টিরও বেশি স্বনামধন্য জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া, বুনো মাশরুমের উপর তাঁর আটটি মূল্যবান বই প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি একাধিক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে: মাইকোলজিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া-এর 'ফেলো' (২০২৩), অ্যাসোসিয়েশন অফ প্ল্যান্ট ট্যাক্সোনমি কর্তৃক 'প্রফেসর কে.এস. থিন্দ মেডেল' (২০২০), ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি কর্তৃক 'ভারত জ্যোতি' (২০১৫)। এছাড়াও, ছত্রাকবিদ্যায় তাঁর অবদানকে অমর করে রাখতে চারটি প্রজাতির মাশরুমের নামকরণ তাঁর নামে করা হয়েছে, যা অত্যন্ত বিরল সম্মান।