দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক:“চাষিদের থেকে লাঙল চলে গেলে তারা আত্মহত্যা করে। জমি চলে গেলে তারা ডাকাত হয়ে ওঠে।” ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত ‘রঘু ডাকাত’-এর এই সংলাপ শুধু ব্রিটিশ আমলের নীল চাষ কিংবা জমিদারদের দমনকাহিনী নয়, আজকের প্রেক্ষাপটেও প্রাসঙ্গিক। শাসকরা বদলেছে—আরও ভয়ংকর, আরও তৎপর, স্মার্ট, আধুনিক। ঠিক যেমন ছবিতে শয়তান জমিদারের দাপট, বাস্তবের শত্রুদেরও মোকাবিলা করতে হয় চুপিচুপি, অগোচরে, লোকচক্ষুর আড়ালে। সামনে যা দেখা যায়, তা যেন ফায়ারওয়ার্ক মাত্র। পৃথিবীর মঞ্চে চলছে এমনই অশুভ খেলা, আর অহীন্দ্র বর্মনের শয়তানি যেন সেই দূরপ্রসারী হুমকির ইঙ্গিত দেয়।
বাংলার সিনেমা বাজারে এবার অন্যরকম হালকা ফ্রেশিং এক ঝলক—‘রঘু ডাকাত’। ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায়, যদিও ছবি বাংলার, তবু দক্ষিণী সিনেমার ছায়া স্পষ্ট। মেগাস্টার দেব রঘুর ভূমিকায়, তবে প্রথম ভাগে এন্ট্রির জোর আর গল্পের সঙ্গে আরও ফাটাফাটি হতো। ডাকাতের গল্পে যদি চরিত্র আলাদা ব্যাকড্রপে বলা হয়, আনন্দ খানিকটা কমে যায়।
তবু রিলে রেসের মতো, ছবিতে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে ফিনিশিং লাইন স্পর্শের ছোঁয়া আছে। আছে ব্যাটন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো সহযোদ্ধারা—সৌদামিনী চরিত্রে ইধিকা পাল, অহীন্দ্র বর্মনে অনির্বাণ ভট্টাচার্য, গুঞ্জার চরিত্রে সোহিনী সরকার, ডাঙ্কানের চরিত্রে অ্যালেক্স ও’নীল। পিরিয়ড ড্রামা হলেও অত সিরিয়াস হয়ে পড়েনি—ছবিতে বলা হয়েছে, এটি কাল্পনিক আইডল, পরিত্রাতা বা বাংলার রবিনহুডের গল্প।
আজকের দিনে সেই ধরনের ‘বাগি’ কমই রয়েছে। যেসব বিদ্রোহী দমনে শোষিত হচ্ছে, রঘু ডাকাতের গল্পে তাঁরা স্পেক্টাকুলারভাবে, লার্জার দ্যান লাইফে দেখা যায়। পুরনো নীল চরের গল্প মনে করিয়ে দেয়, শেয়াল নীল রঙ মেখে রাজা সেজে বসে—আজ সেই শয়তান পৃথিবীর শাসক। দেবের চরিত্র হয়তো মুখোশ খুলে দিতে পারে, কিন্তু বাস্তবের পরিত্রাতা কে?
ছবিতে বন্ধুত্ব ও প্রেমের জোরই রঘুর শক্তি। গ্রামীণ, রুক্ষ প্রান্তরের সেই সম্পর্ক রঘুকে শত্রুবিনাশে সাহায্য করে। প্রেম আর বন্ধুত্বের মধ্যে বেছে নেওয়ার মুহূর্ত আসে—এবং সেই বিচ্ছেদ দর্শকের হৃদয়েও বেদনা উদ্রেক করে। হাতে থাকা প্রেমকে সম্বল করে রঘু এগিয়ে যায়। সিনেমায় সম্ভব সবকিছু, কিন্তু হ্যাপিলি এভার আফটার বাস্তবে হয় না। তাই, দর্শকরা যা পায়, সেটাই নিয়েই বাড়ি ফিরতে হবে—স্মরণীয় এক সিনেমা অভিজ্ঞতা হিসেবে।