দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ গরমের তেজ বেড়ে যাওয়া যেমন একটা দুঃসংবাদ, তেমনই গরমের দিনে বাজারে আমের আবির্ভাব, একটি সুখবর। ইতিমধ্যেই মরশুমের নানান ধরনের আম বাজারে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তবে কিনতে গিয়ে যাতে না ঠকে যেতে হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। তার জন্য আগে জেনে নিতে হবে, যে বিভিন্ন ধরনের আমের বৈশিষ্ট। কোন আম কী বৈশিষ্ট দেখে চেনা যায়, তা দেখে নেওয়া যাক।
বেগমফুলি- বাংলায় অনেকেই এই আমকে বেগমফুলি বলে থাকেন, হায়দরাবাদের এই খাস আম সেরাজ্যে অবশ্য বেগমপল্লী হিসাবে পরিচিত অনেকের কাছে। দেশের বহু প্রান্তে এর নাম ব্যাঙ্গনাপাল্লে। ফলে নামের হেরফেরে ঠকে যাবেন না। এই আম ডিম্বাকৃতি হয়। সাধারণত হলুদ আমই বাজারে আসে। আমের গায়ে সামান্য দাগ থাকে, আর নাকের কাছে নিলে যে গন্ধ আসে, তাতে মন-মাথা জুড়িয়ে যায়।
গোলাপখাস- নামই বলে দিচ্ছি, এই আম কেন খাসা! গোলাপখাস আম, বাংলার চেনা আমের তালিকার মধ্যে অন্যতম। এই আম লালচে আভা যুক্ত হয়। গোলাপের রঙের মতো খানিকটা রঙ থাকে আমে। সঙ্গে দুর্দান্ত গন্ধ থাকে। এই গন্ধ গোলাপের মতো বলে একে গোলাপখাস বলা হয়, এমনই প্রচলিত।
চৌসা: বলা হয়, ষোড়োশ শতকে শের শাহ এই আমের নামকরণ করেন। গোটা ভারতেরই অত্যন্ত জনপ্রিয় আম এটি। বিশেষত উত্তর ভারতে এই চৌসা আমের রমরমা। এছাড়াও বিহারে এই আম বিখ্যাত। বিহারের এক এলাকার নামেই নাকি এই আমের নামকরণ করেছিলেন শেরশাহ সুরি। এই আম চেনার উপায় হল এর রঙ। এর রঙ অনেকটা সোনালি রঙের মতো উজ্জ্বল হলুদ।
হিমসাগর: মে মাসের প্রথমেই বাজারে ওঠে হিমসাগর। কিছুদিন এই আমের স্বাদ বাঙালি পেতে না পেতেই বাজার থেকে এটি উধাও হয়ে যায়। এই আম মিষ্টি হওয়ার জন্য বিখ্যাত। এগুলি সাধারণত মাঝারি আকারের হয়। ভিতরে শাস হলুদ থাকলেও বাইরে সবুজ রঙ থাকে।
ল্যাংড়া: এই আমের এমন নামকরণ নাম আঠেরোশো শতক থেকে হয়ে এসেছে। আঠেরোশো শতকে এক ফকিরের হাত ধরে এমন আমের চাষ হওয়ার কথা শোনা যায়। জুলাই মাসের দিকে এই আম পাকতে শুরু করে। ল্যাংড়া আম সাধারণত দেখতে গোলাকার ও মসৃণ। শোনা যায়, মোঘল আমলে এই আম বিহারের দ্বারভাঙায় চাষ হত। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সহ গোটা উত্তর ভারতে এই আম চাষ হয়।
গোপালভোগ: মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বাজারে এই আম আসে। আম চেনার উপায় হল, এর সবুজ রঙের খোসার গায়ে থাকে, হলুদ দাগ। আমটি পাকার পর হলুদ হয়ে যায়। শোনা যায় এই আমের চাষ বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল। সেখানে নরহাট্টার গোপাল নামের এক ব্যক্তি এই আমের চাষ প্রথমে শুরু করেন। তাঁর নাম থেকেই এমন নামকরণ।
ফজলি: এই আমের নামকরণও ব্যক্তির নামে। এই আমের নামকরণের ইতিহাসে শোনা যায় আঠেরোশো শতকে ফজলি বিবি নামে এক বৃদ্ধা এই আম প্রথম শুরু করেন। তাঁর বাগানের উঠোনে এই আমের চাষ হয়। এলাকার কালেক্টর আসার খবর পেয়ে তিনি সেই আম তাঁর কাছে নিয়ে যায়। তৎকালীন ইংরেজ কালেক্টর জিজ্ঞাসা করেন আমের নাম, আর ফজলি বিবি ভেবেছিলেন তাঁর নাম জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে। ফলে উত্তরে ‘ফজলি’ বলে দেন। এই আম হালকা টকযুক্ত আম। এই আমের আকার অনেক বড়।
বাদামি- এই আম লালচে হলদে রঙের হয়। আমের বোঁটার দিকটায় লালচে ভাব থাকে। আর আমের হলুদ রঙ বেশ উজ্জ্বল হয়। এপ্রিল থেকে জুলাই মাসের মধ্যে এই আম পাওয়া যায়। এর বহু ধরনের ‘ভ্যারাইটি’ বাজারে পাওয়া যায়।
দশেরি: দশেরি আম ঘিরেও রয়েছে ইতিহাস। শোনা যায় উত্তর প্রদেশের লখনউয়ের কাছে কাকোরি এলাকায় এই আমের চাষের সন্ধান মিলেছিল। এই আমের সুগন্ধ মন ছুঁয়ে নেয়। মিষ্টি ও সুগন্ধী এই আম উত্তর ভারত থেকে দক্ষিণ ভারতেও পৌঁছে যায়। বর্তমানে অন্ধ্রপ্রদেশে এই আমের রমরমা রয়েছে। জায়গা ভেদে একে দুসারি, দশেহারি, দুশেরিও বলা হয়। আমের গড় দৈর্ঘ্য ৯ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার, এর প্রান্ত ভোঁতা ও বাঁকা। এর গড়ন ডিম্বাকৃতি। আমের ত্বক মোমের মতো মসৃণ ও আধা-পুরু, মসৃণ, খোসাযুক্ত।