দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: অ্যালার্মের শব্দে হঠাৎ ঘুম ভেঙে ধড়মড় করে উঠে বসে পড়েন? তারপরই যেন মাথাটা হালকা হালকা ঘোরে, চোখে অন্ধকার দেখেন বা কিছুক্ষণ ভারসাম্য রাখতে অসুবিধা হয়? এমন অভিজ্ঞতা যদি মাঝেমধ্যে হয়, তবু চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু এই ঘটনা যদি নিয়মিত হতে থাকে, তবে সেটি হতে পারে শরীরের ভিতরে লুকিয়ে থাকা একটি গুরুতর সমস্যার লক্ষণ। চিকিৎসকরা বলছেন, এমন অস্বাভাবিক মাথা ঘোরার পেছনে থাকতে পারে একাধিক শারীরিক কারণ। সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা জানিয়েছে, সকালের দিকেই নাকি হার্ট অ্যাটাক বেশি হচ্ছে। প্রবীণেরা তো বটেই, কমবয়সিরাও এর শিকার।
‘আমেরিকান জার্নাল অফ হাইপারটেনশন’-এ একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে দিনকয়েক আগে। সেখানে গবেষকেরা লিখেছেন, বেশির ভাগ হার্ট অ্যাটাকই নাকি হয় ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১ টা বা ২ টোর মধ্যে। এর কারণ অনেক। কী কী সেই কারণ?
মাথা ঘোরার পিছনে সম্ভাব্য কারণগুলো কী?
১। লো ব্লাড প্রেসার :
হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে দাঁড়ালেই মাথা ঘোরে, চোখে অন্ধকার দেখা যায় — এটি লো প্রেসারের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। যারা দীর্ঘ সময় ধরে না খেয়ে থাকেন বা পানিশূন্যতায় ভোগেন, তাঁদের মধ্যেও এটি বেশি দেখা যায়।
২। ডিহাইড্রেশন (জলশূন্যতা):
ঘুমের সময় দীর্ঘ সময় জল না খাওয়ায় শরীরে জলঘাটতি তৈরি হয়। বিশেষ করে গ্রীষ্মে ঘামের মাধ্যমে জল বেশি বেরিয়ে যায়, যার ফলে সকালে উঠে মাথা ঘোরা বেশি হয়।
৩। রক্তে শর্করার ঘাটতি :
অনেক সময় ডায়াবেটিক রোগীরা যদি রাতে ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া না করেন, তাহলে সকালে উঠে তাঁদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে গিয়ে মাথা ঘোরে।
৪।কান সংক্রান্ত সমস্যা :
ভারসাম্য রক্ষা করে এমন সেন্সরি অঙ্গটি কানেই থাকে। যদি কান সংক্রান্ত কোনও সমস্যা (যেমন ভার্টিগো) থাকে, তাহলে ঘুম থেকে উঠে বা মাথা ঘোরালে সমস্যা হতে পারে।
৫। স্নায়বিক অসুস্থতা:
পারকিনসনস ডিজিজ বা স্নায়বিক ভারসাম্যহীনতা থাকলে মাথা ঘোরা একটি স্বাভাবিক লক্ষণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই এমন উপসর্গ উপেক্ষা করা উচিত নয়।
৬। ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
যাঁরা সেডেটিভ, ব্লাড প্রেসার বা ডিপ্রেশন সংক্রান্ত ওষুধ খান, তাঁদের মধ্যে মাথা ঘোরার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
চিকিৎসকদের পরামর্শ কী?
কলকাতার বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সৌরভ দে বলেন, “প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে মাথা ঘোরে মানেই সেটা স্বাভাবিক নয়। এটি যদি দু’-একদিন হয়, চিন্তার কিছু নেই। তবে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এই সমস্যা চলতে থাকলে রক্তচাপ, রক্তে চিনির মাত্রা, কানের ভারসাম্য বা হার্টের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা জরুরি।”
তাঁর মতে, অনেক সময় সকালে ঘুম থেকে উঠে হঠাৎ করে উঠে দাঁড়ানোর বদলে কিছুক্ষণ শুয়ে বসে তারপর ধীরে ধীরে ওঠা উচিত। তাতে শরীর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সময় পায় এবং মাথা ঘোরার সম্ভাবনা কমে।
কী করবেন এবং কী করবেন না?
করবেন:
.ঘুম থেকে উঠে সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়াবেন না
.প্রতিদিন পর্যাপ্ত জল পান করুন
.নিয়মিত ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
.নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম ও খাওয়ার অভ্যাস করুন
.যদি ডায়াবেটিস থাকে, রাতে খালি পেটে না ঘুমোন
করবেন না:
.একটানা দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকবেন না
.অতিরিক্ত ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল সেবন করবেন না
.উপসর্গ উপেক্ষা করবেন না
সকালবেলা ঘুম ভাঙার পরই মাথা ঘোরা কোনও নিখুঁত বা স্বাভাবিক ঘটনা নয়, বরং শরীরের দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ সিগন্যাল। প্রাথমিক অবস্থায় বিষয়টি ধরা গেলে এবং জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনলে সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। কিন্তু উপসর্গকে উপেক্ষা করলে তা ভবিষ্যতে বড় কোনও স্বাস্থ্য জটিলতার রূপ নিতে পারে। তাই সতর্ক থাকুন, নিজের শরীরের ভাষা বুঝতে শিখুন — এবং প্রয়োজনে সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।