দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতবর্ষে যেকয়টি কালীক্ষেত্র রয়েছে তার মধ্যে দক্ষিণেশ্বরের কালীবাড়ি বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ। এই মন্দির স্থাপন ও তা ভক্তদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মস্থান হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে এক গভীর ইতিহাস। আজকের প্রতিবেদনে রইল সেই অজানা ইতিহাসের কিছু অংশ। প্রতি বছর কয়েক লক্ষ মানুষ দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরে মা ভাবতারিণীর দর্শনে যান। বিশেষ করে কালীপুজোর দিনে বহু মানুষ সারা রাত জেগে পুজো দেখেন। সাধক রামকৃষ্ণের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সম্পর্ক জড়িয়ে আছে এই মন্দিরের। কিন্তু প্রথম থেকে এই মন্দিরে রামকৃষ্ণদেব কিন্তু ছিলেন না। ১৮৪৭ সালে ধনী বিধবা
জমিদারনি রানি রাসমণি দেবী অন্নপূর্ণাকে পূজার মানসে কাশীতে তীর্থযাত্রার আয়োজন করেন। ২৪টি নৌকায় আত্মীয়স্বজন, দাসদাসী ও রসদ নিয়ে তিনি রওয়ানা হন। কিংবদন্তি অনুসারে যাত্রার পূর্বরাত্রে রানি দেবী কালীর স্বপ্নদর্শন পান। দেবী তাকে বলেন,"কাশী যাওয়ার প্রয়োজন নেই। গঙ্গাতীরেই একটি নয়নাভিরাম মন্দিরে আমার মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পূজা কর। সেই মূর্তিতে আবির্ভূত হয়েই আমি পূজা গ্রহণ করব।”এই স্বপ্নের পর রানি অবিলম্বে গঙ্গাতীরে জমি ক্রয় করেন এবং মন্দির নির্মাণকাজ শুরু করেন। ১৮৪৭ সালে এই বিরাট মন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু হয়, শেষ হয় ১৮৫৫ সালে। মন্দিরের ২০ একরের প্লটটি জন হেস্টি নামে এক ইংরেজের কাছ থেকে কেনা হয়।
লোকমুখে জায়গাটি পরিচিত ছিল সাহেবান বাগিচা নামে। এর একটি অংশ ছিল কচ্ছপাকার মুসলমান গোরস্থান। তাই তন্ত্রমতে স্থানটি শক্তি উপাসনার জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়। আটবছরে নয় লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই মন্দির নির্মিত হয়। ১৮৫৫ সালের ৩১ মে স্নানযাত্রার দিন মহাসমারোহে মন্দিরে মূর্তিপ্রতিষ্ঠা করা হয়। পূর্বে মন্দিরের আরাধ্যাকে মাতা ভবতারিনি কালিকা নামে অভিহিত করা হয়েছিল। রামকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রধান পুরোহিত পদে আসীন হন, তাঁর ছোটো ভাই গদাধর বা গদাই (পরবর্তীকালে রামকৃষ্ণ পরমহংস) তার সহযোগী হন। পরে তার ভাগ্নে হৃদয়ও তাকে সহায়তা করতে থাকেন। পরের বছরই রামকুমার দেহত্যাগ করেন। পরবর্তীতে শ্রীরামকৃষ্ণ মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের স্থানে স্থলাভিষিক্ত হন। তার সহধর্মিনী সারদা দেবী মন্দির চত্বরের বাইরে নহবতখানায় অবস্থান করতে থাকেন। এই নহবতখানাই এখন সারদা দেবীর মন্দির। এই সময় থেকে ১৮৮৬ পর্যন্ত প্রায় তিরিশ বছর শ্রীরামকৃষ্ণ এই মন্দিরে অবস্থান করেন।