দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ- বাংলাদেশে জাতীয় সঙ্গীত বদলের দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। বিতর্ক আছড়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে রীতিমত খলনায়ক বানানোর চেষ্টা হচ্ছে। অনেকের মন্তব্যে বিশ্বকবির প্রতি অশ্রদ্ধা, কারও মতে ‘রাজাকার’ (বিশ্বাসঘাতক)।
ঢাকার মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মী ফেরদৌস আজম ডঃ সলিমুল্লাহ খানের কথা উল্লেখ করে লিখেছেন, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা না করার জন্য ইংরেজদের নিকট মোট ১৭ বার স্মারকলিপি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সত্য ইতিহাস জানুন।” সকাল ৯টা পর্যন্ত ৩০৬টি মন্তব্য এসেছে। এর সিংহভাগেই এসেছে একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের নেটনাগরিকের প্রতিক্রিয়া, প্রবল রবীন্দ্র-বিরোধিতা।
ওমর ফারুক লিখেছেন, "এর লেখা জাতীয় সংগীত আর গাইবোনা সবাই আওয়াজ তুলুন তাহলেই বাতিল হবে ইনশাআল্লাহ।” ওসমান গনি লিখেছেন, "এটা সত্য। রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশ স্বাধীনতা বিরুদ্ধে ছিলেন।”
কাউসার লিখেছেন, "রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ব্রিটিশদের পক্ষে, বঙ্গভঙ্গের সময় ভারতের পক্ষে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ছিলেন। এমন লোক যদি আদর্শ হন, জাতীয় সংগীতের পরিপূর্ণ আবশ্যিকতা পূরণ করেন, সম্পূর্ণ সমালোচনা মুক্ত একটি সংগীত লেখেন, তাও তো সেটা জাতীয় সংগীতের উপযুক্ত নয়! ভুলভাল বিশ্বাসে ভরপুর, প্রেক্ষাপটের ভিন্নতা, নানান বিতর্ক, সমালোচনায় জর্জরিত, বিদেশি কবির লেখা একটি সংগীত কিভাবে জাতীয় সংগীত হয়? তারপরও এক শ্রেণীর প্রগতিশীল সেকুলার, সুশীল, চেতনাবাজ এলিট এসে বলবে দেশটাকে পাকিস্তান বানিয়ে দিচ্ছে! আজ জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করছে, কাল পতাকা পরিবর্তন করবে পরশু দেশের নামটাই পরিবর্তন করবে, পরের দিন গোটা দেশটাকে পাকিস্তান ঘোষণা করে দেবে।”
মহম্মদ আবুবকর লিখেছেন, "অধিকাংশ জমিদারই ব্রিটিশদের পক্ষে ছিল, ইংরেজদের গোলামী করে সাধারণ জনগণের উপর অত্যাচার করতো তারা, রবীন্দ্রনাথ তাদেরই একজন।”
আল মাসুদ লিখেছেন, "আমার সোনার বাংলা— বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত গানটি ১৯০৫ সালে রচিত হয়। বাংলাদেশের জন্ম হয় ১৯৭১ সালে।
★রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৮০ বছর বয়সে ৭ই আগস্ট ১৯৪১ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
★যিনি বাংলাদেশের নামই শোনেননি, তাঁর লেখা সঙ্গীত কিভাবে আমাদের জাতীয় সংগীত হলো?
যেই সংগীতে 'বাংলাদেশ' শব্দটি পর্যন্ত নেই,
সেটি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হয় কী করে..?
যেই সংগীত তৎকালীন পূর্ব বাংলার স্বার্থের বিপরীতে রচিত,তা স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হয় কিভাবে?
যেই সংগীতে মানুষের ঘুম আসে,সেটি মানুষকে ঘুম থেকে জাগাবে কী করে?
যে সংগীতে তারুণ্যের টগবগে খুন উদ্দীপ্ত হয় না সেটা দেশের জাতীয় সংগীত হয় কিভাবে ?
সময় এসেছে আওয়াজ তোলার প্রত্যেকটি সেক্টর থেকে আওয়াজ তুলুন।
জাতীয় সংগীত পরিবর্তন চাই।”
মহম্মদ বেলাল লিখেছেন, "আর আমরা কত বড় হতভাগা জাতি তার লেখা গান আমাদের জাতীয় সংগীত!” আব্দুল কাদির লিখেছেন, "যেভাবে ১৫ বছর ফ্যাসিবাদের শাসনে আমাদের উপর অনেক কিছুই চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, ঠিক সেভাবেই ’৭১ এ এই বালেন্দ্রনাথের কবিতাকে জাতীয় সংগীত বানানো হয়েছে। আজকে যেভাবে দেবদাস চক্রবর্তী (শেখ মুজিব) কে মানুষ বয়কট করছে কালকে দেখবেন বালেন্দ্রনাথের নাম গন্ধও নাই।”
শাহরিয়ার মহম্মদ সোহেল লিখেছেন, "ওই আসল রাজাকার!” রাজিনা আখতার লিখেছেন, "এতদিন এই ইতিহাস কেউ জানত না।তাই রবী ঠাকুরের লেখা গান জাতীয় সংগীত হিসাবে থাকবে না বাদ যাবে সেটা ভাবার সময় হয়েছে।”
মহম্মদ সাগর লিখেছেন, "আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি সঙ্গীতটি রবি ঠাকুর লিখেছিলেন বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করে। বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা মানে এক কথায় বাংলার উন্নতি-অগ্রগতির বিরোধিতা, বাংলাদেশের বিরোধিতা। আবার এই সঙ্গীতের স্রষ্টা এমন একজন ব্যক্তি যার পুরো জীবনটা কেটেছে বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী রাজনীতি করে করে। এ অঞ্চলের মানুষ আবার না জাতে উঠে যায়, এই ভয়ে যিনি ঢাকায় একটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠারও ছিলেন ঘোর বিরোধী। যার লেখা সঙ্গীত, দেশের স্বার্থের বিরোধীতা করে, তার লেখা সঙ্গীত বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য না।” একটি বিদেশি বাংলা সম্প্রচারের সূত্রের উল্লেখ করে মহম্মদ সাগর লিখেছেন, “জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের ইতিহাস রয়েছে যেসব দেশে— অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, কানাডা, নেপাল, আফগানিস্তান, রুয়ান্ডা, দক্ষিণ আফ্রিকা, রাশিয়া।”
বিপরীতে কৌশিক দেবনাথ কবিগুরু সম্পর্কে আরোপিত অভিযোগগুলো প্রমাণ করার দাবি জানিয়েছেন। অনিন্দ্যকান্তি আচার্য প্রতিবাদীদের লিখেছেন, "আহা কি জ্ঞান!” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা না করার জন্য ইংরেজদের নিকট মোট ১৭ বার স্মারকলিপি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর— এই অভিযোগ সম্পর্কে জুয়েল বৈদ্য লিখেছেন, "মাত্র ১৭ বার। আমিতো শুনেছিলাম ২৭ বার।”
প্রণব ঘোষ লিখেছেন, "এইমাত্র খবর পাওয়া গেলো মিথ্যা কথাতে বাংলাদেশকে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।” দিব্যেন্দু কয়াল লিখেছেন, "জাতীয় সংগীত পরিবর্তন না করে,জনগনের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য কাজের কথা বলুন।”