দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল অনেকগুলি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে। কাগজে-কলমে সেগুলির অস্তিত্ব এখনও আছে। কিন্তু বাস্তব বলছে অন্য কথা। বাংলাদেশে ‘অনুমোদন প্রাপ্ত’ অনেকগুলি স্কুলের কার্যত কোনও অস্তিত্বই নেই। অন্য কারোর নয়, বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্যেই উঠে এসেছে এই চিত্র।
কতগুলি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান?
ব্যানবেইসের তথ্য অনুসারে, এখন বাংলাদেশে মাধ্যমিক স্তরের স্কুল আছে আছে ১৮ হাজারের বেশি। ‘স্কুল অ্যান্ড কলেজ’ আছে প্রায় দেড় হাজার। কলেজ আছে ৩৩৪১ টি, মাদ্রাসা ৯২৫৯ টি, কারিগরি প্রতিষ্ঠান ৫৩৯৫ টি এবং বিশ্ববিদ্যালয় আছে ১৭১টি। এই সঙ্গে ব্যানবেইসের তথ্য অনুসারে, শিক্ষা বিভাগের অনুমোদন থাকা (এডুকেশনাল ইনস্টিটিউট আইডেনটিফিকেশন নম্বর) ২৬৯৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম গত কয়েক বছরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যেগুলিতে এখন পড়াশোনা হচ্ছে না সেগুলি মূলত বেসরকারি স্কুল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
অনুমোদন বাতিল হয়নি
শিক্ষাদান বন্ধ থাকলেও এখনও সেগুলির ইআইআইএন নম্বর আছে। আধিকারিকরা জানান, এখনও ওই স্কুলগুলির শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন বাতিল হয়নি। তাই এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে কাগজপত্রে এখনও বন্ধের তালিকাভুক্ত করা হয়নি। ব্যানবেইসের আধিকারিকরা জানান, ‘বাংলাদেশ শিক্ষা পরিসংখ্যান’ প্রতিবেদনের জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে এই বিষয়টি জানতে পেরেছেন তাঁরা।
ওই আধিকারিক জানান, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্যালয়। গত কয়েক বছরে ১২৭৪টি স্কুলে শিক্ষাদান কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে। এই তালিকায় অনেকগুলি কলেজও আছে।
স্কুলের জায়গায় বহুতল
যে স্কুলগুলিকে অনুমোদন দেওয়া হয় সেগুলির মধ্যে আছ ওয়েস্টার্ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ঢাকার কাঁটাবনে ২০০৬ সালে ওই বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল। তবে ব্যানবেইস-এর তথ্য বলছে, বাস্তবে এখন এই প্রতিষ্ঠানের কোনও শিক্ষা কার্যক্রম নেই। যেখানে স্কুল করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল সেখানে এখন একটি আবাসন কোম্পানি বহুতলবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করছে।
২০২১ থেকেই সেই কাজ চলছে বলেও জানতে পেরেছে ব্যানবেইস। যদিও ওই প্রতিষ্ঠানের তরফে তানভীর হক দাবি করেন, করোনার সময়ে স্কুল বন্ধ হয়। সেখানে পড়াশোনার বিষয়টি আপাতত ‘স্থগিত’ আছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ঢাকার কলাবাগানের লেক সার্কাস এলাকার একটি ঠিকানায় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকার তথ্য থাকলেও সেখানে গিয়ে সেটিরও অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
কেন এই অবস্থা?
শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই জানান, নানা রকম ‘ফন্দিফিকির’ করে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদন পেয়ে যায়। বেশ কিছু লাভের আশায় ওই স্কুল করা হয়। কিন্তু না হওয়ার পরে অনেকেই হাল ছেড়ে দেন। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়াউল হক বলেন, 'অপ্রয়োজনীয়ভাবেও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। কিন্তু সেগুলিতে মানসম্মত শিক্ষক, পরিকাঠামো থাকে না। ফলে একটা সময় পরে ওই প্রতিষ্ঠানগুলি আর চলে না।'
তাঁদের মতে, শিক্ষা বোর্ডগুলির উচিত এই ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বাতিল করে দেওয়া।