কলকাতা, ১৮ নভেম্বর : মিলখা সিং, ফ্লাইং শিখ। বিশ্ব অ্যাথলেটিক্সে তিনি এই নামেই পরিচিত। কিন্তু এমন নামকরণের পেছনে প্রধান কারণটা অনেকেরই অজানা। মিলখা সিং জন্মগ্রহণ করেছিলেন অবিভক্ত ভারতের মোজাফফরপুর জেলার গোবিন্দপুরম গ্রামে, ২০ নভেম্বর। দেশভাগের সময় তিনি চোখের সামনে আগুনে পুড়ে মরতে দেখেছিলেন বাবা-মাকে। তারপর নিজের প্রাণ বাঁচাতে ভয়ে ট্রেনের আসনের নিচে লুকিয়ে পালিয়ে এসেছিলেন পাকিস্তানের মুলতান থেকে। তারপর থেকেই পাকিস্তান নামটা শুনলেই তার মনে ভীতির সঞ্চার হতো।
তাই ট্রাক এন্ড ফিল্ড ইভেন্টেও যাওয়ার কথা হলেই তিনি এড়িয়ে যেতেন। ১৯৬০-এর রোম অলিম্পিকের পদক হাতছাড়া হওয়ার পরেও জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি মিলখা সিং-এর। এমনই এক সময়ে ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান থেকে একটি ট্রাক এন্ড ফিল্ড ইভেন্টের আমন্ত্রণ এলো ভারত সরকারের কাছে। মিলখাকে ছাড়া দল পাঠানোর মানে হয় না। আর শৈশবের সেই সব দুর্বিষহ স্মৃতির কথা মনে করে মিলখাও যেতে চান নি পাকিস্তান। শেষ পর্যন্ত ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জহরলাল নেহেরুর হস্তক্ষেপে মিলখা সিং পাকিস্তানে গিয়েছিলেনl সেই সময় পাকিস্তানের বিখ্যাত স্পিন্টার ছিলেন আব্দুল খালেকl খালেক বনাম মিলখার দৌড়ের লড়াই দেখতে স্টেডিয়াম উপচে পড়েছিল। মিলখার নিজের স্মৃতিচারণায়, "লাহোর স্টেডিয়ামের আশি হাজার দর্শক সেদিন হয়েছিল। তার মধ্যে অন্তত কুড়ি হাজার মহিলা। সবাই মিলখার দৌড় দেখতে চান ।"
খালেকের সঙ্গে ডুয়েলে নিজের প্রিয় ইভেন্ট ৪০০ মিটারে অনায়াসে জিতলেন মিলখা। কিন্তু ১০০ মিটারে সুবিধে করতে পারলেন না। হেরে বসলেন খালেকের কাছে। শেষ ইভেন্ট ২০০ মিটার ফাইনাল। আবারও মুখোমুখি মিলখা ও খালেক। প্রথম ১০০ মিটার খালেক এগিয়েছিলেন। শেষ ল্যাপে এসে বাজি মেরে দিলেন মিলখা। লাহোর স্টেডিয়ামে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন তৎকালীন পাক প্রেসিডেন্ট জেনারেল আয়ুব খান। মিলখার প্রশংসা করে বলেন, " মিলখা পাকিস্তানের এসে দৌড়ায়নি। পাকিস্তানে উড়ে বেড়িয়েছেন। " পাক প্রেসিডেন্টের মুখের কথায় থেকেই সেই থেকে মিলখা সিং হলেন ফ্লাইং শিখ।