Tripura

1 year ago

Amrit Bharat : অমৃত ভারত প্রকল্পে যুক্ত হল ধর্মনগর রেল স্টেশন, ৬ আগস্ট ভার্চুয়ালী সূচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী

Amrit Bharat Railway Station (File Picture)
Amrit Bharat Railway Station (File Picture)

 

ধর্মনগর, ৪ আগস্ট : অমৃত ভারত রেলওয়ে স্টেশন। কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্পের আওতায় এল এবার ত্রিপুরার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ধর্মনগর। ভারতের আরও বিভিন্ন রাজ্যে আগামী ৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে যে ভার্চুয়াল অমৃত ভারত স্টেশনগুলোর উন্নয়নের সূচনা হতে যাচ্ছে, তার মধ্যে ত্রিপুরার লামডিং-সাব্রুম লাইনের এই ধর্মনগর স্টেশনটিও যুক্ত হচ্ছে। এতে অনেকটাই ধর্মনগর স্টেশনটির রূপ ও আদলটাই এবার পাল্টে যাবে তার আধুনিক উন্নয়নের ছোঁয়া পেয়ে। অমৃত ভারত স্টেশন প্রকল্পে ধর্মনগরে খরচ হবে ৩২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা। ত্রিপুরায় এ ধরনের আরও দুটি স্টেশনও এই নতুন প্রকল্পের আওতায় এসেছে।

ত্রিপুরায় প্রথম রেলের যে হুইসেলটি বেঁজেছিল,সেটি এই ধর্মনগরে। সে এক ইতিহাস। মিটার গেজ লাইনের ওপর দিয়ে কয়লার কালো ধোঁয়া ছড়াতে ছড়াতে, হেলতে-দুলতে যখন আসামের কলকলিঘাট থেকে ত্রিপুরার চুড়াইবাড়ি হয়ে যখন প্রথম রেল ঢুকল শহর ধর্মনগরে তখন ১৯৬৪ সাল। যা বর্তমান প্রজন্মের কাছে এক ইতিহাস। এমন একসময় গেছে এই ধর্মনগর স্টেশনে রেল ইঞ্জিনের কয়লার ধোঁয়ায় স্টেশনে দাঁড়ানো যেতনা। আর ইঞ্জিন বক্সে বিশাল আগুনের গোলা একটা ঘর। যেখানে শ্রমিকরা খানিকটা পরপরই বেলচি দিয়ে ভেতরে কয়লা ফেলছে। আর সেই সঙ্গে মিটার গেজের রেলও চলছে হেলতে-দুলতে। সে যে কি আনন্দ, বোঝানো মুশকিল।

এই রেল নিয়ে অর্থাৎ পরবর্তীতে এক সময় ত্রিপুরায় কংগ্রেস ও বাম জমানায় অনেক মিছিল মিটিং, দাবী ও আন্দোলন হয়েছে। তবে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই ভারতে ১৯৭৭ সালে দিল্লিতে জনতা সরকার গঠন হবার পরে গোটা উত্তর পূর্বাঞ্চলের চিত্রটা ধীরে ধীরে পাল্টাতে শুরু করে। জর্জ ফার্নান্ডেজের হাত ধরে একসময়ে এই ধর্মনগর থেকে রেল সম্প্রসারিত হয়ে মিটার গেজ রেল পৌছল কুমারঘাট অবধি। এতেও অনেক চেষ্টাচাতুরির পরে। এরপরে দিল্লিতে অনেক সরকার আসা যাওয়া করল। ধীরে ধীরে ২০০৮ সালে এই রেল সরাসরি যুক্ত হল রাজধানী আগরতলার সাথে। দিল্লিতে তখন কংগ্রেসের মনমোহন সরকার চলেছে। রাজ্যে চলেছে বাম সরকার। ২০১৪ সালে দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার প্রতিষ্ঠার পরে রেল মানচিত্রে ত্রিপুরার ভাগ্য বলা যায় খুলে গেল।

২০১৪ তে দিল্লিতে ক্ষমতায় আসে বিজেপি সরকার। আর ২০১৬ সালে বদরপুর থেকে সরাসরি রাজধানী আগরতলা অবধি ব্রডগেজ লাইনের মধ্য দিয়ে যুক্ত হয়ে গেল ত্রিপুরার রেল লাইন। ঐ সময়ে প্রায় এগারো মাস ত্রিপুরায় রেল চলাচল বন্ধ ছিল।তারপর তো পুরোটাই এক অপার আনন্দের ইতিহাস। এবার রেলের মধ্য দিয়ে ত্রিপুরাও দেশের রাজধানী দিল্লির সাথে হয়ে গেল প্রায় প্রতিদিনকার যোগাযোগ যোগসূত্র। এখন আগরতলা থেকে সরাসরি দিল্লি, দেওঘর, ভূপাল, বেঙ্গালুরু, গুয়াহাটি, কলকাতা, মনিপুর রেল চলাচল করছে এই ধর্মনগরের বুক দিয়ে। এর পুরো কৃতিত্ব দিতে হয় বর্তমান মোদী নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারকে। এর জন্য কিন্তু লড়াই আন্দোলন করতে হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকারই তার দায়বদ্ধতাকে পাথেয় করে কোথায় কি প্রয়োজন-তা নির্ধারণ করে তার মঞ্জুরী দিচ্ছে। ত্রিপুরায় বিজেপি সরকারের আমলে রেল সম্প্রসারণে এখন পর্যন্ত যত উন্নয়ন ও সুযোগ ঘটেছে,তার জন্য কিন্তু রাস্তায় বেড়িয়ে কাউকে লড়াই আন্দোলন করতে হয়নি। মানুষের প্রয়োজনের চাহিদাকে মাথায় রেখেই দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকার তার কাজ করছে। ঠিক একই রকমভাবে এবার ত্রিপুরার তিনটি স্টেশন সুযোগ পাচ্ছে-অমৃত ভারত স্টেশনের। এরমাঝে রয়েছে ত্রিপুরার প্রাচীন ও প্রথম রেল স্টেশন ধর্মনগর।

এ ক্ষেত্রে শহর ধর্মনগর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তথা ত্রিপুরা বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেনের আন্তরিক প্রয়াস কিন্তু রয়েছে। বিশ্ববন্ধু সেন যখন বিরোধী দলে ছিলেন তখন থেকেই তিনি বিভিন্ন বিষয়ে ধর্মনগর রেল স্টেশনের উন্নয়নে রেল দফতরে চিঠি চালাচালি করা, প্রয়োজনে রেল কর্মকর্তাদের সাথে সময়ে সময়ে কথাবার্তা বলা, ডেপুটেশন দেওয়া-এসব তিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে অফুরন্ত করেছেন।বলা যায়-তার এই আন্তরিক প্রয়াস ও সেই সঙ্গে ভারতীয় রেলের উপযুক্ত ক্ষেত্রের চিন্তাধারা মাথায় রেখে এই ধর্মনগর স্টেশনে আজ অমৃত ভারত স্টেশন প্রকল্পের আওতায় এসেছে।

এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এই স্টেশনের আদলটাই এখন পাল্টে যাবে। ওভারব্রিজ থেকে এক্সেলেটার সহ অনেক সুযোগ সুবিধা এখন বেড়ে যাবে। বাড়বে প্ল্যাটফরমের সংখ্যাও। স্টেশন সৌন্দর্যায়নেও আসবে এক নতুন রূপ। এই রূপেরই প্রথম ধাপের কর্মসূচি হতে চলেছে ৬ আগস্ট ভার্চুয়াল উদ্ধোধনের মাধ্যমে। ইতিমধ্যে ধর্মনগর রেল স্টেশন চত্বরে উদ্ধোধনের জন্য চলেছে মঞ্চ বাঁধাইয়ের ফাইনাল টাচ। রেল দফতরের কর্মকর্তারা অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেনের সাথে একপ্রস্হ বৈঠক সেরে নিয়েছেন। অপরদিকে গোটা ধর্মনগরবাসী প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ঐদিনে প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল উদ্ধোধনের সাক্ষী হতে।

You might also like!