দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক :রান্না মানে শুধু তেল-মশলার সঙ্গে শাকসব্জি নাড়াচাড়া করা নয়। রান্নাকে বলা হয় রন্ধনশিল্প, আর রাঁধুনি হলেন সেই শিল্পী।
একজন চিত্র শিল্পী যেমন সাদা ক্যানভাসকে তাঁর কল্পনা আর রঙ দিয়ে সাজিয়ে তোলেন বা এক জন সংগীতকার যেমন সুর আর কথার জল বুনে গান বাঁধেন, ঠিক তেমনই একজন রাঁধুনি বা রন্ধন শিল্পী খাবারের স্বাদ, গন্ধ আর রঙ নিয়ে খেলা করেন তাঁর পছন্দের সরঞ্জামে। কিন্তু মুশকিল হল রাঁধুনিরও অনেক রকমফের হয়। কেউ পাকা হাতের রাঁধুনি তো কেউ কাঁচা। আবার কেউ ইউটিউব নির্ভর। কেউ বা ভুল করতে করতে শিখছেন।
রাঁধুনি কাঁচা হোন বা মাঝারি মানের, নিরামিষ বা শাক-সব্জি রান্না করার সময় কয়েকটি সাধারণ ভুল যদি এড়িয়ে চলতে পারেন, তবে পাকা রাঁধুনিদের থেকে তাঁদের আলাদা করে, সাধ্যি কার!
সব্জি রান্নায় কোন কোন ভুল করবেন না?
১. ঠান্ডা তেলে ফোড়ন
রান্নায় ফোড়নের গুরুত্ব কী, তা পাকা রাঁধুনিরা জানেন। কয়েকটি গোটা মশলা রান্নার তেলে পড়লে বদলে দিতে পারে স্বাদ। বেঁধে দিতে পারে ফ্লেভার অর্থাৎ স্বাদ এবং গন্ধের তার। কিন্তু ফোড়ন যদি ভুল সময়ে রান্নায় পরে তবে মুশকিল। কাঙ্ক্ষিত স্বাদ মিলবে না কিছুতেই। আর তার জন্য কড়াইয়ে ফোড়ন দিতে হবে তেল ভাল ভাবে গরম হওয়ার পরে। ঠাণ্ডা তেলে দেওয়া যাবে না। আবার একই সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত তাপে ফোড়নের গোটা মশলা যেন পুড়ে না যায়।
২. তেল বাছাই
সবজি রান্নার জন্য কোন তেল ব্যবহার করছেন তার উপরেও নির্ভর করবে রান্নার স্বাদ। এ দেশের রান্নাঘরে বেশি ব্যবহার হয় সর্ষের তেল, সূর্যমুখী বা চিনাবাদামের তেল। কারণ, এই তেলের পুষ্টিগুণ অতিরিক্ত তাপে রান্না করার সময়ও নষ্ট হয় না। পাশাপাশি এই তেল রান্না করা সব্জির পুষ্টিগুণ ধরে রাখে। তবে এক বার গরম করার পরে একই তেল বারবার গরম না করাই ভাল এতে স্বাদ তো নষ্ট হয়ই। তেলের মাধ্যমে নানা ক্ষতিকারক উপাদান শরীরে প্রবেশ করে।
৩. বেশি রান্না করে ফেলা
শাকসবজি চড়া আঁচে বেশিক্ষণ ধরে রান্না করলে, রান্নায় ভিটামিন এবং খনিজের মাত্রা কমে যায়। এতে খাবারের স্বাভাবিক স্বাদও নষ্ট হয়ে যায়। বেশি রান্না করলে সবজি নরম এবং নরম হয়ে যেতে পারে। পুষ্টিগুণ এবং গঠন ধরে রাখতে, কম আঁচে সীমিত সময়ের জন্য সবজি রান্না করুন এবং বেশিক্ষণ ঢেকে রাখা এড়িয়ে চলুন।
৪. ঢেকে রান্না করা
সব সব্জির জন্য সব রকমের রন্ধন প্রণালী উপযুক্ত নয়। ঢেকে রাখলে রান্না দ্রুত হয়, এটা যেমন ঠিক, তেমনই এ-ও ঠিক যে ঢেকে রান্না করলে সব্জি চট করে নরম হয়ে যায়। তাই সব্জি নরম করতে চাইলে ঢেকে রান্না করুন কিন্তু সব্জিতে মুচমুচে ভাব আনতে হলে ঢাকা দেবেন না।
৫. নুন দেওয়ার সঠিক সময়
সব্জি রান্নায় কখন নুন দিচ্ছেন তা গুরুত্বপূর্ন।
রান্নার শুরুর দিকে নুন দিলে সব্জি জল ছেড়ে
নরম হয়ে যাবে। আবার খুব দেরিতে নুন দিলে তা রান্নায় ভাল ভাবে মিশবে না। তাই রান্নায় নুন দেওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হল যখন সবজি অর্ধেক সেদ্ধ হয়ে যায়।
৬. হাতা খুন্তি দিয়ে অতিরিক্ত নাড়াচাড়া
ক্রমাগত নাড়লে সব্জির আকার-আকৃতি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সব্জি নরম হয়ে ঘেঁটেও যেতে পারে। তাতে স্বাদ খারাপ হয়ে যাবে। কারণ প্রতিটা সব্জির নিজস্ব আকার আকৃতির সঙ্গেও স্বাদের সম্পর্ক আছে। তাই আঁচ কমিয়ে হালকা নাড়াচাড়া করে রান্না করুন। যাতে সবজিগুলো ভেঙে বা ঘেঁটে না যায়।
৭. মশলা বাছাই
সব মশলা সব তরকারির জন্য উপযুক্ত নয়। এমন অনেক রান্না আছে যাতে হলুদ পড়ে না। আবার কোনও ব্যঞ্জন হলুদ ছাড়া তৈরিই হবে না। একই ভাবে, কোথাও জিরে গুঁড়ো বেশি পড়ে কোথাও ধনে গুঁড়ো। কোনও রান্নায় গোটা মশলা যথেষ্ট, কোথাও গুঁড়ো মশলা। প্রতিটি রান্নার মশলার ফর্মুলা আলাদা। তা বুঝে রান্নায় মশলা ব্যবহার করতে হবে।