Country

11 hours ago

Yogi Adityanath: বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষদের জমি উপহার? প্রশ্নের মুখে যোগী প্রশাসন

Uttar Pradesh Chief Minister Yogi Adityanath
Uttar Pradesh Chief Minister Yogi Adityanath

 

দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: যখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষ করে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে ‘বাংলা ভাষা’ বা ‘বাঙালি পরিচয়’ সন্দেহের চোখে সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে, তখন যেন সব হিসেব উল্টে দিল যোগী আদিত্যনাথের সরকার। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সোমবার এক উচ্চপর্যায়ের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে ঘোষণা করলেন— আর উদ্বাস্তুর তকমা নয়, পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশ থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে উত্তরপ্রদেশে আসা বাঙালিরা এবার জমির মালিকানা পাবেন। শুধু তাই নয়, তাঁদের সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার জন্য সমস্ত নাগরিক অধিকারও নিশ্চিত করা হবে বলে জানাল উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন।  এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন উঠেছে। বাংলায় যখন অনুপ্রবেশকারী ইস্যুকে সামনে রেখে জনমতকে বিভক্ত করার চেষ্টায় সরব বিজেপির একাংশ, তখন উত্তরপ্রদেশ থেকে ভিন্ন সুর উঠছে কেন? উত্তর কোথাও যেন লুকিয়ে রয়েছে যোগী সরকারের এই হঠাৎ মানবিক অবস্থান বদলের মধ্যে।

যাঁরা ১৯৫০ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে এসে উত্তরপ্রদেশের মাটিতে ঠাঁই নিয়েছেন, বিশেষ করে রাজ্যের পূর্বাঞ্চলের চারটি জেলায় অর্থাৎ উত্তরপ্রদেশের রামপুর, বিজনৌর, লখিমপুর খেড়ি, পিলভিটে-র বসবাসকারীদের —দীর্ঘদিন ধরে কোনও স্বীকৃতি ছিল না। হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত পরিবারকে এই জেলায় পুনর্বাসিত করা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে তাদের ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখার পর কৃষি জমি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ১০ হাজারের বেশি পরিবার এখনও জমির আইনি মালিকানা পায়নি। একইভাবে আবার পশ্চিমবঙ্গের বহু বাসিন্দা কর্মসূত্রে বহুকাল ধরে উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাস করে। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কই নেই। কিন্তু উভয় পক্ষকেই বিভিন্ন সময় একই সুরে হেনস্তা করা হয়েছে। প্রসঙ্গত বলা ভালো, জমি ছিল বটে, কিন্তু কোনো দলিল বা পাট্টা ছিল না। তাঁরা ছিলেন ‘দেখেও না দেখা’ পরবাসী। এবার তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে সরকারি দলিল, জমির পাট্টা। যা তাঁদের নাগরিকতার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে দেবে।

যোগী আদিত্যনাথ  বলেন, “এত বছর ধরে যারা কষ্টের জীবন যাপন করেছেন, তাঁদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। এবার সেই ভুল শুধরে তাঁদের সম্মানের জীবন উপহার দেবে উত্তরপ্রদেশ সরকার।” এই বিষয়টিকে কেবল জমি হস্তান্তরের বিষয় নয় বলে উল্লেখ করে যোগী আদিত্যনাথ আরও বলেন, "ভারতে আশ্রয় নেওয়া এবং ন্যায্য পুনর্বাসনের জন্য অপেক্ষা করা হাজার হাজার পরিবারের দশকব্যাপী সংগ্রামকে সম্মান জানানোর এটি একটি সুযোগ। এই পরিবারগুলিকে সংবেদনশীলতা এবং মর্যাদা উভয়ের সাথেই আচরণ করতে হবে। এটি সরকারের নৈতিক দায়িত্ব।" অপরদিকে পিলিভিট জেলার পুরানপুর তহসিলের রামনগর গ্রামের বাসিন্দারা পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলিকে বৈধ জমির মালিকানা দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। 

উত্তরপ্রদেশে বাঙালি উদ্বাস্তুর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়েছে। অর্থাৎ ভোট ব্যাঙ্কে বিশেষ প্রভাব না ফেলেই সরকার মানবিক মুখ দেখাতে পারছে। এর ফলে জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপির বিরুদ্ধে উঠতে থাকা ‘বাঙালিবিদ্বেষী’ তকমা কিছুটা হলেও ধুয়ে ফেলা সম্ভব বলে ধারণা করছে একটি মহল। আবার অন্যদিকে, বিরোধী মহলের বক্তব্য, বাংলায় এনআরসি-সিএএ নিয়ে জনরোষ বাড়ছে বুঝেই বিজেপি এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যাতে তারা ‘অসহানুভূতিহীন’ না দেখায়। এটা বিজেপির কৌশলগত ‘ইমেজ শিফট’। এমনকি আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে এটি হতে পারে একধরনের ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ও। 

বর্তমানে যখন অসম, কর্ণাটক, গুজরাট বা দিল্লির মতো রাজ্যগুলিতে বাঙালিদের বাংলাদেশি বলে হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে, তখন উত্তরপ্রদেশের এই উল্টো সুর নিঃসন্দেহে প্রশ্ন তো তোলে, আলোচনাও তৈরি করে— আদৌ কি মানবিকতা, নাকি তাৎক্ষণিক রাজনৈতিক লাভের অঙ্ক কষে রচিত এক ‘রাজনৈতিক সফট পাওয়ার’ কৌশল?

You might also like!