দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ বিশ্বকর্মা পুজোয় ঘুড়ি ওড়াবার একটি চল প্রচলিত আছে। যদিও অনেক আগে বিশ্বকর্মা পুজোয় ঘুড়ি ওড়ানো হত না। কীভাবে এই প্রথার শুরু হল জানেন কী?
১৮৫৬ সালে লখনৌ শহরের রাজত্ব খুইয়ে, ইংরেজদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ওয়াজেদ আলি শাহ এসে পড়েছিলেন কলকাতায়। কলকাতার বিচালিঘাটে এসে নামেন তিনি। এর পরে তিনি মেটিয়াব্রুজ এলাকায় গড়ে তোলেন তাঁর নবাববাড়ি। লখনৌর স্মৃতি, ঠাঁটবাটও ছাড়তে পারলেন না। নবাবি খাবার থেকে, সংস্কৃতি হয়ে বিরিয়ানি, বাইজি, পাখির লড়াই, এমনকি ঘুড়ির লড়াই পাড়ি দিল কলকাতায়। এগুলো শুধু এল যে তাই নয়, কলকাতা এগুলোকে রীতিমত আপন করে নিল।দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বহু বছর ধরেই ঘুড়ি ওড়ানোর চল থাকলেও কিন্তু ওয়াজেদ আলি শাহ কলকাতায় এসে পৌঁছোনোর আগে এখানে সেভাবে ঘুড়ি ওড়ানোর চল ছিল না।সেভাবে বিচার করে দেখলে ওয়াজেদ আলি শাহের হাত ধরেই বঙ্গের আকাশে জায়গা করে নিল রঙিন ঘুড়ির দল। সেই সময়ে কলকাতার আকাশে বিভিন্ন ধরনের ঘুড়ির দেখা মিলত। কানকাওয়া, চং, তুলকুল নামের ঘুড়ি ছিল খুব জনপ্রিয়। এই ঘুড়িগুলো বানানো যেমন কষ্টসাধ্য ছিল। এগুলি তেমনই ছিল খরচসাপেক্ষ। পেশাদার ঘুড়ি উড়িয়েদের জন্য সুবর্ণযুগ ছিল সেই সময়টা।
এর পর কলকাতায় শুরু হয় বাবু কালচারের যুগ, তাঁরাও ফুর্তি করার জন্য, নিজেদের প্রতিপত্তি দেখানোর জন্য ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতায় নামতেন। কলকাতার বাবু কালচার ক্রমেই রপ্ত করতে শুরু করল নবাবিয়ানার বিভিন্ন রীতিনীতি। ভোগবিলাস আর ফুর্তির বহরে তারা ও নবাবীয়ানা কে হার মানাতে পারত। সেই সমইয় ঘুড়ির গায়ে জায়গা করে নিতে থাকে টাকার সার। কখনও পাঁচ, কখনও বা দশ কখনও বা তারও বেশি! ঘুড়ির সঙ্গে টাকা ওড়ানোর এই রীতি বাবুয়ানায় এক নতুন মাত্রা যোগ করল। তাঁরা সেই সময় মাঞ্জা দিয়েই ঘুড়ি ওড়াতেন।
যদিও কালের প্রবাহে কলকাতার অনেক অভ্যাস পাল্টেছে, কলকাতার আভিজাত্যে ও লেগেছে আছুনিকতার ছোঁয়া। কালের গ্রাসে বিলীন হয়ে নবাবীয়ানা থেকে বাবুয়ানা তবুও কিছু রীতি এখনো রয়ে গিয়েছে তারই মধ্যে অন্যত্তম হল ই ঘুড়ি ওড়ানো। যদিও ব্যস্ততার সঙ্গে পাঞ্জা লড়িয়ে সময়ের কমতি খামতি না না অজুহাতে এখন আকাশে ঘুড়ি আনাগোনা অপ্রতুল হলেও, বিশ্বকর্মা পুজোর দিন এর ব্যতিক্রম চোখে পড়েই। এদিন গোটা আকাশ ছেয়ে যায় রঙিন ঘুড়িতে। বাবুকালচার বিলোপ পেয়েছে তাতে ক্ষতি নেই কিন্তু পুরোনো কলকাতার ছেলেবেলার সেই দিন গুলি যেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে যায়।