পুরুলিয়া, ১৪ অক্টোবর : মহালয়ার ৫ দিন আগেই এখানে পুজো শুরু হয়েছে। আর্দ্রা নক্ষত্রযুক্ত কৃষ্ণপক্ষের নবমীতে। রাজতন্ত্রের অবসান ঘটেছে বহু আগেই। হাতিতে চেপে রাজা আর রাজরাজেশ্বরী ঠাকুরদালানে আসেন না। তাই রাজকীয় সেই জাঁকজমক নেই। তবুও সেই আগের মতোই পুরুলিয়ার কাশীপুরের পঞ্চকোট রাজপরিবারের রাজরাজেশ্বরী আলয়ে আগমনী গানে মা উমা আসেন।
ষোলোকল্পের পুজোয় প্রায় ১৬ দিন ধরেই আগমনি গানে গমগম করে ওই ঠাকুরদালান।কোষাগারে যতই টান পড়ুক না কেন! কিংবা পঞ্চকোটের উচ্চাঙ্গ মার্গ সংগীত ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু হয়ে এলেও সেই মূল ধারা থেকে এখনও সরে আসেনি। রাজদরবারের সংগীত সৃজন আজও অটুট।
তাই তো পঞ্চকোটের ঠাকুরদালান থেকে ভেসে আসছে, “জয় দুর্গে দুরধী গম্য রূপিণী/ দুরন্ত দুর্গা শুর নিশুদিনী/ দীন দুর্বল তারিনী জননী দূরিত হারিণী।” কিংবা “এসো মা গো কাত্যায়নী/ নিখিল ভয়হারিনী অসুরদলনাশিনী/ তোমা বিনে ত্রিভুবনে, কে তারে তাপিত জনে/ স্থান দিও ওই চরণে, ত্রাণ কর ত্রিনয়নী।” দরবারি রাগের ঝাপতালে পাখোয়াজ, তবলা, হারমোনিয়ামের বোলে যেন অতীতের সংগীতকেই ফিরে ফিরে পাচ্ছে তামাম পঞ্চকোট।
শকাব্দ ২-র দুবছরেরও বেশি সময়ের প্রাচীন এই পুজোয় দরবারি সংগীতের মূর্ছনায় যেন আলোর বিচ্ছুরণ! যেন কেঁপে উঠত রাজপ্রাসাদের ঝাড়লন্ঠন। সুমধুর আগমনী সংগীতে রাজদরবারেই রাজার উপস্থিতিতে গানে সুর দিতেন রাজেন্দ্রনারায়ণ সিংদেওর মতো সুরকাররা। কবি তথা রাজপুরোহিত রাখাল চক্রবর্তী, কবি ধ্রুবেশ্বরলাল প্রসাদ সিংদেও এই আগমনি গানগুলির রচয়িতা।
পঞ্চকোট রাজপরিবারের বর্তমান সদস্য তথা সিপাহী বিদ্রোহের মূল উদ্যোক্তা মহারাজাধিরাজ নীলমনি সিং দেওর প্রপৌত্র সৌমেশ্বরলাল সিংদেও বলেন, “শেষ রাজা ভুবনেশ্বরী প্রসাদ সিংদেওর আমলেও কাশীপুর রাজপ্রাসাদে সারা বছরের সঙ্গে আশ্বিন মাসের শুরু থেকেই আগমনীর পূর্ণাঙ্গ আসর বসত। দরবারি গানে সংগীতের মূর্ছনায় সমগ্র প্যালেসের চেহারা যেন একটা আলাদা রূপ নিত।এখনও ওই আগমনি গান শুনলে কানে যেন সেই সংগীতের সুরই বাজে। এখনও সেই মার্গ সংগীতের স্মৃতি চোখের সামনে ভাসে।”