দুরন্তবার্তা ডিজিটাল ডেস্ক :দেবী দুর্গা দশভুজা, তাঁর দশটি হাত বিভিন্ন দিকে প্রসারিত। প্রতিটি হাতে দেবতা-দেবীরা প্রদত্ত একটি বিশেষ অস্ত্র থাকে, যা শুধুমাত্র অসুরদের বিনাশের জন্য নয়, বরং আধ্যাত্মিক শক্তি ও মহিমার প্রতীক হিসেবেও গণ্য। এই দশ অস্ত্রের মাধ্যমে মা দুর্গা রক্ষা, শক্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেন।
কখনও ভেবে দেখেছেন দেবী হস্তের এই অস্ত্র কোন তাৎপর্য বহন করে? করুণাময়ী দেবী কীভাবেই বা হয়ে উঠলেন অসুর বিনাশকারী? জেনে নেওয়া যাক দেবী দুর্গার দশ হাতের দশ অস্ত্রের শাস্ত্রীয় বিবরণ।
চক্র: মায়ের হাতে যে চক্র শোভা পায় তা আসলে ভগবান বিষ্ণুর ‘সুদর্শন চক্র’। শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যায় সুদর্শন চক্র এই ব্রহ্মাণ্ডের প্রতীক। আর এই চক্রের কেন্দ্রস্থলে দেবীশক্তির অবস্থান। দেবী দুর্গার হাতে এই চক্র থাকার অর্থ সমস্ত সৃষ্টির কেন্দ্রেই তাঁর অস্তিত্ব বিরাজমান। এমনকী এই চক্রকে আলাদা করে পুজো করার কথাও হিন্দু ধর্মে উল্লেখ রয়েছে। মহামায়ার হাতে এই অস্ত্র দৃঢ়তা ও ঐক্যের প্রতীক।
বজ্র: দেবীকে বজ্র দিয়েছিলেন দেবরাজ ইন্দ্র। বৌদ্ধ ধর্মে জাগতিক বন্ধন থেকে চেতনাকে মুক্ত করতে বজ্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। হিন্দু মতে দেবীর বজ্র মিথ্যা ও অজ্ঞতাকে ধ্বংস করে।
ত্রিশূল: স্বয়ং মহাদেব পার্বতীকে ত্রিশূল দান করেছিলেন। ত্রিশূলের তিনটি ফলা সত্য, তমঃ, রজঃ-র প্রতীক। এই ত্রিশূল দিয়েই দেবী মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন।
শঙ্খ: দেবীকে শঙ্খ দান করেছিলেন বরুণ দেব। এই শঙ্খধ্বনিকে পরম সত্তার প্রতীক ওঙ্কারের সঙ্গে তুলনা করা হয়। শঙ্খের শব্দে ত্রিভুবনের সকল অশুভ শক্তি দূর হয়।
গদা: শাস্ত্র মতে গদা মানুষের মোহকে চূর্ণ করে। যমরাজ দেবীকে এই গদা দান করেছিলেন যা ‘কালদণ্ড’ নামেও পরিচিত। দশভুজার অন্যতম অস্ত্র এই গদা আনুগত্য ও ভক্তির প্রতীক।
তির-ধনুক: দেবীর শক্তিরূপকে প্রকাশ করতেই তির-ধনুকের ব্যবহার। পবনদেব দুর্গাকে এই অস্ত্র দান করেছিলেন। অসুরদের সংহার করতে এই অস্ত্রের ব্যবহার করেছিলেন দেবী।
খড়্গ: পুরাণ মতে দেবীহস্তে সজ্জিত খড়্গ দান করেছিলেন ধর্মরাজ। ন্যায়বিচার ও মৃত্যুর প্রতীক এই অস্ত্র দিয়ে সমাজের বিভিন্ন বৈষম্য ও অশুভ শক্তিকে বিনাশ করেন দেবী।
পদ্ম: ভারতীয় আধ্যাত্মিকতায় পদ্ম পূর্ণ চৈতন্যের প্রতীক। জগৎশক্তি দেবী দুর্গার হাতে ধরা পদ্ম সমগ্র চৈতন্যকে প্রকাশ করে। স্বয়ং ব্রহ্মা দেবীকে পদ্ম দান করেছিলেন।
কুঠার: দেবীকে কুঠার প্রদান করেছিলেন বিশ্বকর্মা, যা একই সঙ্গে নির্মাণ ও ধ্বংসের প্রতীক।
সাপ: দেবীর হাতে দেখা যায় সাপ। কুলকুণ্ডলিনী শক্তির প্রতীক এই সাপ জেগে উঠলে সাধকের সাধনা পূর্ণতা পায়। দেবীকে এই সাপ প্রদান করেছিলেন মহাদেব।