দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ- বাংলা ক্যালেন্ডারের পাতায়
আশ্বিন মাস মানেই মা দুর্গার আবাহন। আর সেই আবাহনের মাত্র হাতে গোনা ১০ দিন বাকি। মা
দুর্গাকে সাদরে আবাহন জানাতে বনেদি বাড়িতেও চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। তেমনি বছরের
পর বছর ধরে নানা অভিজ্ঞতার সাক্ষী বহন কারী বনেদি বাড়িতে এখনও রমরমিয়ে চলছে দুর্গাপুজো।
৩৫০ বছর হতে চলল আজও দুর্গার আরাধনায় মেতে ওঠে ফলতার মালা
গ্রামের দেবসরকার বাড়ি। এই বাড়ির দুর্গা পুজো শুরু হয়েছিল পলাশির যুদ্ধের বেশ কয়েক
বছর আগে।
ব্যবসায়িক কাজে কলকাতা থেকে মালা গ্রামে এসে গ্রাম্য প্রকৃতির
মায়ায় আবদ্ধ হন বিহারীলাল দেব। মালা নিবাসী নাগ বংশের কন্যার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ
হন। এর পর মালা গ্রামেই বসবাস শুরু করেন তিনি। গ্রামে নিজের তৈরি রাজপ্রাসাদের মত বাড়িতে
বসে জমিদারি ও ব্যবসার কাজ দেখাশোনা করতেন বিহারীলাল। বাড়ির চারদিক ছিল জলাশয়ে ঘেরা।
কেবল সামনের অংশটুকুই ছিল উন্মুক্ত। শত্রুপক্ষ যাতে আক্রমণ করতে না পারেন তাই এমন ব্যবস্থা
করে রেখেছিলেন বিহারীলাল দেব।
বিহারীলালই সেখানে মন্দির নির্মাণ করে কুলদেবতা শ্রী শ্রী
লক্ষ্মীজনার্দন জিউর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। স্বাধীনতা আন্দোলনে দেবসরকার বাড়ির যথেষ্ট
ভূমিকা ছিল বলে জানা যায়। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে বিপ্লবীদের অবাধ যাতায়াত ছিল
দেবসরকার বাড়িতে।
তাঁদের
চিকিৎসার ব্যয়ভারও বহন করত দেবসরকার পরিবার। দেবসরকার পরিবারের তৎকালীন সদস্য ডা:
অশ্বিনী কুমার দেবসরকার ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে। এর জন্য
তাঁকে অনেকবার কারাবাসও করতে হয়েছে।
বিহারীলালের পুত্র কালীকৃষ্ণ দেবসরকার জমিদার বাড়িতে প্রথম
আয়োজন করেন দুর্গাপুজোর। সেসময় পুজোয় সাতদিন ধরে চলত যাত্রাপালা ও কবিগান। মহিলাদের
মনোরঞ্জনে আলাদা ব্যবস্থা থাকত বাড়ির ভিতর মহলে। ইংরেজ সাহেবরাও নিমন্ত্রিত থাকতেন
দেবসরকার বাড়ির দুর্গোৎসবে।শোনা যায়, চারণকবি মুকুন্দ দাস নাকি একবার পালাগান করতে
এসেছিলেন এই দেবসরকার বাড়িতেই। তবে প্রাচীন প্রথা মেনে দেওয়া হয় পাঁঠাবলি।
পরিবার সূত্রে খবর, এখনও সেই রীতি হয় পুজো। সাথে হয় যাত্রাপালা
ও কবিগান। প্রায় ৩৫০বছরের রীতি ও জৌলুস ধরে রেখেছে এই বাড়ি।