Festival and celebrations

2 hours ago

Traditional Durga Puja: পুজোয় ব্যতিক্রমী প্রথা, রায়বাড়িতে সপ্তমীতে সিঁদুর খেলা আর মহালয়ায় বিসর্জন!

Traditional Durga Puja
Traditional Durga Puja

 

দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: বাংলার দুর্গোৎসব মানেই শুধু উৎসব নয়, ইতিহাস আর কাহিনির মেলবন্ধন। রাজবাড়ি কিংবা জমিদারবাড়ির পুজোর আড়ম্বরের বাইরে বহু সাধারণ গৃহেও শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসছে দুর্গার আরাধনা। প্রতিটি পুজোর পেছনেই লুকিয়ে থাকে নিজস্ব গল্প, প্রথা আর রেওয়াজ। তেমনই এক ঐতিহ্যের নাম বীরভূমের রামপুরহাটের খরুন গ্রামের রায়বাড়ির দুর্গাপুজো। এখানে সপ্তমীর দিন সিঁদুর খেলার আচার যেমন পালিত হয়, তেমনই নবমীতে বলি দেওয়ার প্রথাও রয়ে গেছে এই পুজোর অঙ্গ হয়ে।

পুজোর একেবারে শুরুর দিকে, মৃৎশিল্পী ছিলেন না। সে সময়ে পটে, শোলায় প্রতিমা তৈরি করে পুজো হতো। এখনও শোলার প্রতিমায় পুজো হয়। বীরভূমের তারাপীঠ সংলগ্ন যে গ্রামগুলি রয়েছে, তার মধ্যে বর্ধিষ্ণু গ্রাম হিসেবে পরিচিত খরুন।এই গ্রামে ৫টি দুর্গাপুজো হয়। তার মধ্যে অন্যতম রায়দের পুজো। প্রায় ৩৭৪ বছরের প্রাচীন রায় বাড়ির এই পুজো। রায় বাড়ির শরিক পরিবার রয়েছে, যাঁরা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুজোর সময়ে সকলে মিলে মায়ের আরাধনার আয়োজন করেন। পাড়ার লোকেরাও সক্রিয় ভাবে অংশ নেন এই পুজোয়। নবমীর দিন রায় বাড়ির পুজো দেখতে ভিড় জমান গ্রামের মানুষ, বাইরে থেকেও আসেন অনেকে। শরিক পরিবারের এক সদস্য সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের এই পুজোয় বেশ কিছু প্রাচীন রীতি আছে। এখানে শুধু দুর্গা, লক্ষ্মী,সরস্বতী থাকে। এ ছাড়াও সপ্তমীতে মাকে বরণ করেন শরিক পরিবারের মেয়েরা। তারপর সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন তাঁরা। অষ্টমী এবং নবমীতে বলি হয়। তবে নবমীতে মানত অনুযায়ী পাঁঠা বলি হয়।’

কথিত আছে, এক সময়ে এ গ্রামে কর্মকারদের বাস ছিল। তখন এখানে পুজো হতো না। পুজোর দিনগুলিতে মন খারাপ করে থাকতেন গ্রামবাসীরা। কর্মকার পরিবারই এই পুজোর উদ্যোগ নেয়। পরে গ্রামে কয়েক ঘর ব্রাহ্মণ বসবাস করতে শুরু করেন। তৎকালীন জমিদার রামনিধি রায় ও রামকানাই রায়, দুই ভাই মিলে ৩৭৪ বছর আগে এই রায় বাড়ির পুজো শুরু করেন। বর্তমানে যৌথ ভাবে এই রায় বাড়ির পুজো করে আসছেন রায় পরিবার এবং বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার। জমিদার আমলে গ্রামে মৃৎশিল্পী না থাকায় জমিদারেরা পটের দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন। এখন সেই পটের বদলে শোলার দুর্গা প্রতিমার পুজো করা হয়। মূলত পটচিত্র শিল্পীর অভাবেই শোলার দুর্গা প্রতিমা পুজো করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গ্রামের যে মালাকাররা শোলার সাজ তৈরি করেন, তারাই প্রতিমা গড়েন। এখানে দুর্গার পাশে শুধু লক্ষ্মী, সরস্বতী থাকে।

বাংলার ঐতিহ্যবাহী দুর্গোৎসবগুলির মধ্যে অন্যতম বীরভূমের রামপুরহাটের খরুন গ্রামের রায়বাড়ির পুজো। দীর্ঘ প্রায় চার শতক ধরে চলে আসছে এই পূজা, যা আজও শরিকি সংস্কৃতির উজ্জ্বল নিদর্শন। শরিক পরিবারের সদস্য নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এ বছর তাঁদের পুজো পড়ল ৩৭৪ বছরে। শরিক ও সহযোগী মিলিয়ে প্রায় ৬৫টি পরিবার একত্রে এই পূজা আয়োজন করে আসছেন। সপ্তমীর দিন শোলার দুর্গা নিয়ে আসা হয় মন্দিরে। সেদিনই দেবী বরণ ও সিঁদুর খেলার আচার পালিত হয়। প্রায় ৩০০ জন ভক্ত প্রসাদ গ্রহণ করেন সেই দিন। অষ্টমীতে থাকে ফলপ্রসাদ, নবমীতে অন্নপ্রসাদের আয়োজন। দশমীর দিন নবপত্রিকা বিসর্জন দেওয়া হলেও প্রতিমা থেকে যায় মন্দিরে। বছরভর চলে নিত্যপুজো। পরের বছর মহালয়ার দিন প্রতিমার নিরঞ্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এক বছরের পূজা চক্র।

You might also like!