দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ- বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বনের
মধ্যে অন্যতম কালীপুজো। লক্ষ্মীপুজোর পরের থেকেই বাঙালি মেতে ওঠেন কালীপুজোতে। বছর
দু-দিন ধরে পালিত হবে দীপাবলি। আগামী ৩১ অক্টোবর ও আগামী ১ নভেম্বর - এই দুদিন দীপ
উত্সব চলবে। কালীপুজো পালিত হবে ৩১ অক্টোবর ২০২৪, বৃহস্পতিবার। কার্তিক অমাবস্যা তিথি
শুরু হবে ৩১ অক্টোবর বেলা ৩টে ৫৫ মিনিটে। সেদিন রাতেই হবে মা কালীর আরাধনা। পরের দিন
১ নভেম্বর ২০২৪ শুক্রবার সকাল ৬টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত চলবে অমাবস্যা।
এই কালীপুজোর উৎসবে প্রবেশ করার আগে আমরা জেনে নিই এই দেবি
কালীকে কোন কোন রূপে সাধকেরা আরাধনা করেন! দেবি কালীর আটটি রূপ আছে, যথা – দক্ষিণাকালী,
সিদ্ধকালী, গুহ্যকালী, মহাকালী, ভদ্রকালী, চামুণ্ডাকালী, শ্মশানকালী ও শ্রীকালী। পুরানের
বর্ণনা অনুযায়ী এক এক সময় কালীর এক এক রূপ প্রকাশ পেয়েছে।
১) দক্ষিণাকালী:
দেবীর সর্বাপেক্ষা প্রসিদ্ধ মূর্তি দক্ষিণাকালী। বলা হয়, দক্ষিণদিকের অধিপতি যম যে
কালীর ভয়ে পলায়ন করেন, তিনিই দক্ষিণাকালী। দেবী করালবদনা, ঘোরা, মুক্তকেশী, চতুর্ভুজা,
মুণ্ডমালাবিভূষিতা
২) সিদ্ধকালী: গৃহস্থের বাড়িতে সিদ্ধকালীর পূজা হয় না।
তিনি মূলত সিদ্ধ সাধকদের ধ্যান আরাধ্যা। কালীতন্ত্রে দেবীকে দ্বিভুজা রূপে কল্পনা করা
হয়েছে। অন্যত্র তিনি ব্রহ্মরূপা ভুবনেশ্বরী।
৩) গুহ্যকালী: গুহ্যকালী বা আকালীর রূপ গৃহস্থের কাছে অপ্রকাশ্য।
তিনি সাধকদের আরাধ্যা। তাঁর রূপকল্প ভয়ংকর, গাত্রবর্ণ গাঢ় মেঘের ন্যায়। লোলজিহ্বা
ও দ্বিভুজা দেবীর গলায় পঞ্চাশটি নরমুণ্ডের মালা, কটিতে ক্ষুদ্র কৃষ্ণবস্ত্র, স্কন্ধে
নাগযজ্ঞোপবীত; মস্তকে জটা ও অর্ধচন্দ্র, কর্ণে শবদেহরূপী অলংকার।
৪) মহাকালী: তন্ত্রসার গ্রন্থমতে, মহাকালী পঞ্চবক্ত্রা ও
পঞ্চদশনয়না। তবে কালিকাপুরাণে তাঁকে আদ্যাশক্তি, দশবক্ত্রা, দশভূজা, দশপাদা ও ত্রিংশল্লোচনা
রূপে কল্পনা করা হয়েছে। তাঁর দশ হাতে রয়েছে যথাক্রমে খড়্গ, চক্র, গদা, ধনুক, বাণ,
পরিঘ, শূল, ভুশুণ্ডী, নরমুণ্ড ও শঙ্খ।
৫) ভদ্রকালী: এখানে ভদ্র শব্দের অর্থ কল্যাণ এবং কাল শব্দের
অর্থ শেষ সময়। যিনি মৃত্যুকালে জীবের মঙ্গলবিধান করেন, তিনিই ভদ্রকালী। কালিকাপুরাণ
মতে, ভদ্রকালীর গাত্রবর্ণ অতসীপুষ্পের ন্যায়, মাথায় জটা, ললাটে অর্ধচন্দ্র তন্ত্র
মতে অবশ্য তিনি মসীর ন্যায় কৃষ্ণবর্ণা, কোটরাক্ষী, সর্বদা ক্ষুধিতা, মুক্তকেশী।
৬) চামুণ্ডাকালী
বা চামুণ্ডা: দেবীভাগবত পুরাণ ও মার্কণ্ডেয় পুরাণ অনুসারে, চণ্ড ও মুণ্ড নামক দুই
অসুর বধের নিমিত্ত দেবী দুর্গার ভ্রুকুটিকুটিল ললাট থেকে চামুণ্ডার উৎপত্তি। অস্থিচর্মসার
বিকটদন্ত দেবীর হস্তে অস্ত্র, দণ্ড ও চন্দ্রহাস, পরিধানে ব্যাঘ্রচর্ম। দুর্গাপুজোর
মহাষ্টমী ও মহানবমীর সন্ধিক্ষণে আয়োজিত সন্ধিপুজোর সময় দেবী চামুণ্ডার পুজো হয়।
৭) শ্মশানকালী: কালীর এই রূপকে শ্মশানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী
মনে করা হয়। তন্ত্রসাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ রচিত বৃহৎ তন্ত্রসার অনুসারে এই দেবীর
গায়ের রং কাজলের মতো কালো, চোখদুটি রক্তপিঙ্গল বর্ণের, আলুলায়িত কেশ, দেহ শুকনো ও
ভয়ঙ্কর, তাঁর ডান হাতে সদ্য ছিন্ন নরমুণ্ড, বাঁ-হাতে আসবপূর্ণ নরমুণ্ড নির্মিত পানপাত্র।
শ্মশানকালীর আরেকটি রূপে তাঁর বাঁ-পা শিবের বুকে স্থাপিত এবং ডান হাতে ধরা খড়্গ।
৮) শ্রীকালী: দেবীর আরেক রূপ শ্রীকালী। অনেকের মতে এই রূপে
তিনি দারুক নামক অসুর নাশ করেন। দেবী মহাদেবের শরীরে প্রবেশ করে তাঁর কণ্ঠের বিষে কৃষ্ণবর্ণা
হন এবং পরবর্তীকালে মহাদেব শিশুরূপে তাঁর স্তন্যপান করেন। শিবের ন্যায় ইনিও ত্রিশূলধারিনী
ও সর্পযুক্তা।
যে রূপেই কালীকে আমরা আরাধনা করি না কেন, সমস্ত রূপের পুজোই
গিয়ে পৌছায় মহাকালের কাছে।