দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ উমা কৈলাসে ফিরে গিয়েছেন। এবার শ্যামার আগমনের পালা। আর কিছুদিন বাদেই দীপান্বিতা অমাবস্যা। অর্থাৎ বঙ্গের কিছু বাড়িতে পুজিত হবেন দেবী কালিকা। শহর কলকাতায় বনেদি দুর্গা পুজোর মত আজও কিছু বাড়িতে যাকজমক সহকারে হয়ে আসছে কালী পুজো।
হাটখোলায় রামচন্দ্র দত্তর বাড়ির পুজো
আন্দুল দত্তচৌধুরী পরিবারের রামচন্দ্র দত্ত আঠারো শতকের শেষার্ধে সাবেক গোবিন্দপুর অঞ্চল থেকে এসে চিৎপুর-হাটখোলা অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেন। এখনকার নিমতলা শ্মশানের কাছে রামচন্দ্রের আদি ভদ্রাসন ও ঠাকুরদালান। এই পরিবারের মদনমোহন দত্ত প্রাসাদোপম ওই বাড়িতে দুর্গাপুজো ছাড়াও কালীপুজোতে আড়ম্বর ও জাঁকজমক করতেন খুবই। মদনমোহন দত্ত লেনের এই ঠাকুরদালান তিন খিলান ও দু’দালান বিশিষ্ট। এই মদনমোহন দত্তের ব্যবসাতেই প্রথম চাকরি করতেন রামদুলাল সরকার। এই বাড়ির সদস্যেরা বাড়ির সামনে বিশাল আটচালা মন্দির-সহ দুর্গেশ্বর নামে এক বিশালাকৃতি শিব প্রতিষ্ঠা করেন। ওই কালো পাথরের তৈরি শিবলিঙ্গ কলকাতার অন্যতম বৃহৎ শিবলিঙ্গগুলোর অন্যতম। পরে বাড়িটি উত্তরাধিকার সূত্রে ঘোষ পরিবারের হাতে। ঠাকুরদালান রক্ষণাবেক্ষণ হলেও অপটু সংস্কারের ফলে সাবেক দালানের প্রাচীন অলঙ্করণের বেশিরভাগই এখন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পুজো কিন্তু, বজায় আছে আজও। ডাকের সাজের দক্ষিণাকালী মূর্তিতে পুজো হয় এখানে।
সিমলার রামদুলাল সরকারের পুজো
জাহাজ-ব্যবসায়ী রামদুলাল দেসরকারই এই পরিবারের স্থপতি। ২৪-পরগনার রেকজানি গ্রামে ছিল তাঁর পৈত্রিক বাড়ি। ছোটবেলায় ঠাকুমার হাত ধরে কলকাতায় এসে দত্তবাড়ির কর্তা মদনমোহন দত্তের জাহাজ-ব্যবসায় চাকরি নেন। তাঁর সততায় মুগ্ধ হয়ে মদনমোহন তাঁকে নিজে ব্যবসা করার পরামর্শ দেন। রামদুলালের ভাগ্য-পরিবর্তনের সূচনা সেখান থেকেই। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে যে কয়েজনের চেষ্টায় বাংলার সঙ্গে আমেরিকার বর্হিবাণিজ্যের সূত্রপাত ঘটেছিল, রামদুলাল তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তিনি অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে ৬৭ই বিডন স্ট্রিটের ভদ্রাসনে দুর্গাপুজো, কালীপুজো ইত্যাদি আরম্ভ করেন। পুজোটি তাঁর দুই ছেলে সাতুবাবু বা ছাতুবাবু ও লাটুবাবুর আমল থেকে জাঁকযমকপূর্ণ হয়ে ওঠে। দক্ষিণাকালীর পুজো হয় এই বাড়িতে।
দর্জিপাড়া মিত্রবাড়ির পুজো
দর্জিপাড়া নীলমণি মিত্র স্ট্রিটের মিত্রবাড়ির কালীপুজো বেশ প্রাচীন। আড়িয়াদহ থেকে ভাগ্যান্বেষণে সুতানুটি অঞ্চলে আসেন এই পরিবারের জগন্নাথপ্রসাদ মিত্র। দর্জিপাড়া মিত্র বংশের প্রতিষ্ঠাতা তিনিই। তাঁর পৌত্র দুর্গাচরণ ছিলেন সিরাজউদ্দৌলার ‘কোর্ট জুয়েলার’। এছাড়াও তাঁর বহুবিধ ব্যবসা ও নুনের দেওয়ানি ছিল। এই পরিবারের নীলমণি মিত্রর পৌত্র প্রাণকৃষ্ণ কিশোর বয়সে একবার খেলার ছলে কালী মূর্তি গড়ে বসেন। সেই থেকে পুজো আরম্ভ। পরিণত বয়সে তিনি ভদ্রাসন সহ ঠাকুরদালান নির্মাণ করে দুর্গাপুজোও আরম্ভ করেন। কিশোর বয়সে দেবীমূর্তির শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা না জানার ফলে প্রাণকৃষ্ণ ভুল করে শিবের বুকের উপরে কালীর বাঁ পা রেখে দক্ষিণাকালীর প্রতিমা তৈরি করেছিলেন। সেই ‘ভুল’ বজায় রেখে আজও সেই ভাবেই গড়া হয় এখানকার প্রতিমা।