দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ তিনি সংসারের সমস্ত বিপদ হরণ করেন, প্রচলিত বিশ্বাস এমনই ৷ আর সে কারণেই বিপত্তারিণী পুজোর ব্রত শুরু হয়েছিল ধার্মিক হিন্দু পরিবারে ৷ কিন্তু কে এই দেবী বিপত্তারিণী ? কীইবা তাঁর মহিমা ? কেন তিনি বিপদনাশকারী দেবীরূপে পূজিত হন হিন্দুদের ঘরে ঘরে ? পুরাণের পাতা উলটে দেখা যাক একটু ৷
পুরাণের এই ঘটনার পটভূমি মল্লভূম রাজবংশ ৷ দোর্দণ্ডপ্রতাপ মল্লরাজারা সপ্তম শতাব্দী থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত একটানা বিষ্ণুপুর শাসন করেছিলেন। সেই মল্লভূম রাজবংশেরই এক রাজার পত্নী ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপরায়ণা ৷ এক মুচিনীর সঙ্গে তাঁর ছিল ভীষণ সখ্যতা ৷ সেই মুচিনীরা গোমাংস খেতেন ৷ একদিন রাজরানির ভীষণ কৌতূহল হল, গোমাংস কেমন হয় তা তিনি নিজের চোখে দেখবেন ৷ মুচিনীটিকে সে কথা বলতেই সে তো ভয়ে জড়সড়। • ধার্মিক মহারাজ পরম শুদ্ধাচারী। যদি জানতে পারেন, মৃত্যুদণ্ড অবধারিত। কিন্তু তৎসত্ত্বেও রানি খুবই জোর করায় মুচিনী রাজি হল।
কথামতো একদিন সে যত্নসহকারে গোমাংস রেঁধে লুকিয়ে রাজবাড়িতে রানিমাকে দিয়ে গেল। রানি তো গোমাংস মুখেও তুলবেন না ৷ দেখবেন শুধু ৷ ইতিমধ্যেই কীভাবে যেন রাজার কানে এই কথাটা তুলে দিলেন কোনও এক রাজকর্মচারী ৷ ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে রাজা অন্দরমহলের দিকে ছুটে এলেন ৷ রানি তো ভয়েই আধমরা ৷ কীভাবে লুকাবেন নিষিদ্ধ বস্তুটি ? আঁচলের তলায় লুকিয়ে ফেললেন পাত্রসমেত মাংসটি ৷ আর চোখ বুঝে মা দুর্গাকে ডাকতে লাগলেন তাঁকে এই বিপদ থেকে মুক্ত করার জন্য ৷ মা দুর্গা সেই ডাক শুনলেন ৷ রাজা ঘরে এসেই রানির আঁচল টেনে ছিঁড়ে দিলেন ৷ কিন্তু আঁচলের নীচ থেকে বেরিয়ে এল একথালা রক্তজবা ফুল ৷ এমন কাণ্ড করার জন্য অনুতপ্ত রাজা রানির কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করলেন ৷ শরণাগতবৎসলা মা তখন আবির্ভূত হয়ে রানিকে কানে কানে বললেন;ভয় নাই, আমি নিষিদ্ধ মাংসকে পুষ্পে পরিণত করিয়াছি।
এরপর থেকেই শুরু হল মা বিপত্তারিণীর আরাধনা ৷ দেবী বিপত্তারিণীর রূপের সঙ্গে দেবী সংকটতারিণী বা মাতা সংকটার সাদৃশ্য রয়েছে। কোথাও তিনি শঙ্খ-চক্র-শূল ও অসিহস্তা স্বর্ণবর্ণা ত্রিনয়না, আবার কোথাও তিনি খড়গ-শূল-বরাভয়ধারিণী লোলজিহ্বা ঘোরকৃষ্ণা। বিপত্তারিণীর পুজো করলে সমস্ত বিপদ থেকে মুক্ত পাওয়া যায়, এমনটাই বিশ্বাস মানুষের ৷