
দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: আসন্ন নির্বাচনে প্রচারণার প্রধান মুখ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু তাঁর ছবিকে ‘অতি ব্যবহারের’ মাধ্যমে যেন ম্লান না করা হয়, সেই বিষয়ে বিজেপি সচেতন। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গে যে জনসভাগুলি করবেন, রাজ্য বিজেপি সেই বক্তব্যগুলি থেকেই নির্বাচনী রণনীতি নির্ধারণ করবে। মোদির বক্তৃতা মঞ্চের বিভিন্ন ঘোষণা এবং বক্তব্য নানা স্তরের নেতা-কর্মীর কথাবার্তায় প্রতিধ্বনিত হতে থাকবে। তবে, বিজেপি এবার ইচ্ছাকৃতভাবে নিশ্চিত করতে চাইছে যে, মূল বক্তব্যটির চেয়ে বরং সেই 'প্রতিধ্বনি'ই যেন বেশি প্রচারিত হয়।
ডিসেম্বর থেকেই বঙ্গে মোদীর নির্বাচনী অভিযান শুরু করে দেওয়ার কথা। সংসদে শীতকালীন অধিবেশন চলার ফাঁকে কোনও এক শনি বা রবিবার মোদী পশ্চিমবঙ্গে জনসভা করতে আসছেন বলে বিজেপি সূত্রে জানা যাচ্ছে। ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ভোটের প্রচার শেষ হওয়া পর্যন্ত বাংলায় তিনি মোট ১৪-১৫টি সভা করবেন বলেও বিজেপির একটি সূত্রের দাবি।বাংলায় নির্বাচন ঘোষণা হতে এখনও অন্তত মাসতিনেক। গোটা নির্বাচন পর্ব মিটতে দু’-আড়াই মাস সময় লাগতে পারে। তাই কোনও দল যদি ডিসেম্বর থেকেই নির্বাচনী জনসভা বা প্রচারপর্ব শুরু করে দেয়, তা হলে প্রায় মাসপাঁচেক সেই পর্ব চলবে। এবং আপাতত বিজেপির যা পরিকল্পনা, তাতে ওই পাঁচ মাসে মোদী সর্বোচ্চ ১৫টি সভা করবেন। তার বেশি নয়।২০২১ সালে মোদীকে ঘিরে বিজেপির নির্ঘোষ কিন্তু এর চেয়ে অনেক বেশি ছিল। বিজেপি ঘোষণা করেছিল, রাজ্য জুড়ে মোদী ৪০টির মতো জনসভা করবেন। ব্রিগেডে মোদীর সভা, জেলায় জেলায় মোদীর সভা, প্রান্তিক এলাকায় মোদীর সভা, মোদীর রোড শো— বিজেপির পুরো প্রচারাভিযানই ছিল মোদীময় এবং মোদীকেন্দ্রিক। রাজ্য বিজেপির মেজো, সেজো, ছোট নেতারা সেই পরিকল্পনাকে ‘কার্পেট বম্বিং’ নামে অভিহিত করছিলেন। অর্থাৎ, যুদ্ধবিমান থেকে শত্রুপক্ষের ভূখণ্ডে স্বল্প পরিসরের মধ্যে একসঙ্গে অনেকগুলি বোমা বর্ষণ।
‘কার্পেট বম্বিং’ করে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দুর্গ’ ধসিয়ে দেওয়া যায়নি, তা বিজেপি নিজেই দেখেছে। কোনও একটি রাজ্যের নির্বাচনে মোদীকে মুড়ি-মুড়কির মতো ব্যবহার করা উচিত হয়েছিল কি না, তা নিয়ে বিজেপির অন্দরে চর্চাও হয়েছে। সে বিষয়ে অবশ্য কেউ প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। তবে শুধু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে নয়, অন্যান্য রাজ্যের নির্বাচনের ক্ষেত্রেও যে ‘মোদী-সভা’ অস্ত্রকে রয়েসয়ে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা গত বছরখানেকে একাধিক বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রচারাভিযান দেখলেই স্পষ্ট। ২০১৪ সালে বা ২০১৯ সালে মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনে মোদীকে দিয়ে যত সভা করানো হয়েছিল, ২০২৪ সালে তা হয়নি। মহারাষ্ট্রের মতো বড় রাজ্যে গত বছর হওয়া বিধানসভা নির্বাচনে মোদী মাত্র ন’টি জনসভা করেন। হরিয়ানা ছোট রাজ্য হওয়া সত্ত্বেও ২০১৪ সালে সেখানে মোদী ১০টি জনসভা করেছিলেন। ২০২৪ সালে করেছেন মাত্র চারটি। দুই রাজ্যেই বিজেপি আগের চেয়ে বেশি আসন জিতে ক্ষমতা ধরে রেখেছে। সে সব মাথায় রেখেই পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে কি মোদীকে রয়েসয়ে ব্যবহারের নীতি?এ বিষয়ে কোনও ‘সিদ্ধান্ত’ হয়েছে বলে রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য মানতে রাজি নন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথমত, প্রধানমন্ত্রী কতগুলি জনসভা করবেন, তা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।’’ পরের বাক্যেই শমীক বলছেন, ‘‘দ্বিতীয়ত, কোনও রাজনৈতিক দল তার নির্বাচনী রণকৌশল প্রকাশ্যে মেলে ধরে না। তাই প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গে কতগুলি সভা করবেন, কী কী কর্মসূচি নেবেন, সে সব নিয়ে এখনই মন্তব্য করার প্রশ্ন ওঠে না। তবে মোদীজি ২১টি সভা করুন বা ১২টি, ২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ থেকে তৃণমূলের বিদায় নিশ্চিত।’’
‘আদি বিজেপি’ হিসাবে পরিচিত এক রাজ্য স্তরের নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘নরেন্দ্র মোদী দলের সবচেয়ে জনপ্রিয় মুখ। এই স্তরের নেতাদের যে জনমোহিনী ক্ষমতা থাকে, তা যাতে কোনও ভাবে ক্ষুণ্ণ না হয়, সে বিষয়টিও খেয়াল রাখা জরুরি। সভার সংখ্যা খুব বেশি হলে সব জায়গায় নতুন কিছু বলার থাকে না। একের পর এক সভায় গিয়ে একই কথা বলতে হয়। তাতে মহিমা ক্ষুণ্ণ হয়।’’ অর্থাৎ, বিজেপির লক্ষ্য মোদীর ‘মহিমা’ গোটা ভোট মরসুম জুড়ে অক্ষুণ্ণ রাখা। অপেক্ষাকৃত কমসংখ্যক সভা থেকে মোদী যে কথা বলবেন, তা রাজ্য জুড়ে বিজেপির বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীর মুখে মুখে প্রতিধ্বনির মতো ছড়িয়ে দেওয়া।
