
দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: নির্বাচন কমিশন এবার সরাসরি তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি পত্র দিয়েছে। চিঠিটি মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে। কমিশন জানিয়েছে যে, এই চিঠি পাঠানোর কারণ হলো— তৃণমূলের পক্ষ থেকে কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য সময় চাওয়া হয়েছিল। তাই, কবে এবং কখন তারা তৃণমূলনেত্রীর দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, তা নিশ্চিত করতে কমিশন এই চিঠিটি পাঠিয়েছে।
দিন কয়েকের মধ্যে পর পর দু’বার দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে চিঠি লেখেন মমতা। তিনি শেষ চিঠি পাঠিয়েছিলেন সোমবার। ঠিক তার এক দিন পরেই মমতাকে চিঠি দিয়ে তৃণমূলের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দেখা করার কথা জানাল কমিশন। বলা হয়েছে, রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন দেখা করতে চেয়ে কমিশনকে চিঠি দিয়েছিলেন। সেই অনুরোধের ভিত্তিতেই কমিশনের এই চিঠি।
চিঠিতে জানানো হয়েছে, কমিশন সব সময় সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা করতে প্রস্তুত। সেই কারণে তৃণমূলের অনুরোধের ভিত্তিতে তাদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দেখা করবে কমিশন। পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল দিল্লিতে কমিশনের সদর দফতরে গিয়ে দেখা করতে পারে। আগামী শুক্রবার, অর্থাৎ ২৮ নভেম্বর ১১টার সময় তৃণমূলের সঙ্গে বৈঠক করতে রাজি কমিশন। শুধু তা-ই নয়, প্রতিনিধিদলে কে কে থাকবেন, তাঁদের নাম জানাতেও বলা হয়েছে তৃণমূলকে। চিঠি দেওয়া হয়েছে মমতার কালীঘাটের বাড়ির ঠিকানায়।
ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) প্রক্রিয়া নিয়ে বার বার অসন্তোষপ্রকাশ করেছেন মমতা। গত সপ্তাহে জ্ঞানেশকে লেখা চিঠিতে এসআইআর প্রক্রিয়া স্থগিতের অনুরোধ জানান তিনি। তাঁর অভিযোগ, পরিকল্পনাহীন ভাবে এই প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যের তিন জন বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও)-এর মৃত্যুর খবর মিলেছে এবং অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলেও খবরে প্রকাশ। অভিযোগ, এসআইআরের কাজের চাপেই এ হেন ঘটনা ঘটছে। মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে বিএলও-দের মৃত্যুর প্রসঙ্গ টেনে আনেন।
সোমবারের লেখা চিঠিতে কমিশনের দুই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মমতা। তিনি প্রশ্ন তোলেন, কমিশন কি কোনও একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলকে সুবিধা পাইয়ে দিতে চেষ্টা করছে? কেন তিনি এই প্রশ্ন তুলছেন, তার ব্যাখ্যাও চিঠিতে লেখেন মমতা। তিনি জানান, টেন্ডার ডেকে এক বছরের জন্য এক হাজার ডেটা এন্ট্রি অপারেটর এবং ৫০ জন সফ্টঅয়্যার ডেভেলপার নিয়োগের জন্য রাজ্যকে প্রস্তাব দিয়েছে সিইও দফতর। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, জেলাস্তরের অফিসগুলিতে এই কাজ করার জন্য আগে থেকেই কর্মী নিযুক্ত রয়েছেন। সে ক্ষেত্রে বাইরে থেকে গোটা বছরের জন্য লোক নিয়োগ করার কী এমন প্রয়োজন পড়ল সিইও দফতরের? এ ছাড়াও, মমতা জানান, কমিশন ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ভবনকেও ভোটকেন্দ্র হিসাবে ব্যবহারের কথা ভাবছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। এই ধরনের পদক্ষেপ কেন করা হচ্ছে, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।শুধু মমতা একা নন, বাংলার শাসকদল তৃণমূলও বার বার এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাদের দাবি, একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই কমিশন এসআইআর নিয়ে তাড়াহুড়ো করছে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার দলীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠকে কমিশনের সঙ্গে দেখা করার কথা উল্লেখ করেছিলেন। তিনি ১০ জন সাংসদের নামোল্লেখ করে তাঁদের কমিশনের সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি জমা দিতে বলেন। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে গত ২০ দিনে যে যে অভিযোগ তৃণমূল জানিয়েছে, তা নিয়ে কমিশন পদক্ষেপ করেনি কেন, তার জবাব চাওয়ার নির্দেশ দেন অভিষেক। তার পরের দিনই কমিশন চিঠি দিয়ে তৃণমূলের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার কথা জানাল।
