আগরতলা : জুট মিলের শ্রমিক ও কর্মচারীদের ০১-০১-১৯৯৬ সাল থেকে সংশোধিত বেতনক্রম ও বিভিন্ন ভাতা প্রদান করার জন্য ত্রিপুরা হাইকোর্টের রায়কে বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। জুটমিল ও রাজ্য সরকারের দায়ের করা স্পেশাল লিভ পিটিশন ৪ সেপ্টেম্বর খারিজ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি জে কে মহেশ্বরী ও বিচারপতি কে বি বিশ্বনাথনের ডিভিশন বেঞ্চ জুট মিলের এসএলপি খারিজ করার সংবাদ রাজ্যে পৌঁছামাত্রই কয়েক হাজার প্রাক্তন ও বর্তমান শ্রমিক কর্মচারী এবং তাদের পরিবারবর্গ খুশিতে আত্মহারা।
সুপ্রিম কোর্ট জুট মিলের এসএলপি পত্রপাঠ নাকচ করায় ত্রিপুরা হাইকোর্টের রায় কার্যকর করতে রাজ্য সরকার ও জুট মিল বাধ্য হবে তাতে আর কোন সন্দেহ নেই। জুট মিলের শ্রমিক কর্মচারীরা বেতন ভাতার প্রশ্নে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত। চতুর্থ বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ৩২ টি পিএসইউর কর্মচারীদের সংশোধিত বেতন ক্রম বিভিন্ন ভাতা সমেত ০১-০১-১৯৯৬ থেকে প্রদান করা হয়। কিন্তু জোটমিলের কর্মচারীদের জন্য সংশোধিত বেতনক্রম চালু হয় ০১-০৪-১৯৯৯ থেকে। এর ফলে জুটমিলের শ্রমিক কর্মচারীরা প্রতিমাসে বেতন ভাতা বাবদ অন্যান্য পিএসইউতে কর্মরতদের থেকে তিন থেকে চার হাজার টাকা কম পেয়েছেন। জুট মিলের অফিসাররা একই রকম বঞ্চনার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা করে সুবিচার পান।
উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েও সরকারপক্ষ ও জুটমিল কর্তৃপক্ষ সুফল পায়নি। বেতন ভাতার ক্ষেত্রে সমতার দাবি জানিয়ে জুট মিলের শ্রমিক কর্মচারীদের দুটি সংগঠন ২০১৮ সালে হাইকোর্টে রেট মামলা দাখিল করেছিল। ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ত্রিপুরা হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি অজয় রাস্তগী শ্রমিক কর্মচারীদের পক্ষে রায় দিয়েছিলেন। রাজ্য সরকার ও জুট মিলকে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল শ্রমিক কর্মচারীদের ০১-০১-১৯৯৬ সাল থেকে সংশোধিত বেতন ক্রম ও বিভিন্ন ভাতা প্রদান করতে হবে। এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য সরকার ও জুটমিল কর্তৃপক্ষ রিট আপিল দাখিল করে।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ত্রিপুরা হাইকোর্টের তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি ইন্দ্রজিৎ মহান্তি ও বিচারপতি এস জি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ রিড আপিল গুলো খারিজ করে দিয়ে সিঙ্গেল বেঞ্চের রায় বহাল রাখে। কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের বিরোধীতা করে সুপ্রিম কোর্টের দারস্ত হয় রাজ্য সরকার ও জুট মিল কর্তৃপক্ষ। তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি। ইতিমধ্যে উচ্চ আদালতের রায় কার্যকর না করার জন্য আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হয়েছে রাজ্য সরকারের শীর্ষ আধিকারিকদের ও জুট মিলের এমডির বিরুদ্ধে। সুপ্রিম কোর্টে এসএলপি নাকচ হওয়ার ফলে আদালত অবমাননার সাজা থেকে বাঁচতে অবিলম্বে শ্রমিক কর্মচারীদের উচ্চ আদালতের রায় মোতাবেক প্রাপ্য অর্থ না মিটিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প রইল না রাজ্য সরকার ও জুট মিলের।