কোন কোন ফুল খেলে ভালো?
শীত ও বসন্তের সন্ধিক্ষণে যে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার প্রাদুর্ভাব ঘটে তার সঙ্গে সজনে ফুল, কুমড়ো ফুল, নিমফুল, বকফুল, শীষপালং ফুল লড়াই করার ক্ষমতা রাখে।
শরীরের সজনে
এই সময় পক্স, সর্দিকাশির প্রবণতা বাড়ে। সজনে ফুল দিয়ে তরকারি বানিয়ে খেলে তা শরীরে প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ায়। সজনে ফুলে ভিটামিন এ, বি১, বি২, বি৩ এবং ভিটামিন সি, এছাড়া আয়রন, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম ক্যালসিয়াম রয়েছে। সজনে ডাঁটা, ফুল, পাতা খেলে নানা অসুখ থেকে আমরা বাঁচতে পারি, অ্যান্টি অক্সডেন্টে ভরপুর সজনে ফুল ডেঙ্গুর সঙ্গে লড়াই করে। রক্তচাপ ও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। অ্যাজমা থাকলে সজনেফুল সেবন করলে রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
কুমড়ো ফুলে ক্যালশিয়াম
কুমড়ো যেমন পুষ্টিগুণে ভরপুর তেমনি কুমড়ো ফুলের গুণ কম নয়। এ ফুল আমরা বিভিন্নভাবে খেয়ে থাকি। এই ফুলে থাকে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন সি যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। আয়রন শোষণে সাহায্য করে, এতে ফাইবার পাওয়া যায়, যা হজম সমস্যাকে দূর করে। ভিটামিন রয়েছে যা ত্বকের তারুণ্য বজায় রাখে ও চোখের জন্য উপকারী। ক্যালশিয়াম, ফসফরাস থাকায় হাড়কে সুস্থ মজবুত করে তোলে। অস্টিওস্পোরোসিস রোগ প্রতিহত করতেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।
অ্যান্টিবায়োটিক নিমফুল
নিমফুল খুবই উপকারী, এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, এটি অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদানে সমৃদ্ধ। অ্যান্টিসেপটিক গুণ আছে যা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে। নিমফুলের শরবত পান করলে এটি রক্তকে পরিশুদ্ধ করে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
ক্যানসার প্রতিরোধে শীষপালং
শীষপালং যা সরস্বতীপুজোয় গোটা সেদ্ধ দেওয়া হয়। যাতে সবরকম পুষ্টিকর উপাদান পাওয়া যায়। এতে ভিটামিন এ, সি, ই, কে, এবং বি এছাড়া ম্যাঙ্গানিজ, ক্যারোটিন, অায়োডিন, অায়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, অ্যামিনো অ্যাসিড পাওয়া যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, যা ত্বক উজ্জ্বল করে তোলে। এতে উপস্থিত ক্যারোটিন, ক্লোরোফিল ক্যানসার প্রতিরোধে ও দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখতে কাজ করে। এবং অতিরিক্ত স্থূলতার সমস্যার সমাধান করে। এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন পাওয়া যায় যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বজায় রেখে রক্তাল্পতার সমস্যা দূর করে। অস্টিওস্পোরোসিস রোগীদের সহায়তা করে।
গ্যাসের সমস্যায় বকফুল
বকফুলের অনেক উপকারিতা আছে, এর মধ্যে ফাইবার, প্রোটিন, ফসফরাস, আয়রন, ভিটামিন সি, বিভিন্ন খনিজ আছে। এতে ক্যানসার প্রতিরোধক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এর মধে্য আয়রন, ভিটামিন বি উপস্থিত। ঋতু পরিবর্তনের সময় এই ফুল খেতে পারলে খুব ভালো, এতে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ে। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূরীকরণে সহায়তা করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। যে কোনও ব্যথা, গ্যাস্ট্রিক আলসার নিরাময়ে এই ফুলের জুড়ি মেলা ভার। রক্তে কোলেস্টেলরল নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। কৃমির সমস্যায় ও পাইলস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ভিটামিন এ থাকায় এটি রাতকানা রোগকে প্রতিরোধ করে, এছাড়া মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা কমায়। এই ফুলগুলির উপকারিতা অসীম।
তবে সব শেষে একটা কথা বলব, এগুলি খাওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যাঁরা কিডনি সংক্রান্ত রোগে ভুগছেন, বা বিভিন্ন রোগের জন্য নানা ওষুধ খান তাঁরা এগুলি খাবার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেবেন। কারণ, কিডনি, অ্যালার্জি, উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস জনিত অসুখে ভুগছেন তাঁদের শাক-সবজি বা ফুল খাওয়ার পিছনে নানা বিধিনিষেধ থাকে। তাই এগুলি উপকারী হলেও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।