দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি সহ ন'জনকে নিয়ে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে হেলিকপ্টার। আজারবাইজান সীমান্তে এই ভয়াবহ চপার দুর্ঘটনায় সকলেরই মৃত্যু হয়েছে। হেলিকপ্টারটি ভেঙে পড়ার ঠিক আগের মুহূর্তে কী ঘটেছিল? এবার প্রকাশ্যে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য।
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার খুঁটিনাটি তথ্য প্রকাশ্যে আনলেন ইরানের প্রেসিডেন্টের চিফ অফ স্টাফ গোলাম হোসেন ইসমাইলি। উল্লেখ্য, দুর্ঘটনার দিন ইব্রাহিম রাইসি এবং বিদেশমন্ত্রী আমির আবদোল্লাহেয়ানকে নিয়ে আজারবাইজান থেকে যে হেলিকপ্টার উড়েছিল, তার পাশেই অপর একটি চপারে ছিল প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ গোলাম হোসেইন ইসমাইলি। সৌভাগ্যবশত, তাদের চপারটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েনি। তিনি সংবাদমাধ্যমে এই দুর্ঘটনা নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছেন।
আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী এলাকায় গত রবিবার দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত একটি বাঁধ উদ্বোধন করতে যান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভও ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, তিনটি হেলিকপ্টার পূর্ব আজারবাইজানের রাজধানী তাবরিজের উদ্দেশে রওনা দেন। যার একটিতে ছিলেন প্রসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এভং বিদেশমন্ত্রী হোসেন আমির আবদোল্লাহেয়ান সহ মোট ন'জন।
চিফ অব স্টাফ গোলাম হোসেইন ইসমাইলি জানান, পূর্ব আজারবাইজানের জোলফা এলাকার কাছে দুর্গম পাহাড়ে প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিয়ে ওড়া মার্কিন সংস্থার তৈরি বেল ২১২ মডেলের হেলিকপ্টারটি ভেঙে পড়ে। অন্য দু'টি হেলিকপ্টার অবশ্য নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছয়।
ঘটনার প্রায় ১৭ ঘণ্টা পর ইরানের আধা সরকারি সংবাদসংস্থা মেহর নিউজের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি দেশের জনগণের জন্য তাঁর দায়িত্ব পালন করার সময় একটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। তিনি শহিদ হয়েছেন। নিহত বিদেশমন্ত্রী হোসেন আমির আবদোল্লাহেয়ান সহ বাকিরাও। মূলত আবহাওয়ার কারণেই দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় হেলিকপ্টারটি ভেঙে পড়ে বলে অনুমান।
ইরানের প্রেসিডেন্টের চিফ অফ স্টাফ ইসমাইলি বলেন, 'গত ১৯ মে স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় তিনটি হেলিকপ্টার যাত্রা শুরু করে। সে সময় আবহাওয়া চমৎকার এবং স্বাভাবিক ছিল। প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টারটি মাঝে ছিল, সামনে ও পিছনে বাকি দু'টি। যাত্রার শুরুর ৪৫ মিনিটের মাথায় ইব্রাহিম রাইসি সহ ন'জনের হেলিকপ্টারটির পাইলট বাকি দুই চপারের পাইলটকে আরও উঁচুতে উঠে ভ্রমণের নির্দেশ দেন। মূলত তিনি ঘন মেঘ এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।' তিনি আরও বলেন, 'হঠাৎ প্রেসিডেন্টের বিমান উধাও হয়ে যায়। ঘন মেঘের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার ৩০ সেকেন্ড পর আমাদের চপারের পাইলট খেয়াল করেন ওই কপ্টারটিকে আর দেখা যাচ্ছে না। আমাদের পাইলট বৃত্তাকার পথে ঘুরতে শুরু করে। তা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্টের চপারের কোনও হদিশ মেলে না। বেশ কয়েকমার রেডিয়ো ডিভাইসের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় কিন্তু, কোনও সন্ধান মেলেনি ওই চপারটির। এরপর আমাদের হেলিকপ্টারটি উচ্চতা কমিয়ে আনে এবং শেষ পর্যন্ত একটি তামার খনিতে অবতরণ করে।'
অদৃশ্য হয়ে যাওয়া প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টারের নিরাপত্তা ইউনিটের প্রধানকেও বারবার ফোন করা হয় বলে খবর। কারও সাড়া মেলেনি। অন্য দুই হেলিকপ্টারের পাইলটরা মোস্তাফাভিকে কল করার চেষ্টা করেন। তাতেও কোনও সদুত্তোর মেলেনি।
প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির চিফ অফ স্টাফ বলেন, 'জটিল পরিস্থিতিতে শুধু ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টারে থাকা মহম্মদ আলি আল হাশেমের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। তবে তাঁর অবস্থা গুরুতর ছিল। তিনি শুধু জানাতে পেরেছিলেন একটি উপত্যকায় তাঁদের হেলিকপ্টার ভেঙে পড়েছে। ফোনটি মাঝপথেই কেটে যায়। দ্বিতীয়বার ফোন করলেও মহম্মদ আলি আল হাশেম একই কথা কোনওমতে জানাতে সক্ষম হন। এরপর আর কোনও সাড়া মেলেনি।' প্রসঙ্গত, এই মহম্মদ আলি আল হাশেম ইরানের সুপ্রিম লিডার আয়াতোল্লাহ আল খোমেইনির মুখপাত্র ছিলেন। তাঁরও এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনার পর একমাত্র তিনিই ঘণ্টাখানেক বেঁচে ছিলেন বলে অনুমান।