দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ এক্সেলেন্স ইন ফ্লাইট- কোম্পানির লোগোর সঙ্গে এমনই একটা বাক্য লেখে দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বড় উড়ান সংস্থা 'কোরিয়ান এয়ার।' সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা থেকে বিমানযাত্রীদের একটা বড় অংশ বলছেন - 'জীবনে আর কখনও কোরিয়ান এয়ারের প্লেনে উঠব না।' শনিবারের ঘটনা। অথচ তিন দিন পরেও যেন আতঙ্কের রেশ কাটছে না বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ ইন্টারন্যাশনাল প্লেনের যাত্রীদের।
ফ্লাইটরেডার২৪-এর তথ্য বলছে, দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচেয়ন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে শনিবার বিকেল ৪টে ৪৫ নাগাদ তাইওয়ানের উদ্দেশে পাড়ি দেওয়ার ৫০ মিনিটের মাথায় সর্বনাশের মুখে পড়েন যাত্রীরা। আচমকা প্রেশার-ফল্ট! দেশের একেবারে দক্ষিণে জেজু আইল্যান্ডের উপর দিয়ে যাওয়ার সময়ে আচমকা প্রচণ্ড গতিতে নীচে নামতে শুরু করে বিমানটি।
যাত্রীরা প্রথমে ভেবেছিলেন, বিমান বুঝি কোনও এয়ারপকেটে পড়েছে। মামুলি ব্যাপার। কিন্তু না। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের খবর- ৫ মিনিটে ২৫ হাজার ফুট নীচে নেমে যায় ১২৫ জন যাত্রিবাহী কোরিয়ান এয়ারের বোয়িং ৭৩৭। ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের দাবি, ১৫ মিনিট ধরে বিমানের অধঃপতনের সাক্ষী থাকেন যাত্রীরা। ১৫ মিনিটের মধ্যে ২৭ হাজার ফুট নীচে নামে বিমানটি।
নামতে নামতে এবড়ো-খেবড়ো কোনও জমি, ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকা আবাসনের উপর ভেঙে পড়তেই পারত বিমানটি। জরুরি ভিত্তিতে ইউটার্ন নিয়ে আবার ইনচেয়ন এয়ারপোর্টেই প্লেন নামিয়ে বড় বিপদ আটকান পাইলটরা। যদিও ততক্ষণে বেশ কয়েক জন যাত্রী রীতিমতো অসুস্থ বোধ করতে থাকেন। এয়ার-প্রেশারের গোলমালে অনেক যাত্রীর নাক থেকে রক্তও বেরোতে শুরু করে।
কানে ব্যথা কিংবা হাইপারভেন্টিলেশনের মতো নানাবিধ অসুবিধা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় ১৭ জনকে। বেশ কয়েক জনকে ফার্স্ট এইড দিয়ে ছেড়েও দেওয়া হয়। বড়সড় চোট কেউ পাননি। কিন্তু দুঃস্বপ্নের ওই ১৫ মিনিটে কিংবা শেষের ৫ মিনিটে বিমানের যা চেহারা হয়েছিল, সোশ্যাল মিডিয়ায় তার ভিডিয়ো-ছবি দেখেই আঁতকে উঠছেন নেটিজ়েনরা। যেন দক্ষযজ্ঞ চলেছে গোটা প্লেন জুড়ে।
সব আপার কেবিনের ঢাকনা খোলা। প্রায় সব অক্সিজেন মাস্কই শেল্ফ থেকে বেরিয়ে ঝুলছে নীচে! বাচ্চারা সব কাঁদছে ভয়ে। ছবি দিয়ে যাত্রীদেরই কেউ কেউ লিখলেন, '৩০ হাজার ফুট উঁচু থেকে আমচকা ৯ হাজার ফুট নীচে নেমে আসার অভিজ্ঞতাটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন!' তবে চরম বিপদের মধ্যেও বিমানকর্মীরা যে ভাবে মাথা ঠান্ডা রেখে যাত্রীদের পাশে থেকেছেন, তারও প্রশংসা হচ্ছে সর্বত্র। ত্রুটি সারিয়ে নির্ধারিত সময়ের পাক্কা ১৯ ঘণ্টা পরে তাইওয়ানে পৌঁছয় বিমানটি।
ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে তদন্তে সব রকমের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন কোরিয়ান এয়ার কর্তৃপক্ষ। সূত্রের খবর, বিমানটি খুব বেশি পুরোনো নয়। ২০২২-এর জুলাইয়ে বিমানটি হাতে পায় কোরিয়ান এয়ার। কী কারণে প্রেশার ফল্ট হলো, খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।