West Bengal

ক্যানিং, ১৪ আগস্ট : বছরের মাঝে ইলিশ উৎসবের ভরা মরশুমের মধ্যেই সুন্দরবন ভ্রমণে বাড়ল পর্যটন কর। এবার থেকে সুন্দরবন ভ্রমণ করতে এলে পর্যটকদের বাড়তি টাকা গুনতে হবে। পর্যটকদের মাথা পিছু অনুমতি মূল্য থেকে শুরু করে লঞ্চ, ভুটভুটির অনুমতি মূল্য যেমন বাড়ানো হয়েছে, তেমনই লঞ্চ, ভুটভুটির বার্ষিক পঞ্জীকরণের মূল্যও বাড়ানো হয়েছে এক ধাক্কায় অনেকটাই। এই বাড়তি ভাড়া আগামী পয়লা সেপ্টেম্বর থেকেই কার্যকরী করা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের তরফে। এভাবে পর্যটন মরশুমের মাঝে আচমকা ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

সুন্দরবন ভ্রমণে আগে যেখানে পর্যটক পিছু অনুমতি মূল্য ছিল ১২০ টাকা, সেখানে বর্তমানে ভাড়া বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৮০ টাকা। পর্যটকরা যদি নেতিধোপানী পর্যটন কেন্দ্রে যান তাহলে তাঁদের ২৪০ টাকার পরিবর্তে দিতে হবে ৩০০ টাকা। এর পাসাপাশি সজনেখালি ক্যাম্প, ওয়াচ টাওয়ারে উঠে পাখির চোখে ম্যানগ্রোভের জঙ্গল সহ আশপাশের এলাকা দেখতে হলে যেখানে আগে দিতে হত ৩০ টাকা সেখানে আগামী পয়লা সেপ্টেম্বর থেকে দিতে হবে ৫০ টাকা।

এছাড়া বিদেশি পর্যটকদের জন্য এই ভ্রমণ মূল্যও এক ধাক্কায় অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে। আগে যেখানে সুন্দরবন ভ্রমণে বিদেশি পর্যটকরা এলে তাঁদের ৫০০ টাকা দিতে হত অনুমতি মূল্য হিসেবে, সেখানে এবার থেকে দ্বিগুন টাকা দিতে হবে। পাশাপাশি সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য ভুটভুটি ভাড়া যেখানে ছিল ৬০০ টাকা সেটা বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করা হয়েছে। লঞ্চের অনুমতি মূল্য ছিল ১০০০ টাকা তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫০০ টাকা। বাতানুকুল লঞ্চ বা ভুটভুটির ক্ষেত্রেও এই অনুমতি মূল্য ২০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০০ টাকা করা হয়েছে। বাৎসরিক পঞ্জীকরণের ক্ষেত্রেও বাড়ানো হয়েছে টাকা। লঞ্চ বা ভুটভুটির বার্ষিক রেজিস্ট্রেশন চার্জ যেখানে ছিল ২০০০ টাকা, সেই টাকা বাড়িয়ে ৩৫০০ টাকা করা হচ্ছে।

এসবের পাশাপাশি গাইডদের চার্জও বাড়ানো হয়েছে অনেকটাই। আগে যেখানে গাইডদের জন্য পর্যটকগ্রুপকে ৬০০ টাকা দিতে হত, সেখানে ১লা সেপ্টেম্বর থেকে দিতে হবে ৮০০ টাকা। বিদেশি পর্যটকদের জন্য গাইডদের চার্জও ১৫০০ থেকে বাড়িয়ে ২০০০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়াও সুন্দরবনে কোন সিনেমা বা অন্যকোন প্রজেক্টের শুটিং করতে গেলে আগের তুলনায় অনেক বেশি টাকা দিতে হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের তরফ থেকে। সম্প্রতি এ বিষয়ে নোটিশ জারি করেছে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প।

তবে বছরের মাঝ পথে এভাবে সুন্দরবন ভ্রমণে পর্যটক, লঞ্চ, ভুটভুটি ও গাইডের খরচ বাড়ায় যথেষ্ট ক্ষুব্ধ পর্যটন ব্যাবসায়িরা। পর্যটন ব্যবসায়ী গোবিন্দ দাস, নিউটন সরকাররা বলেন, “ এখন ইলিশ উৎসবের মরশুম চলছে, হটাৎ করে এক ধাক্কায় এতটা টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হল এতে পর্যটকদের সাথে আমাদের ঝামেলা বাড়বে। অনেকেই এই বাড়তি টাকা দিতে রাজি হবেন না।” এছাড়াও আগামী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বহু বুকিং হয়ে গিয়েছে। সেই বুকিং পুরানো মূল্য অনুযায়ী নেওয়া হয়েছে বলেই দাবি পর্যটন ব্যবসায়ীদের। পর্যটন ব্যবসায়ী শম্ভুনাথ মান্না, বলরাম মন্ডল বলেন, “ অন্তত তিনমাসের নোটিশ দিয়ে এই পর্যটন কর বা ভ্রমণ মূল্য বাড়ালে ভালো হত। সেক্ষেত্রে যারা বুকিং করছেন তাঁদেরকে বিষয়টি নিয়ে জানানো যেত। তাহলে আমাদের মত বহু পর্যটন ব্যবসায়ী এই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তেন না।”

সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর জোন্স জাস্টিন বলেন, “ প্রায় চার বছর পর সুন্দরবনের পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ মূল্য বাড়ানো হয়েছে। সুন্দরবনের পর্যটনস্থলগুলির রক্ষণাবেক্ষণ, যৌথ বন পরিচালন কমিটির মাধ্যমে জঙ্গল লাগয়া এলাকার উন্নয়ন সবই এই অর্থ দিয়ে হয়। পর্যটকদের আরও ভালো পরিকাঠামো উপহার দেওয়ার জন্যই এই মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে।”