দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ প্রাথমিকে কর্মরত শিক্ষকদের মধ্যে কাদের যোগ্যতামান ‘এ’ ক্যাটেগরির, তা জানতে খোদ স্কুলশিক্ষা কমিশনারের দ্বারস্থ হচ্ছেন জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের (ডিপিএসসি) সচিবরা। তাঁদের মধ্যে একাংশ আবার স্কুল সাব-ইনস্পেক্টরদের নির্দেশ দিয়েছেন, প্রয়োজনে ওই প্রাথমিক শিক্ষকদের সার্ভিস বুক রিকাস্ট করতে হবে।
এই রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকরা তাঁদের চাকরির সময়কালে একটাই সুবিধা পান। সেটা হল এই সময়ের মধ্যে তাঁদের পদন্নোতি হয়। পাশাপাশি বেতন দাঁড়ায় হাইস্কুলের শিক্ষকদের স্কেলের সমান। রাজ্য সরকারের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি মেনেই ২০০৬-এর ১ জানুয়ারি বা তারপর (২০১১) প্রাথমিক শিক্ষক পদে নিযুক্ত শিক্ষকদের বড় অংশই মাধ্যমিক পাশ ও এক বছরের শিক্ষকতার প্রশিক্ষণের প্রেক্ষিতে চাকরি পেয়েছিলেন। তাঁদের সেই সময়েই ‘এ’ ক্যাটেগরির শিক্ষক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। পরে শিক্ষকতার প্রশিক্ষণ হয় দু’বছরের।
তাই অনেক শিক্ষকই এক বছরের ব্রিজ কোর্স করে শিক্ষকতার প্রশিক্ষণ আপ-টু-ডেট করেন। এতদিন পর তাঁদের ‘এ’ ক্যাটেগরি হিসেবে গণ্য করা না হলে, সার্ভিস বুক রিকাস্ট করতে হবে। এতে প্রত্যেক প্রাথমিক শিক্ষককে ন্যূনতম তিন-সাড়ে তিন লক্ষ টাকা ফেরত দিতে হবে।
লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশ হতেই একাধিক ডিপিএসসি চেয়ারম্যান বিকাশ ভবনে চিঠি লিখে জানতে চাইছেন, এই সব প্রাথমিক শিক্ষকরা চাকরিতে যোগদানের সময়েই ‘এ’ ক্যাটেগরির মর্যাদা পেয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই আবার পরে (২০১৩-১৪-য়) এক বছরের ব্রিজ কোর্সও করেছিলেন। তবে ২০১৩-র ৪ মার্চের সরকারি নির্দেশিকাকে দেখিয়ে যে সব শিক্ষক-শিক্ষিকা পরে এক বছরের ব্রিজ কোর্স করেছেন, সে দিন থেকেই তাঁদের ‘এ’ ক্যাটেগরি হিসেবে গণ্য করা হবে।
এই পরিস্থিতিতে বিপুল সংখ্যক প্রাথমিক শিক্ষককে ‘এ’ ক্যাটেগরি হিসেবে গণ্য না করলে, তাঁদের বেতন কাঠামোয় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। স্কুলশিক্ষা কমিশনার অরূপ সেনগুপ্তর সঙ্গে সোমবার যোগাযোগ করা যায়নি। তবে কমিশনারেটের প্রবীণ আধিকারিকদের বক্তব্য, বিষয়টি পুরোপুরি স্কুলশিক্ষা দপ্তরের নীতিগত সিদ্ধান্ত। দপ্তরের পাশাপাশি বিভাগের আইন শাখার নির্দেশ মেনেই শিক্ষকদের ক্যাটেগরি বিভাজনের কাজ করা হচ্ছে।
যদিও একাধিক ডিপিএসসি-র চেয়ারম্যানের বক্তব্য, স্কুলশিক্ষা দপ্তরের এই সিদ্ধান্তে রাজ্য সরকার সমস্যায় পড়তে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকারা আদালতের দ্বারস্থ হলে, তা নিয়ে জটিলতা বাড়বে। এন্টালির ইস্ট পয়েন্ট স্কুলস ফর গার্লস, প্রাইমারির প্রধান শিক্ষিকা ছন্দা ঘোষ বলেন, ‘২০০৬-এর মার্চে প্রাথমিক শিক্ষকতার যোগ্যতামানের ভিত্তিতেই এ ক্যাটেগরি শিক্ষিকা হিসেবে চাকরিতে যোগ দিই। ২০১২-য় প্রধান শিক্ষিকা হই। ২০১৩-১৪-য় ডিএলএড প্রতিষ্ঠান থেকে এক বছরের ব্রিজ কোর্সও করেছিলাম। ডিপিএসসি এখন বলছে, ২০১৪-য় যেদিন ব্রিজ কোর্সের রেজাল্ট বেরিয়েছিল, সেদিন থেকে নাকি আমি এ ক্যাটেগরির টিচার! ওরা সার্ভিস বুক রিকাস্ট করবে।’
বিধানচন্দ্র জিএসএফপি স্কুলের টিচার ইনচার্জ পাপিয়া মণ্ডলের কথায়, ‘২০০৬-এ আমাদের নিয়োগের সময়ে এক বছরের ট্রেনিং নিতে হতো। ২০০৯ থেকে দু’বছরের পিটিটিআই বা ডিএলএড ট্রেনিং চালু হয়। আমরা সেটা মেনে এক বছরের প্রশিক্ষণও নিয়েছি। তারপরও বলছে, ২০০৬ থেকে নাকি আমরা বাড়তি বেতন তুলেছি। আর সে জন্য নাকি সাড়ে তিন-চার লাখ টাকা ফেরত দিতে হবে!’