দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃধূমপান যে স্বাস্থ্যের জন্য এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক আলাদা করে বলার প্রয়োজনও পড়েনা আজকাল। অথচ তার পরেও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বাড়ছে ধূমপানের প্রবণতা। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। কী সেই সমীক্ষা?
ভারতে যুবতী এবং কিশোরী মেয়েদের মধ্যে ধূমপানের হার দ্বিগুণ হয়েছে, ইন্ডিয়া টোব্যাকো কন্ট্রোল-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে যে বয়ঃসন্ধিকালের কিশোরীদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা বেড়েছে। বয়স্ক মহিলাদের মধ্যে অবশ্য সেই প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মধ্যে ধূমপানের হার ৬.২ শতাংশ বেড়েছে। এই বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক।
প্যাসিভ স্মোকিং-ও যে মারাত্মক, সেই নিয়ে নিয়মিত নানা খবর সামনে আসে। তারপরেও এমন উদাসীনতা কেন? এর পেছনে রয়েছে ভারতের বিনোদন জগতের একটি জনপ্রিয় প্রবণতা রয়েছে।
দেশের তাবড় তাবড় হু'জ হু যেমন শাহরুখ খান, অক্ষয় কুমার, অমিতাভ বচ্চন সহ একাধিক বিরুদ্ধে গুটখা বা তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন করার অভিযোগে ক্রিমিনাল কেস ফাইল করার আর্জি জানিয়ে মুম্বই আদালতে একটি পিটিশন ফাইল করা হয়েছিল। আদালতের তরফে সেই আবেদন পত্রপাঠ খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।
২০২২ সাল থেকেই ভারতীয় তারকাদের এই ধরণের বিজ্ঞাপনের মুখ হওয়া নিয়ে সরব হয়েছে একাধিক এনজিও, PIL ফাইল করাও হয়েছে, অথচ সে সব বিজ্ঞাপন রীতিমতো সম্প্রচারিত হয় টেলিভিশনে, খবরের কাগজে।
ধূমপান ব্যক্তিগত চয়েস কিনা, ধূমপানে কোনও লিঙ্গভিত্তিক প্রবণতা কী না, বা ধূমপানের সঙ্গে সামাজিক স্টেটাস, বোল্ডনেস ইত্যাদি শব্দকে জোড়া যায় কী না, তা তর্ক সাপেক্ষ। কিন্তু ধূমপান এবং তামাক সেবন যে পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক, সেটি পরীক্ষিত সত্য। সে কথাই মনে করিয়ে দিতে বিশ্বজুড়ে একটা দিন পালন। ৩১ মে, নো টোব্যাকো ডে। এ বছরের থিম 'Protecting Children from Tobacco Industry Interference'. তামাক শিল্পের প্রভাব সমাজের কচিকাঁচাদের ওপর পড়লে তা সমাজের পক্ষে অভিশাপ।
ধূমপানের সঙ্গে ওরাল ক্যানসার, লাং ক্যানসার, ফুসফুসের অন্যান্য রোগের সরাসরি যোগ নিয়ে দিস্তে দিস্তে গবেষণা রয়েছে, এ তো নতুন কথা নয়। তবেজার্নাল অব অ্যালঝাইমার্স ডিজিজে প্রকাশিত নতুন একটি সমীক্ষা জানাচ্ছে, মধ্যবয়স্ক ধূমপায়ীদের মধ্যে স্মৃতিশক্তি হারানো বা হ্যালুসিনেশনের সমস্যা হতে পারে। ৪৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ১ লক্ষ ৩৬ হাজার ১৮ জন মানুষের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, অন্তত ১১ শতাংশ মানুষ প্রবলভাবে আক্রান্ত হয়েছেন এই দুই সমস্যায়।
এ তো গেল, ধূমপান নিয়ে গুরু গম্ভীর আলোচনা। শেষে থাক ধূমপান নিয়ে মজার একটা খবর। অফিসের কাজের ফাঁকে মাঝেমধ্যেই ধূমপান করেন যারা, তাঁরা শরীরের ক্ষতি করছেন ঠিকই, তবে অধূমপায়ী সহকর্মীদের তুলনায় বছরের অন্তত ৬ দিন বেশি ছুটি পাচ্ছেন নিশ্চিতভাবেই। একটি মার্কিন সমীক্ষা এই কথাই জানাচ্ছে।
আমেরিকার সমীক্ষা সংস্থা ‘অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস’-এর রিপোর্ট বলছে, মার্কিন মুলুকের অন্তত ৫২ শতাংশ ধূমপায়ী কর্মী বাকিদের তুলনায় সপ্তাহখানেক বেশি ছুটি পান। ধূমপানের জন্য দৈনিক গড়ে ২০ মিনিট সময় লাগেই। বছরের হিসাবে এই হিসেব দাঁড়ায় ৪০ ঘণ্টায়। অর্থাৎ মোট ৬টি কাজের দিন! প্রায় এক সপ্তাহের নির্ভেজাল ছুটি! তবে শরীরের ক্ষতি করে ছুটি উপভোগ না করাই ভাল, তাই নয় কি?