দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ‘এত দিন আমি যেসব স্বপ্ন দেখেছিলাম, তিলে তিলে যেসব অর্জন করেছিলাম, সব মাটিতে মিশে গেল। বাসাটা ঘিরে কত স্বপ্ন ছিল। সন্তানদের সঙ্গে, স্ত্রীর সঙ্গে ছিল কত স্মৃতি। ছিল ভালোবাসা আর নিরাপত্তার অনুভূতি।’ কথাগুলো ফিলিস্তিনের বিধ্বস্ত–রক্তাক্ত গাজা উপত্যকার আল–জাহরা এলাকার বাসিন্দা আলীর। ইসরায়েলের বেপরোয়া হামলায় তাঁর বাসাটি গুঁড়িয়ে গেছে।
শুধু আলীর বাসা-ই নয়, অন্যান্য দিনের মতো গতকাল শুক্রবারও ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় আল–জাহরার অন্তত ২৫টি আবাসিক ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে। তাতে স্বজনহারা হয়েছেন অনেক ফিলিস্তিনি। ফিলিস্তিনের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, গাজায় দুই সপ্তাহ ধরে চলা ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় ৪ হাজার ১৩৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত ১৩ হাজারের বেশি মানুষ। নিহত মানুষের মধ্যে শিশু ১ হাজার ৫২৪, আর নারী ১ হাজারের বেশি। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ১১ সাংবাদিকও। এ ছাড়া পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের হামলায় গতকাল ৫ শিশুসহ ১৩ জন নিহত হয়েছেন।
অন্যদিকে ইসরায়েলের সূত্রে জানা গেছে, এই কয়েক দিনে হামাসের হামলা ও তাদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় তাদের নাগরিক নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি। আহত ৪ হাজার ৬২৯ জন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৬৩ জন সেনা ও পুলিশ সদস্য।
এ তো গেল হতাহতের হিসাব। জাতিসংঘের হিসাব বলছে, ইসরায়েলের হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার ভবন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজারের বেশি বাড়ি। সংখ্যাটি গাজার মোট বাড়ির তিন ভাগের এক ভাগ। এর জেরে উপত্যকাটিতে ১০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুহারা হয়েছেন।আল–জাহরার অবস্থান গাজার উত্তরে। গতকাল উপত্যকাটির দক্ষিণাঞ্চলেও ইসরায়েল ভয়াবহ বোমাবর্ষণ করেছে। সেখানকার খান ইউনিস এলাকায় ধ্বংসস্তূপে হতাহত মানুষদের খুঁজতে দেখা গেছে উদ্ধারকারীদের। তাঁদেরই একজন একটি বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে এক শিশুর মরদেহ বের করে আনেন। এ সময় পাশের একটি বাড়ির বাসিন্দা জৌমানা খরেইস বলেন, ‘আমরা ত্রাণ চাই না। আমরা চাই, ঘুমের মধ্যে শিশুদের হত্যা বন্ধ করা হোক। এসব দেখতে দেখতে আমরা ক্লান্ত।’
এদিকে গতকাল হামাসের হাতে আটক দুই মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। একে শুভেচ্ছার নিদর্শন বলে উল্লেখ করেছেন হামাস নেতা গাজী হামাদ। তবে মুক্তির বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করেনি হোয়াইট হাউস। বন্দীদের মধ্যে যাঁরা ইসরায়েলি নন, সম্প্রতি তাঁদের ‘অতিথি’ হিসেবে অভিহিত করেছিল হামাস। সেই সঙ্গে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছিল।