দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ ঠাণ্ডায় সব রকমের ব্যথা বাড়ে বলে অনেকেই শীতকালে সার্জারি করতে ভয় পান। কিন্তু হাঁটু প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে ব্যাথা মুক্তিরই ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে তেমন কোন অসুবিধা হয় না। আর রোবোটিক নি জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্টের ক্ষেত্রে কাটাকুটি অনেক অল্প হয় বলে রোগী দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারেন। এখন অভিজ্ঞ ও দক্ষ চিকিৎসকের কাছে নি রিপ্লেসমেন্ট এতটাই সহজ, নিশ্চিত ও নিরাপদ - ভরসা দিলেন পনের হাজারেরও বেশী হাঁটু প্রতিস্থাপনের রূপকার বেলভিউ ক্লিনিক, কলকাতার রিপ্লেসমেন্ট বিভাগের ডাইরেক্টর, অর্থোপেডিক ও রিপ্লেসমেন্ট সার্জন ডা. সন্তোষকুমার।
প্রশ্ন : হাঁটুর ব্যাথায় কখন জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট করা উচিৎ?
ডা. সন্তোষ কুমার : খেলতে গিয়ে লিগামেন্ট ছেঁড়া থেকে বাতের ব্যথা হাঁটুর ব্যথা তো নানা কারণে হতে পারে। এই সব ব্যথার চিকিৎসার ধরনও আলাদা রকমের। এইসবের মধ্যে হাড়ের ক্ষয়জনীত অসুখ অস্টিও আথ্রাইটিস হলে হাঁটুর অস্থি সন্ধির ভিতরে বিশেষ দুটি কার্টিলেজ ক্ষয়ে যায়। কোনভাবেই এই ক্ষয় পূরন হয় না বলে একটা সময়ে জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট ছাড়া আর কোন বিকল্প চিকিৎসা থাকে না। তবে প্রচণ্ড ব্যথায় কাতর হয়ে সেই চরম সময়ে স্বাভাবিক জীবন ব্যহত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করে আজকাল আগেই অনেকে জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট করিয়ে নিচ্ছেন।
প্রশ্ন : আজকাল তো নি জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট-এর অনেক আধুনিক বিকল্প চিকিৎসার কথা শোনা যায় সে গুলিতে কী সত্যই কোন কাজ হয় ?
ডা.কুমার : অসুখের প্রকৃতি ও বিস্তারের উপর নির্ভর করে অস্টিও আথ্রাইটিসকে স্টেজওয়ান থেকে ফোর এই চার ভাগে ভাগ করা যায়। এর মধ্যে প্রথম তিনটি পর্যায়ে বিভিন্ন চিকিৎসায় অনেক সময়ে সাময়িক আরাম পেলেও স্টেজ ফোরে ও হাঁটুর হাড় বেঁকে গেলে হাঁটু প্রতিস্থাপনই একমাত্র চিকিৎসা। অন্য ষ্টেজ গুলিতে চিকিৎসায় ব্যথা কমলেও ভিতরে ক্ষয় চলতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত হাঁটু পাল্টান ছাড়া উপায় থাকে না।
প্রশ্ন : রোবোটিক জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট কেন সব থেকে ভাল ?
ডা. সন্তোষ কুমার : রোবটের আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স মুহূর্তের মধ্যে মিলি মিটারের কায়েক সহস্রাংশ পর্যন্ত হিসাব করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে প্রস্থেসিসের ফিটিংস সাধারন কম্পিউটারাইজড সার্জারির থেকে বহু গুণ বেশী নিখুত হয়। আবার একইভাবে হাড় ও সফট টিস্যুও অত্যন্ত অল্প পরিমাণে সুক্ষ ও সঠিকভাবে কাটা হয় বলে রক্তপাত প্রায় হয় না বললেই চলে, ফলে পোস্ট অপারেটিভ পেনও অনেক কমে যায় আর রোগী দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন। অন্যদিকে চোখের থেকে অনেক বেশী পর্যবেক্ষণ করতে পারে বলে প্রস্থেসিসের অ্যালাইনমেন্ট সাধারণ সার্জারির থেকে একশ শতাংশ সঠিক হয় তাই প্রস্থেসিসের আয়ুও বাড়ে। তাই সব দিক থেকেই রোবটিক নি জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট এ বিষয়ে আধুনিকতম সার্জারি।
প্রশ্ন : জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট সার্জারির সাফল্যের হার কিরকম?
ডা. সন্তোষ কুমার : ১৯৬৮ সালে প্রথম হাঁটু প্রতিস্থাপনের পর জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট সাজারিতে ধাপে ধাপে উন্নতি হয়েছে, খরচ কমেছে, সফলতা বেড়েছে। ২০০৬তে আমি জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট শুরু করার পর এই ২২-এ আমার হাঁটু প্রতিস্থাপনের সংখ্যা পনের হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এই বিপুল অভিজ্ঞতা ও পারদর্শীতার সঙ্গে উন্নত চিকিৎসার মেলবন্ধন ঘটাতে আমরা সব সময় উন্নততম প্রযুক্তি ব্যবহার করি। ২০১২ থেকে আমরা কম্পিউটার টেকনোলজি চালিত অর্থোপাইলট সিস্টেম ও মিনিমালি ইনভেসিভ সার্জারি শুরু করার পর হাঁটু বদলের সাফল্য ছিল প্রায় একশ শতাংশ। আর এখন রোবটিক সার্জারি এসে যাওয়ায় একশ শতাংশ সাফল্যে কোন অসম্পূর্নতা নেই।
প্রশ্ন : শীতে জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্টের পরে কি অতিরিক্ত কোন ব্যবস্থা নিতে হয় ?
ডা. সন্তোষ কুমার : তেমন কিছু নয় তবে হাঁটু গরম কাপড় দিয়ে মুড়ে রাখলে ও স্নানের সময় গরম জলে ধুয়ে নিলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।
প্রশ্ন : জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্টের পরে সত্যিই কি আগের মতো সব কাজ করা যায়?
ডা. কুমার : হ্যাঁ। আপনার শরীর ঠিক থাকলে ও পেশী সবল থাকলে আপনি জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্টের পর সিঁড়িতে ওঠানামা, মর্নিংওয়াক, বাজার করা, বাসে যাতায়াত, গাড়ি চালান থেকে পাহাড় বা সমুদ্রে বেড়াতে যাওয়ার মতো সব কাজই খুব ভালভাবে আর সহজে করতে পারবেন। তবে পোস্ট অপারেটিভ নিয়ম কানুন আপনাকে ঠিকমতোই মেনে চলতে হবে। সার্জারিটা রোবোটিক হলে আপনার কাজকর্ম আরো অনায়াস ও সাবলিল হয়ে উঠবে। সত্যিই আপনার জীবনটা আবার আনন্দ মুখর হয়ে বদলে যাবে। তাই প্রয়োজনে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার সুযোগ নিন, সুস্থ থাকুন ,ভালো থাকুন।