Game

2 days ago

Chief Minister Dr. Himantaviswa Sharma: ২০২৪ ছিল প্ৰাপ্তির অসম, বিদায়ী বছরে গগৈ আমলের সব ঋণ সম্পূর্ণ পরিশোধ করেছি : মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব

Chief Minister Dr. Himantaviswa Sharma
Chief Minister Dr. Himantaviswa Sharma

 

গুয়াহাটি : বিদায়ী বছরে তরুণ গগৈ আমলের সব ঋণ সম্পূর্ণ পরিশোধ করেছে বৰ্তমান বিজেপি জোট সরকার। ২০২৮ সালের মধ্যে ১০ লক্ষ কোটি টাকার অর্থনীতিতে পরিণত হবে অসম। উচ্চাভিলাষী অর্থনৈতিক পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে রাজ্য, বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা।আজ ইংরেজি নববর্ষ ২০২৫ সালের প্রথম দিন কইনাধরা পাহাড়ে রাজ্য অতিথিশালায় তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এবং সম্পাদকদের সঙ্গে ‘নতুন দিনর বার্তালাপ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বিগতদিনে তাঁর সরকারের কার্যকলাপ এবং আগামীদিনের পদক্ষেপ সম্পর্কে বহু তথ্য পেশ করছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা। রাজ্যবাসীর জন্য আশার বার্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বৈদ্যুতিক বাস চালানোর ক্ষেত্রে দেশের মধ্যে ষষ্ঠ রাজ্য অসম। ২০২৬ সালের মধ্যে ডিজেল বাসগুলি বন্ধ করা হবে বলে আজ ঘোষণা করেছেন তিনি।

নতুন বছরের প্রথম দিন রাজ্যের লক্ষ লক্ষ সরকারি কর্মচারীদের সুসংবাদ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আজ 'স্বাগত সতীর্থ' শীর্ষক একটি পারস্পরিক স্থানান্তর পোৰ্টাল চালু করেছেন। এই পোৰ্টাল তৃতীয় এবং চতুৰ্থ শ্ৰেণির কৰ্মচারীদের জন্য উৎসৰ্গ করা হয়েছে। এর বলে কর্মচারীরা পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে বদলির সুবিধা পাবেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, বহাগ বিহু (পৌষ সংক্ৰান্তি)-র আগে এর হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। এই পোৰ্টাল রাজ্যের কৰ্মচারীদের স্থানান্তর (বদলি) প্ৰক্ৰিয়ায় সুবিধা এবং স্বচ্ছতা প্ৰদান করবে। কৰ্মচারীদের জন্য একে একটি বৃহৎ পদক্ষেপ বলে অভিহিত করে মুখ্যমন্ত্ৰী ড. শর্মা বলেন, এই পোৰ্টাল কৰ্মচারীদের পেশাদারী জীবন মসৃণ এবং সন্তুলিত করতে সহায় করবে। কেবল তা-ই নয়, রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিনামূল্যে বিমার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জনিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কোনও কর্মচারীর দুর্ঘটনা ছাড়াও স্বাভাবিক মৃত্যু হলে বিমার টাকা পাওয়া যাবে।

২০২৪ সালে রাজ্য সরকারের প্রাপ্তির বহু তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিগত বছরের ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মন্ত্রিসভার ১৪৫টি বৈঠকে ১,৯২২টি জনকল্যাণমূলক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ৫৪টি হয়েছে ই-ক্যাবিনেট বৈঠক। এর মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে ১,৮৭৬টি। শতাংশের হারে ৯৭.৬১।অসমের আর্থিক পরিবেশ স্থিতিশীল বলে মুখ্যমন্ত্ৰী বলেন, ২০২৮ সালের মধ্যে রাজ্য দশ মিলিয়ন অর্থনীতির রাজ্যে পরিণত হবে। অসমের জিডিপি দেশের মধ্যে ১৭-তম স্থানে রয়েছে।

ড. শর্মা বলেন, ‘জাগিরোডে টাটার সেমি-কন্ডাক্টর প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ২০২৪ সালে। এই প্রকল্পে ২৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। চড়াইদেও মৈদাম বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করছে। গত বছর নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার অসমিয়া এবং বাংলা ভাষাকে শাস্ত্রীয় ভাষার মর্যাদা দিয়েছে। এর ফলে অসমিয়া এবং বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে করে পুরনো বিবাদের নিষ্পত্তি করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এখন আমরা একে ইউনিকোড-এর আওতায় আনার চেষ্টা করছি।’

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের সরকার এ পর্যন্ত ১,২৪,৬৮০ জন যুবককে পরিচ্ছন্ন পদ্ধতিতে নিয়োগ দিয়েছে। কোনও বাধা ছাড়া নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অসন্তুষ্ট কেউ আদালতের দ্বারস্থ হননি। এতে প্রমাণিত, সরকারের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছ।’

তিনি বলেন, ‘অসমে ফৌজদারি মামলার সংখ্যা বহু কমেছে। কমেছে নারীর বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যাও। গত তিন বছরে অসমে কোনও বনধ বা আন্দোলনের সংস্কৃতি দেখা যায়নি। বিক্ষোভ-প্রতিবাদ এবং কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর সংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে। দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যাও ধারাবাহিকভাবে কমেছে।’‘নারীর বিরুদ্ধে অপরাধের হার ৮২.১৯ শতাংশ কমেছে। বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে মোট ৭,৩৬১টি মামলা রুজু হয়েছে। বাল্যবিবাহের দায়ে এ পর্যন্ত ৫,৯৭৮ জনকে গ্রেফতার করার পাশাপাশি ৫,৫৭৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। ২৯ ডিসেম্বর (২০২৪) পর্যন্ত বাল্যবিবাহের অভিযোগে ৫৫৩টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে এবং গ্রেফতার করা হয়েছে ৬৪২ জনকে।’

দুর্নীতি সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গত বছর দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে ৬০টি। দুৰ্নীতির দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছে ৭৪ জনকে। এর মধ্যে ৬৯ জন সরকারি কর্মচারী এবং চারজন মধ্যস্বত্বভোগী। অভিযানে নগদ ২.১৪ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। চার্জশিট দাখিলের হার ৯৮.০৮ শতাংশ।’উন্নয়ন সম্পর্কে আরও তথ্য দিয়ে ড. শর্মা বলেন, ‘গুয়াহাটি-উত্তর গুয়াহাটি সংযোগী সেতুটি এ বছরের জুন-জুলাই মাসে জনতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হবে। অন্যদিকে নারেঙ্গি-কুরুয়া সেতুর কাজ শুরু হবে ফেব্রুয়ারিতে। পলাশবাড়ি-শুয়ালকুচি সেতুর কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।’

গুয়াহাটিতে অনেক উন্নয়নমূলক নতুন প্রকল্পের কাজ চলছে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রকল্পগুলি সম্পন্ন হলে গুয়াহাটি একটি নতুন রূপ ধারণ করবে। আজ আরও ৫৬টি ইলেকট্রিক বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এ বছর (২০২৫ সাল) গুয়াহাটিবাসী আরও ১০০টি বৈদ্যুতিক বাস পাবেন। প্রধানমন্ত্রী দেবেন এই ১০০টি বাস। ২০২৬ সালের মধ্যে গুয়াহাটিতে ডিজেল বাসগুলি পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এক বছরের মধ্যে পূর্ব পশ্চিম করিডোরের কাজ শেষ হবে।’

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অন্য রাজ্যের মডেল অনুসরণ করি না। বিদ্যুৎ বিল কম আসবে। বিদ্যুতের চার্জ ৫০ পয়সা থেকে কমিয়ে ১.৫০ টাকা করা হবে। বিদ্যুতের আয় এভাবেই থাকলে ২০২৬ সালে আরও এক টাকা পর্যন্ত কমবে। বহাগ বিহু থেকে বিদ্যুতের হার কমানো হবে।’

আরও বলেন ‘ব্রহ্মপুত্র নদীর তলা দিয়ে গহপুর এবং নুমালিগড়ের মধ্যে ১২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে চার লেনের টানেল তৈরি করা হবে। এতে রাজ্যের পরিবহণ ব্যবস্থার অনেক উপকার হবে। এছাড়া, কাজিরাঙায় একটি এলিভেটেড করিডোরও তৈরি করা হবে।’

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কাজিরাঙায় পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। আজ হাতি-জিপ সাফারির সব বুকিং পূর্ণ। কাজিরাঙার পর্যটকরা বর্তমানে বেসরকারি রিজোৰ্ট অবস্থান করেন। এতে লাভ হচ্ছে সাধারণ মানুষ, বেকার যুবসমাজ। প্রধানমন্ত্রীর রাত কাটানোর পর কাজিরাঙায় পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। কাজিরাঙায় পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে ভুটানের রাজা ও ভারতের রাষ্ট্রপতির সফরের পরও। কাজিরাঙার পর এবার মানস জাতীয় উদ্যানেও রাত কাটানোর আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এক কথায় প্রধানমন্ত্রী এখন অসম পর্যটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডার।’

গুয়াহাটি থেকে শিলচর হাইওয়ে নির্মাণের কাজ শুরু হবে। এই সড়ক তৈরি হয়ে গেলে মাত্র পাঁচ ঘণ্টায় পাঁচগ্রামে পৌঁছা যাবে। বন্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, গত বন্যায় মাত্র পাঁচটি বাঁধ ভেঙেছে। আগামী দিনে ২৩৭টি বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলি নির্মাণ হয়ে গেলে জনদুর্ভোগ কমে যাবে, বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

এছাড়া গত বছর তিনি নিজে এবং কোন মন্ত্রী কোন জেলায় রাত্রি যাপন করে উন্নয়নমূলক কাজের পর্যালোচনা করেছেন, সে সব তথ্যও আজ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।‘অরুণোদয়’ প্রকল্প সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অসমের এই প্রকল্পে অনুপ্রাণিত হয়ে কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার তা গ্রহণ করেছে।’ দারিদ্র্য মোচনে গৃহীত পদক্ষেপে অসমে এখন দারিদ্র্য নেই, সব নিম্ন মধ্যবিত্তের পর্যায়ে এসে গেছেন। এছাড়া রাজ্য সরকারের প্রচলিত সব উন্নয়নমূলক এবং জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের খতিয়ান আজ তুলে ধরে এ সবের বলে জনসাধারণ কীভাবে উপকৃত হচ্ছেন তা-ও জানান তিনি।

বাংলাদেশের চলমান অশান্তি সম্পর্কে ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেন, ‘অস্থিরতার দরুন বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্প ধ্বংস হয়ে গেছে। এর ফলে দেশের তথাকথিত সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিক ভারতে প্রবেশ করছে। অসমে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ জন বাংলাদশি অনুপ্রবেশ করছে। অসম পুলিশ তাদের গ্ৰেফতার না করে ধরে ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে। গ্রেফতার করলে আদালত থেকে জামিন পেয়ে যাবেন, এজন্য এ সব ঝুটঝামেলায় না গিয়ে ফেরত পাঠানো হচ্ছে ধৃতদের। ত্রিপুরার সীমান্ত দিয়েও দৈনিক ২০-৩০ জন বাংলাদেশি ভারত ভূখণ্ডে প্রবেশ করছে। গত পাঁচ মাসে অসমে প্রায় ১০০০ বাংলাদেশি ধরা পড়ছে। ধরা পড়া ছাড়াও আরও কত যে প্রবেশ করছে তা জানা নেই। তবে ভারতীয় টেক্সটাইল উদ্যোক্তারা কম খরচে বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন’, খেদের সঙ্গে বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

অসম সরকার ব্যাপক ঋণ নিচ্ছে, বিরোধীদের এই অভিযোগ সম্পর্কে সাংবাদিকের জিজ্ঞাসার জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সব সরকার ঋণ নেয়, কেন্দ্রীয় সরকারও ঋণ নেয়। যে সব রাজ্যে অবিজেপি সরকার রয়েছে, তারাও আমাদের চেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে। সেক্ষেত্রে কেন বিরোধীরা কিছু বলে না। আপনারাও (সংবাদ মাধ্যম) তাঁদের পাল্টা প্রশ্ন করেন না। তবে মনে রাখতে হবে, আমরা (সরকার) যত বেশি ঋণ নেব, জিডিপি আমাদের তত বাড়বে। শতকরা হার মেনে নিতে হবে। এ বছর (২০২৪) আমরা তরুণ গগৈ সরকারের আমলে নেওয়া ঋণ পুরোপুরি পরিশোধ করেছি।’

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৪ সালে আমরা অসমকে ঋণমুক্ত করেছি। ভারত সরকার অসমকে ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু আমরা মাত্র ১৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছি। ঋণ নেওয়া হয় জিডিপির ওপর নির্ভর করে। অসমের জিডিপি বেড়েছে, তাই ঋণ নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।’

উল্লেখ্য, ‘নতুন দিনর বার্তালাপ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আগে মুখ্যমন্ত্রী গুয়াহাটিতে বহু প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। উদ্বোধন করেছেন পল্টনবাজারে নবনির্মিত ফুটব্রিজের। এর পর খানাপাড়ায় মিনি আইএসবিটি উদ্বোধন করে গুয়াহাটিবাসীর জন্য ৫৬টি বৈদ্যুতিক বাস উৎসর্গ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা।এছাড়া ৩৬২.০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নিৰ্মীয়মাণ প্ৰস্তাবিত অত্যাধুনিক অসম রাজ্য চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেনের শিলান্যাস করেছেন মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা।

আজকের কার্যক্রমে রাজ্য সরকারের সমস্ত মন্ত্রী, মেয়র মৃগেণ শরণিয়া, মুখ্যসচিব ড. রবি কোটা, প্রশাসনিক শীর্ষ আধিকারিকগণ, রাজ্যের পুলিশ-প্রধান জিপি সিং, পুলিশের শীর্ষ আধিকরিক, অন্যান্য সরকারি দফতরের সচিব এবং বিপুল সংখ্যক সিনিয়র সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।

You might also like!