দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ বসন্ত মানেই প্রেমের আভাস। আর বসন্ত মানেই গোটা ফেব্রুয়ারি। হাতে গোলাপ সঙ্গে উষ্ণ বার্তালাপ। রোজ ডে দিয়ে শুরু, এরপর প্রোপোজ ডে, চকোলেট ডে, টেডি ডে, প্রমিজ ডে, হাগ ডে, কিস ডে এবং টানা এক সপ্তাহের প্রেম পর্বের সর্বশেষ হল বহু প্রতীক্ষিত ভ্যালেন্টাইন'স ডে।
তবে এই ভ্যালেন্টাইনস ডে নিয়ে বেশিরভাগ মানুষের ধারণা এই দিনটি কেবলমাত্র প্রেমিক-প্রেমিকাম ও দম্পতিদের। তবে এই ভাবনা একেবারেই সত্য নয়। যে কেউ এই দিনে তাদের প্রিয়জনকে শুভেচ্ছা জানাতে পারেন। হতে পারে তারা পরিবারের সদস্য, বন্ধু, ভাই-বোন এবং অন্যান্য ব্যক্তি, যারা আপনার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
ভাবতে অবাক লাগে, প্রতিবছরই এই মাসে এক সপ্তাহ জুড়ে প্রেমের বসন্তে মেতে ওঠেন প্রায় সকলে। কিন্তু, কেউ কি জানেন কেন পালন করা হয় এই ভ্যালেন্টাইন'স ডে?
পঞ্চম শতাব্দীর শেষের দিকে পোপ গেলাসিয়াস ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ভ্যালেন্টাইন'স ডে হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। এ ভালবাসার দিনটির নামকরণ করা হয়েছে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামানুসারে; যিনি প্রেমের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগকে স্বীকার করে মানুষেরা তাকে একটা দিন উৎসর্গ করে।
তৃতীয় শতাব্দীর সময় রোমের বাসিন্দা, পুরোহিত, এবং চিকিৎসক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগের স্মরণে উদযাপিত হয়েছিল এই দিনটি। যিনি ছিলেন একজন ধর্ম প্রচারকও। পাশাপাশি তিনি রোমান সৈন্যদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য বিবাহের অনুষ্ঠানও করতেন।
পক্ষান্তরে, দ্বিতীয় ক্লডিয়াস, যিনি ছিলেন একজন রোমান সম্রাট। তিনি বিশ্বাস করতেন, অবিবাহিত সৈন্যরা বিবাহিতদের চেয়ে বেশি দক্ষ। তাই সম্রাট সৈন্যদের বিয়ে করা নিষিদ্ধ করেছিলেন। তিনি একটি আইনও তৈরি করেছিলেন সে বিষয়ে। আইনটিতে বলা হয়েছিলো, যারা সেনাবাহিনীতে চাকরি করে তারা বিয়ে করতে পারবেনা।
সেন্ট ভ্যালেন্টাইন এই আইন সম্পর্কে জানতে পেরে আইনটিকে সেনাদের প্রতি অন্যায় বলে আখ্যায়িত করেন। এবং তিনি সকল সৈন্যদের গোপনে বিয়ে দিতে থাকেন। বিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তিনি অন্যান্য লোকেদের মধ্যেও ভালবাসার অনুভুতি জাগাতে শুরু করেন।
কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত, দ্বিতীয় ক্লডিয়াস সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের এ সকল কাজ সম্পর্কে জানতে পারেন এবং ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদন্ড দেন।
তবে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে নিয়ে সব থেকে মজার একটি গল্প রয়েছে। বলা হয়ে থাকে ধর্ম প্রচারের মামলায় অভিযুক্ত করে তাকে সে সময় কারাগারে পাঠানো হয়। এমনকি কারাগারে থাকার সময় তার চিকিৎসায় একজন কারারক্ষীর অন্ধ মেয়ের দৃষ্টিশক্তি তিনি ফিরিয়ে দেন। দৃষ্টিশক্তি ফেরানোর মত এত বড় কাজ দেখে সেই পরিবার সহ আরও বেশ কয়েকটি পরিবার খ্রীস্টধর্ম গ্রহণ করেন। পাশাপাশি মেয়েটির সাথে ভ্যালেন্টাইনের একটি সুসম্পর্ক তৈরি হয়।
সেখানকার রাজার কানে সে খবর পৌঁছে যায়। আইনকে অমান্য করে ধর্ম প্রচারের নালিশ হয় তার বিরুদ্ধে। তার এ অপরাধের জন্য তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে একটি চিঠি লেখেন। চিঠির শেষে লেখা ছিল 'লাভ ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন'।
চিঠির এ শেষের অংশটি থেকেই মূলত মানুষ তার নামটিকে ভালবাসার প্রতীক হিসেবে পেয়েছে। অতঃপর পোপ গেলাসিয়াস প্রথম এই দিনটিকে ভ্যালেন্টাইন'স ডে হিসেবে ঘোষণা করেন।