দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ পুরানো কলকাতার বনেদি বাড়ির পুজো বলতে যে পুজো গুলির নাম সবার আগে উঠে আসে তা হল দাঁ বাড়ি, মিত্র বাড়ি আর স' বাজারের রাজবাড়ি।
শোভাবাজার রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোর শুরু হয় ১৭৫৭ সালে, রাজা নবকৃষ্ণ দেবের উদ্যোগে৷ উপলক্ষ, পলাশীর যুদ্ধে বিজয়ী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন। যদিও এই পরিবারের অনেকেই এই দাবি সমর্থন করেন না। তবে রাজবাড়ির জাঁকজমক নিয়ে সকলে একবাক্যে প্রশংসা করেন। শোনা যায়, লর্ড ক্লাইভ, লর্ড হেস্টিংসের মতো ব্রিটিশ শাসকরা যেমন এই দুর্গাপুজোর অতিথি হয়েছিলেন, তেমনই পুজো দেখতে যেতেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সহ আরও অনেকে৷
বলা হয়, কলকাতা শহরের প্রথম দুর্গাপুজো হল বড়িশার পুজো। আর শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো হল দ্বিতীয়। সাবেককালে দুর্গাপুজো শুধু বাড়ির অন্দরেই সীমাবদ্ধ ছিল। সেই পুজোয় বাইরের কেউ অংশ নিতেন না। কিন্তু শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজোয় সুতানুটির আপামোর মানুষ অংশগ্রহণ করেছিলেন।
রাজবাড়ির পুজো মানেই এলাহী ব্যাপার।এলাহী পুজোর আয়োজন আর এলাহী খানাপিনা।একসময় মাকে তেত্রিশ রকমের পদ নিবেদনের রীতি ছিল। অব্রাহ্মণের বাড়িতে অন্নভোগ হয় না। তাই রাজবাড়িতে অন্নভোগ না হলেও দেবীকে রাধাবল্লভী, সিঙ্গারা, খাস্তা কচুরি, জিলিপি, পদ্ম নিমকি এবং রকমারি ফল নিবেদন করা হতো। সপ্তমীর দিন দেবীকে ভোগ হিসেবে দেওয়া হয় নারকেল ও ক্ষীর দিয়ে তৈরি বিশেষ একধরনের মিষ্টি ‘আগা’। শুকনো চাল-ডালের নৈবেদ্যর উপর সাজিয়ে দেওয়া হয় গোটা পান ও সুপারি। থাকতো মাখন-মিছরি, মোতিচুর লাড্ডু, বিশালাকার জিভেগজা আর এক আঙুল সমান উঁচু জিলিপি।
এই শোভা বাজার রাজবাড়িরই এক বিখ্যাত পদ হল ‘পদ্মলুচি’। এর স্বাদ ও অনবদ্য। আমিষ-নিরামিষ দুইভাবেই পদ্মলুচি বানানো যায়। এই অথেন্টিক রেসিপি বানাতে জেনে নিন এর উপকরন ও প্রনালী।
ডো-এর জন্য প্রয়োজন পড়বে…
ময়দা- ১ কেজি
গাওয়া ঘি- ১/২ কাপ
নুন- ১/২ চামচ
সাদা তেল- ভাজার জন্য
ছানা- ২ কাপ
অথবা
মটন কিমা- ২ কাপ
কাজু কিশমিশ বাটা- ১ কাপ
ঘি- ২ টেবিল চামচ
আদাবাটা- ১ চা চামচ
শুকনো খোলায় ভাজা জিরে গুঁড়ো- ২ চা চামচ
নুন ও চিনি পরিমাণমতো
ময়দায় নুন আর ঘি দিয়ে ভালো করে ময়ান দিন। তারপর অল্প অল্প করে জল মিশিয়ে মেখে নিন। খুব নরম যেন না হয়। মাখা হয়ে গেলে ভিজে পাতলা কাপড় দিয়ে ময়দার ডো এক ঘণ্টা মতো ঢেকে রেখে দিন।এবার ছানার জল একেবারে ঝরিয়ে মিহি করে বেটে নিন। মটন কিমারও যেন জল একেবারে ঝরানো থাকে।পুর বানানোর জন্য কড়াইয়ে ঘি গরম করে তাতে আদা বাটা দিয়ে একটু নেড়েচেড়ে নিন। কাঁচা গন্ধ চলে গেলে তাতে কাজু-কিশমিশ বাটা দিয়ে আঁচ কমিয়ে ঢাকা দিয়ে দিন। ভালোভাবে ভাজা-ভাজা হয়ে এলে তাতে ছানা দিয়ে নাড়াচাড়া করুন।এতে স্বাদ অনুযায়ী নুন, চিনি দিয়ে সামান্য ভাজতে হবে।এবার এতে ভাজা জিরে গুঁড়ো মিশিয়ে কিছুক্ষণ ঢাকা দিয়ে রেখে ঠান্ডা হতে দিন।
আমিষ লুচি বানাতে গেলে মটন কিমাকে একই উপায়ে ভেজে পুর তৈরি করে নিন।পুর ভালো মতো ঠান্ডা করে নিতে ভুলবেন না।এবার আসল কাজ। প্রথমে লেচি কেটে লুচি বেলে নিন। প্রত্যেকটি লুচির সাইজ যেন একই রকম হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তেমন হলে বড় করে লুচি বেলে কানা কাটা গ্লাস বা বাটি দিয়ে সম মাপের লুচি কেটে নিন।এবার প্রত্যেকটি লুচির মাঝে অল্প করে পুর রাখুন। লুচির ধারগুলি অল্প জল দিয়ে ভিজিয়ে নিন। আরেকটি লুচি নিয়ে তার উপরে চাপা দিন। পুলিপিঠে বা মোমোর মতো আঙুল দিয়ে চেপে চেপে লুচির ধারগুলি আটকে নিন। মানে দুটি লুচির মাঝে পুর ভরে স্যান্ডুইচ।ছুরি দিয়ে ধারটা ফুলের পাপড়ির আকারে কেটে নিন।সবকটি লুচি তৈরি হয়ে গেলে ডুবো তেলে ভেজে নিন। তৈরী গরমাগরম পদ্মলুচি।