দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ ওড়িশার এক স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সুয়ার মহাসুয়ার নিযোগের সেবায়েতরা আচমকাই 'অবধ' ভোগপ্রসাদ তৈরি বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। এই নিযোগের সেবায়েতরাই ওড়িশার এই মন্দিরে পবিত্র রান্নাঘরের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁদের অভিযোগ, আনন্দ বাজারে ভগবান জগন্নাথের ভোগের প্রসাদ নিয়ে দুর্নীতি চলছে। আর তাই কার্যত অরন্ধনের পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই নিযোগের সেবায়েতরা।
'টাঁকা তোরানি', 'রাবড়ি', 'খিরি', 'পেঁড়া' এবং 'খুয়া' বেআইনিভাবে বিক্রি করা হচ্ছে আনন্দ বাজারে। ১২ শতাব্দির ঐতিহ্যশালী এই মন্দিরের সমস্ত ভোগপ্রসাদ বিক্রি করা হয় জগন্নাথধাম সংলগ্ন আনন্দ বাজারে। দীর্ঘদিনের এই বাজারে এ হেন বেআইনি কার্যকলাপের অভিযোগ ঘির সরগরম পুরী।
সুয়ার মহাসুয়ার নিযোগের সেবায়েতদের আরও অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ভোগপ্রসাদ নিয়ে এই বেআইনি কার্যকলাপের কথা তাঁরা শ্রী জগন্নাথ মন্দির টেম্পল অথরিটিকে জানিয়েছিলেন। অথচ কোনও লাভ হয়নি।
অভিযোগ উঠেছে জগন্নাথধামের পাশে অতি পরিচিত এই আনন্দ বাজারে যারা সেবায়েত নন তাঁরাও মহাপ্রসাদের টাঁকা তোরানি বিক্রি করছেন। অন্যান্য মিষ্টিও দেদার বিকোচ্ছে আনন্দ বাজারে। যা অনৈতিক বলে অভিযোগ সেবায়েতদের।
আগে ভগবান জগন্নাথ, বলরাম এবং দেবী সুভদ্রার সামনে টাঁকা তোরানি প্রসাদ হিসেবে দেওয়ার রীতি ছিল। যা তৈরি হত কেবলমাত্র দই, মহাপ্রসাদের চাল ধোয়া জল, লেবুর রস এবং আমা, আদা, লঙ্কা গাছের পাতা দিয়ে। স্বাদ অনুসারে নুন দেওয়া হত এই টাঁকা তোরানিতে।
অভিযোগ জানানো হচ্ছে, কলের জল, চিনা নুন এবং রান্নাঘরে পাওয়া যায় এমন যে কোনও ধরণের মশলা দিয়েই তৈরি হচ্ছে এই টাঁকা তোরানি। আনন্দ বাজারে গত ১০-১৫ দিন ধরে দেদার বিক্রি হচ্ছে সেই প্রসাদ। আনন্দ বাজারে বর্তমানে ৭০টি দোকানে পাওয়া যায় জগন্নাথদেবের মহাপ্রসাদ। ৫০টি দোকানে পাওয়া যায় খাজা।
প্রসঙ্গত, জগন্নাথ মন্দিরের রান্নাঘরে যে মহাপ্রসাদ তৈরি হয়, সেগুলিকেই কেবলমাত্র আনন্দ বাজারে বিক্রির অনুমতি দেওয়া উচিত। যে সেবায়েতরা সুয়ার মহাসুয়ার নিযোগের অংশ নন, তাঁরা যেন কোনওভাবেই রাবড়ি, খিরি, খুয়া এবং অন্য সামগ্রী বিক্রি না করতে পারেন। যেগুলি জগন্নাথধামের রান্নাঘরে রান্না করা হয়নি, সেগুলিই কোনওভাবেই বিক্রি করার অনুমতি দেওয়া উচিত নয়।
উল্লেখ্য, নিযোগের নিজস্ব ১১০০ জন রাঁধুনি রয়েছেন। ২ হাজার কর্মী রয়েছেন যারা কুটনো কাটা, কাঠ বয়ে নিয়ে আসা এবং জল আনার কাজ করেন রান্নাঘরে। প্রতিদিন প্রায় গড়ে ৫০ হাজার ভক্তের জন্য মহাপ্রসাদ রান্না হয় পুরীর মন্দিরের রান্নাঘরে। বিশেষ বিশেষ দিনে এক লাখের বেশি পুণ্যার্থীর প্রসাদ রান্না হয়। নিযোগের প্রধান একটি বৈঠকে জানান, কী ভাবে আনন্দ বাজারের এই বেআইনি প্রসাদ বিক্রি রোখা যায় তার জন্য শ্রী জগন্নাথ টেম্পল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।