দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: দু’দিন পরেই শুরু হচ্ছে ছট পুজো। চারদিন ধরে চলা এই উৎসবটি অবাঙালি হিন্দু সমাজের মধ্যে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। প্রথম দিন শুরু হয় স্নানের মাধ্যমে, যা ছট পুজোর সূচনা। পরের দিন আসে খরনা বা শুদ্ধিকরণের রীতি। সন্ধ্যায় প্রসাদ হিসেবে তৈরি করা হয় গুড়ের ক্ষীর, যেটি সারা দিনের উপবাসের শেষে ভক্তরা উপোস ভাঙতে পান। তার পরবর্তী দিনে অস্তগামী সূর্য দেবতাকে অর্ঘ্য দেওয়া হয়, সঙ্গে ঠেকুয়া, কলা, মরশুমি ফল এবং আখের মতো উপহারও প্রদান করা হয়।
এই পুজোর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এখানে কোনও রকম মূর্তি পুজো করা হয় না। বাড়ির মহিলাদের সঙ্গে সঙ্গে সন্তান ও পরিবারের মঙ্গল কামনায় উপবাস করেন বাড়ির পুরুষেরাও। কিন্তু কেন করা হয় ছট পুজো? আসলে কে এই ছঠি মাইয়া? জানেন সেই ইতিহাস?
বিহার এবং উত্তর প্রদেশে প্রধান উত্সব হল ছট। এই পুজোয় চার দিন ধরে নানা রীতি আচার পালন করা হয়। কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে পুজোর শুরু বলে একে ছট পুজে বলা হয়। অনেকের মতে ছয় থেকে ছট কথাটি এসেছে। আবার এই পুজোয় ষষ্ঠী দেবী বা ছট্টি মাইয়ার পুজো করা হয় বলেও এর নাম ছট পুজো বলে অনেকের ধারণা। ছট্টি মাইয়ার সঙ্গে সূর্য দেবতার আরাধনাও করা হয় ছট পুজোয়।
ছট পুজোয় উপবাস যারা রাখেন, তাঁরা টানা ৩৬ ঘণ্টা ধরে নির্জলা উপবাস পালন করেন। প্রাচীন কাল থেকেই আমাদের দেশে মূলত বিহার ও উত্তর প্রদেশে ছট পুজোর প্রচলন রয়েছে। কী ভাবে ছট পুজো শুরু হল, প্রথম ছট পুজো কে করেছিলেন, তা নিয়ে অনেকের মনেই কৌতুহল রয়েছে। দেখে নিন প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে কী ভাবে ছট পুজো শুরু হয়।
শাস্ত্রজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের মতে ছট পুজোই পৃথিবীর একমাত্র ধর্মীয় উত্সব, যা বৈদিক যুগ থেকে চলে আসছে। বিহারের বৈদিক যুগের সংস্কৃতির একটা ঝলক এই পুজোয় রীতি আচারের মধ্যে পাওয়া যায়। সূর্যের ঊষা ও অস্তকালের আরাধনার কথা ঋগ্বেদে উল্লেখিত আছে।
প্রথম ছট পুজো করেন সীতা
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন যে বাল্মীকি রামায়ণ অনুসারে সীতা দেবী প্রথম ছট পুজো করেছিলেন। তত্কালীন অঙ্গ প্রদেশের মুঙ্গেরে সীতা ছয় দিন ছট পালন করেছিলেন বলে জানা যায়। ১৪ বছর বনবাসে কাটিয়ে ও রাবণকে হত্যা করে সীতা উদ্ধার করার পর রাম ও লক্ষ্মণ সীতাকে নিয়ে অযোধ্যা ফিরে আসেন। কিন্তু রাবণ বধের পাপ থেকে মুক্তি পেতে মুনি ঋষিরা রামকে রাজসূয় যজ্ঞ করার পরামর্শ দেন। এই যজ্ঞের আয়োজন করতে আমন্ত্রণ করা হয় মুদগল ঋষিকে। কিন্তু মুদগল ঋষি রাজসূয় যজ্ঞ করার পরিবর্তে রাম ও সীতাকে তাঁর আশ্রমে নিয়ে যান। তাঁর নির্দেশে রাম ও সীতা সেখানে পুজো করেন।
মুদগল ঋষি গঙ্গাজল ছিটিয়ে সীতাতে শুদ্ধ করেন এবং তাঁকে সূর্য দেবতা ও মা ষষ্ঠীর পুজো করার পরামর্শ দেন। কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথি থেকে শুরু করে ছয় দিন ধরে ওই আশ্রমে থেকেই ছট পালন করেন সীতা। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে সীতা যেখানে ছট পুজো করেছিলেন, সেখানে আজও তাঁর পায়ের ছাপ রয়েছে। বহু মানুষ প্রতি বছর মুঙ্গেরের এই স্থানে এসে ছট পালন করেন।