Festival and celebrations

17 hours ago

Durga Puja 2024:অমরারগড়ের সাড়ে-তিন'শো বছরের মা শিবাক্ষা দূর্গা ও কালি রূপে পুজিতা হন

Durga Puja 2024
Durga Puja 2024

 

দুরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্কঃ-  না আছে সেদিনের জমিদার। না আছে জমিদারি। রয়ে গিয়েছে তাদের প্রতিষ্ঠিত দেবদেবীর মন্দির রয়ে গেছে প্রচলিতি রীতি। আউশগ্রাম-২ নং ব্লকের অমরারগড়ে প্রায় সাড়ে তিন'শ বছরে মা শিবাক্ষা দূর্গা কালি রূপে পুজিতা হন। মানকর রেল ষ্টেশন থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার গুসকরা রোডের ওপর অমরারগড় গ্রাম। গ্রামের আরাধ্য দেবী শিবাক্ষা। কথিত আছে প্রায় বছর পুর্বে ক্ষত্রিয় রাজা মহেন্দ্র রায় ছিলেন। তিনি বীর, মহৎ, ধার্মিক ও দানশীল ছিলেন। তাঁর গড় ছিল এই গ্রাম। শূরগড় পতি রাজা বীরসিংহের কন্যা অমরাবতীকে স্বয়ম্ভরসভায় বিয়ে করেন তিনি। রানী অমরাবতী তেজস্বীনি, ধর্মপরায়না, স্নেহশীলা ছিলেন। রাজা মহেন্দ্রর গড়ের সামনে কমলপুর, উত্তরে প্রতাপপুর আজও সেই গ্রাম বিদ্যমান। পাশে পঞ্চমমহল অধুনা পা়চমৌলি, দক্ষিণে কন্দর্পপুরী। সেখানে রাজা ছিলেন কন্দর্প রায়। বর্তমানে কোন্দাঁইপুর, পূর্বে দীর্ঘনগর বর্তমানে যা দিকনগর নামে পরিচিত। এবং পশ্চিমে মানিক-আবর, বর্তমানে মানকর গ্রাম। গ্রামের মধ্যবর্তী শিবাক্ষা মন্দির। এছাড়াও স্থাপত্যশিল্পের বিষ্ণুমন্দির আজও বিদ্যমান। তবে অনাদরে ভগ্নপ্রায় অবস্থায় রয়েছে। গ্রামে আরও একটি দূর্গামন্দির রয়েছে। খড়ের চালার আদলে ওই মন্দির আজও ইতিহাস বহন করে। পশ্চিমবঙ্গ সাংস্কৃতি নামক গ্রান্থে অমরাগড়ের ইতিহাস বর্নিত রয়েছে। পরবর্তীকালে রানী অমরাবতীর নামানুসারে গ্রামের নাম অমরারগড়।আজ থেকে প্রায়,সাড়ে তিন'শ বছর আগে রাজা মহেন্দ্র রায় আমলে শিবাক্ষা মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নস্করচন্দ্র রায়। পরবর্তীকালে দেবী শিবাক্ষা গ্রামের তিনপাড়ার রায়দের মধ্যে ভাগ রয়েছে। উত্তর পাড়া, দক্ষিন ও মধ্য পাড়া। তৎকালি জমিদার রাজা আশপাশের কুলডিহা, বাবুইশোল, পাঁচমৌলি, রামহরিপুর প্রভৃতি এলাকায় নিজের বৈভব লোক সমক্ষে জাহির করার জন্য এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কথিত আছে রাজা মহেন্দ্রর রানী কাটোয়ায় গঙ্গা স্নান করতে গিয়েছিলেন। সেখানে মা শিবাক্ষার মূর্তি দেখে আকৃষ্ট হন। আর সেই মূর্তি তুলে আনতে রাজ কর্মচারীদের আদেশ দেন। দেবীর কষ্টিপাথরের মূর্তি এতটাই ভারি ছিল, সেটা রাজ কর্মচারীদের তুলে আনতে সামর্থ ছিল না। একদিকে রানীর আজ্ঞা অন্যদিকে নিজেদের ব্যার্থতা। তাই বাধ্য হয়ে মূর্তির কিছুটা নীচ থেকে ভেঙে নিয়ে আসেন। এখানে দেবী শৃগাল ও সিংহের ওপর অধিষ্ঠাত্রি। রানি অমরাবতির নামানুসারে গ্রামের নাম হয় অমরারগড়। দূর্গাপজোয় দূর্গা রূপে এবং কালিপুজোয় কালি রূপে পুজিতা হন দেবী শিবাক্ষা। তবে তার পিছনে এক ইতিহাস রয়েছে। অতিতে গ্রামের চাটুজ্জে পরিবারের এক বিধবা দেবী দর্শনের জন্য পুকুরে স্নান করে ভেজা কাপড়ে মন্দিরে দিনরাত ধর্না দিয়ে পড়েছিলেন। তিনদিনের মাথায় দেবী তাকে দর্শন দেন। এবং বিধবা ওই মহিলা দেবীকে ঘরে নিয়ে যাওয়ার বর চান। শিবাক্ষা মা তার কথায় রাজি হন, আর সেই থেকেই কালি পুজোর রাতে মা শিবাক্ষা আজও গ্রামের চাটুজ্জে পরিবারে কালি প্রতিমার ডান পাশে থেকে পুজো নেন। আর যমদ্বীতিয়ার দিন ফিরে যান। কথিত আছে, একবারন এক ঘটনা ঘটেছিল। মায়ের মন্দিরের চাবি থাকত রাজা কন্দর্প রায়ের কাছে। রাজা কন্দর্প একাবার কালিপুজোর দিন শিবাক্ষা মূর্তি চাটুজ্জেদের দিতে অস্বীকার করেছিলেন। চাটুজ্জেরা ওই সময় নিরুপায় হয়ে ঘট পুজো করেন। কালিপুজোর মধ্যরাত্রে রাজার মুখে আচমকা রক্ত উঠতে শুরু হয়। পরক্ষনেই রাজা তার নিজের ভুল বুঝতে পারেন, চাটুজ্জেদের শিবাক্ষা মূর্তি না দেওয়ার পরিনাম। বিন্দুমাত্র বিলম্ব না করে রাজা তার বড় ছেলেকে দেবী মূর্তি দেওয়ার অনুমতি দেন। রায় পরিবারের বর্তমান বংশধরেরা জানান," শিবাক্ষা মা রায় পরিবারের হলেও, চাটুজ্জেদের খুবই প্রিয়। কোন এক সময় সাধক কমলাকান্তের গান বাজনার আসর বসত রায় পরিবারে। তিনি মায়ের ভক্তিগীতি গাইতেন। তবে এখন আর সেসব আসর না বসলেও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। পুজোয় সপ্তমীর দিন নবপত্রিকা স্নান, মহাষ্টমীর দিন প্রচলিত সন্ধিপুজো। নবমির দিন নরনারায়ন সেবা হয়। দেবী শিবাক্ষার মন্দিরে শায়নকক্ষ রয়েছে। নিত্য সেবার জন্য পুরোহিত রয়েছেন। ইতিহাস বিশ্লেষক সৌরভ কেশ জানান," অমরারগড় গ্রামে বেশ কিছু প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন রয়েছে। সেগুলো সংস্কার সংরক্ষণ করা দরকার।"


You might also like!