দূরন্ত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক: চলতি মাসের শেষেই শুরু হচ্ছে বাঙালির সর্ববৃহৎ উৎসব দুর্গাপুজো। এই উৎসব উপলক্ষে শহরতলি ও আশপাশের জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ কলকাতায় আসেন পুজো দেখতে, যাতায়াতের প্রধান ভরসা হয়ে ওঠে লোকাল ট্রেন। দুর্গাপুজোর দিনগুলোতে লক্ষ লক্ষ যাত্রী ট্রেনে চেপে কলকাতায় আসেন, যার ফলে শিয়ালদহ স্টেশনে যাত্রীচাপ চরমে পৌঁছায়। এই অতিরিক্ত ভিড় সামলাতে আগেভাগেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে শিয়ালদহ বিভাগ। এই উপলক্ষে এদিন ডিআরএম-সহ শিয়ালদহের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা একটি দীর্ঘ বৈঠক করেন।
উক্ত বৈঠকে সিদ্ধান্ত হিসেবে উঠে আসে, পুজোর দিনগুলিতে অর্থাৎ ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত কোনও গ্যালপিন লোকাল ট্রেন থাকবে না। শিয়ালদহের সব শাখায় সব স্টেশনে সব লোকাল ট্রেন থামবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ট্রেন চলাচলের সময়সীমাও বাড়ানো হবে বলে প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে। শিয়ালদহ স্টেশনে মোট ২১টি টিকিট কাউন্টার আছে। পুজোর দিনগুলিতে সব টিকিট কাউন্টারই খোলা থাকবে। এছাড়াও শিয়ালদহ স্টেশনে অতিরিক্ত ১০টি মোবাইল ইউটিএস ব্যবস্থা করা হবে। ১৭টি এটিভিএম কার্যকর থাকবে। সারাদিন পরিষেবা সচল রাখা ও সব দিক খতিয়ে দেখার জন্য একজন অতিরিক্ত সার্ভিস ইঞ্জিনিয়র সর্বক্ষণ মোতায়েন থাকবে বলে খবর। ভিড় এড়াতে বিশেষ কাউন্টার পরিচালনার জন্য অতিরিক্ত বুকিং ক্লার্কদের অস্থায়ীভাবে মোতায়েন করা হবেও জানানো হয়েছে।
ভিড় এড়াতে পুজোর দিনগুলিতে শিয়ালদহ রেল স্টেশনের বাইরে গাড়ি পার্কিং নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। ওই দিনগুলিতে বিকাল ৫টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত স্টেশন চত্বরে কোনও ট্রলি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না বলেও খবর। শিয়ালদহ স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকের অংশ রেলের কাজের জন্য করোনা পরবর্তী সময় থেকে বন্ধ রয়েছে। পুজো উপলক্ষ্যে ওই অংশ সাধারণ মানুষদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এবারও সেই অংশ খোলা থাকবে বলে খবর। ওই অংশে চারটি টিকিট বুকিং কাউন্টার এবং ৪টি এটিভিএম থাকছে। প্রতিমা দর্শণের জন্য শিয়ালদহ স্টেশনে নামা লোকজন ওই পথ ধরতে পারবেন। মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রীদের জন্য শিয়ালদহ স্টেশনে প্ল্যাটফর্ম নির্ধারিত হয়েছে। পুজোর দিনগুলিতে ৯ ও ১১ থেকে ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে এইসব ট্রেন এসে থামবে ও ছাড়বে। জরুরি ভিত্তিতে অন্যান্য স্টেশনগুলির দিকেও নজরদারি থাকবে। শিয়ালদহ – কল্যাণী, শিয়ালদহ-সোনারপুরের মধ্যে রাতে বিশেষ ট্রেন চালানোর ভাবনাচিন্তাও চলছে। যাত্রীদের চাপ কমাতে প্রয়োজনে আরও অধিক রেক চালানো হতে পারে বলেও খবর।
বারাসত, খড়দহ, বালিগঞ্জ, বারাকপুর, বনগাঁ, সোনারপুর, বারুইপুর, রানাঘাট এবং বহরমপুরের ব্যস্ত লেভেল ক্রসিং গেটগুলিতে দুর্গাপুজোর সময় বিশেষ আরপিএফ বাহিনী মোতায়েন করা হবে। পাশাপাশি, ঝুঁকিপূর্ণ গেটগুলিতে স্বেচ্ছাসেবকদেরও মোতায়েন রাখা হবে, যাতে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও চলাচল নির্বিঘ্ন থাকে। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গেও সমন্বয় রেখে কাজ করবে রেল কর্তৃপক্ষ। শিয়ালদহ, দমদম জংশন, কলকাতা প্রভৃতি ব্যস্ত স্টেশনগুলিতে যাত্রীদের সাহায্যের জন্য রেলের পক্ষ থেকে ‘হেল্প ডেস্ক’ চালু করা হবে। এই সহায়তা কেন্দ্রে একটি নির্দিষ্ট হেল্পলাইন নম্বর এবং পুলিশ স্টেশন, হাসপাতাল, ফায়ার ব্রিগেড-সহ গুরুত্বপূর্ণ ফোন নম্বরের তালিকা থাকবে। শিয়ালদহ, দমদম, নৈহাটি, বারাসত-সহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে চিকিৎসা সহায়তা বুথও তৈরি করা হবে, যেখানে ডাক্তার ও প্যারামেডিক্যাল কর্মীরা উপস্থিত থাকবেন। স্টেশনে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া, পুজোর দিনগুলোতে প্রতিটি স্টেশনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানীয় জলের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে বলে রেল সূত্রে জানানো হয়েছে।